যুগ্ম-সচিবের বাড়িতে সরকারি অফিস, টিনশেডের ভাড়াই ২৩,০০০ কে এম রুবেল আরটিএনএন ফরিদপুর: ক্ষমতার অপব্যবহার কাকে বলে দেখিয়ে চলেছেন এক যুগ্ম-সচিব। সরকারি অফিস নিয়ে গেছেন নিজের গ্রামের বাড়িতে। এখানেই শেষ নয়, ভাঙা টিনের ঘরে সে অফিস বসিয়ে সরকারি কোষাগার থেকে প্রতিমাসে গুণে নিচ্ছেন ২৩ হাজার টাকা ভাড়া। ঘটনাটি ফরিদপুরের ডিগ্রিরচর ইউনিয়নের খিদির বিশ্বাস গ্রামে। এখানেই নিজ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত সরকা
রি অফিস বসিয়েছেন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব হোসেন মোল্যা। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ফরিদপুর শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে ডিগ্রিরচর ইউনিয়নের খিদির বিশ্বাসের ডাঙ্গী গ্রামের হোসেন মোল্যার বাড়িতে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র এবং মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের ডে-কেয়ার সেন্টারের ফরিদপুর কার্যালয়। যদিও অফিসের সাইনবোর্ডে ঠিকানা লেখা রয়েছে চর টেপাখোলা। জানা গেছে, ফরিদপুরের মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা খন্দকার দৌলত আনা আক্তার যুগ্ম-সচিব হোসেন মোল্যার স্ত্রী। স্বামীর ক্ষমতা ব্যবহার করে তিনিও তার অধীনে পরিচালিত ডে-কেয়ার সেন্টারটি বসিয়েছেন স্বামীর ভাঙা টিনের ঘরে। সেখান থেকে তিনিও ভাড়াবাবদ মাসে ১০ হাজারের বেশি টাকা নিচ্ছেন। একই স্থানে বাড়িতে অপর একটি টিনের ঘরে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র অফিস। বারান্দাসহ ওই ঘরটির ভাড়া ১৩ হাজারেরও কিছু বেশি। এই দুই অফিসে মোট ২৩ হাজারের বেশি টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে সরকারের কোষাগার থেকে। খিদির বিশ্বাসের ডাঙ্গী গ্রামের কমপক্ষে ১০ জন বাসিন্দা জানিয়েছেন, ওই দুটি টিনের ঘরের ভাড়া এলাকা হিসেবে সর্বোচ্চ ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। সরকারি টাকা বলেই এভাবে হরিলুট করা সম্ভব হচ্ছে বলে মনে করেন তারা। এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেটের বাড়ি হিসেবে পরিচিত যুগ্ম-সচিব হোসেন মোল্যার বাড়ি। ফলে ভুলেও কেউ ওই বাড়িতে কি হচ্ছে আর কারা আছে তার খবর রাখে না। ২৩ হাজার টাকা ওই দুটি টিনের ঘরের ভাড়া শুনে এক বাসিন্দা বলেন, ‘ক্ষমতা আছে তাই সরকারের কাছ থেকে তিন গুণের বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে সাধারণ মানুষের জন্য অফিস দুটি করা হলেও মূলত লাভবান হচ্ছেন ওই দম্পতি। সাধারণ মানুষ এই অফিস থেকে সেবা পাচ্ছেন না।’ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব হোসেন মোল্যা ও তার স্ত্রী ফরিদপুরের মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা খন্দকার দৌলত আনা আক্তারের অধীনস্থ এই অফিস দুটি ফরিদপুর শহরে থাকার কথা। কিন্তু নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চাপ দিয়ে ডিগ্রিরচরের পদ্মানদীর পাড়ে নিজ বাড়িতে করা হয়েছে। এ বিষয়ে ফরিদপুরের মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা খন্দকার দৌলত আনা আক্তার বলেন, ‘এলাকার মানুষের স্বার্থেই নিজের বাড়িতে অফিস নিয়েছি।’ অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভাড়াতো নির্ধারণ করেছে গণপূর্ত বিভাগ। এ বিষয়ে আমার কোনো হাত নেই।’ তবে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গাজী শওকত আলী বলেন, ‘সাধারণত সরকারি অফিস পাকা ভবনেই হয়ে থাকে। আর সরকারি সহজ বিধি-বিধান রয়েছে, যা দেখে আমরা ভাড়া নির্ধারণ করে থাকি।’ তিনি বলেন, ‘তবে এই অফিসের ভাড়া নির্ধারণ করতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি ভাড়ার তালিকা এনে তার জমি ও ঘর মেপে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।’ নির্বাহী প্রকৌশলী ভাড়া নির্ধারণে আইনি ব্যাখ্যা দিলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভাড়া নির্ধারণে জড়িত এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্যতিক্রম পন্থায় এই অফিসের ভাড়া নির্ধারণ করতে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে। প্রায় এক বছর ভাড়া নির্ধারণের কাগজপত্র অফিসে পড়ে ছিল।’ তিনি বলেন, ‘সামজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওই সচিবের ফোন ও চাপে পড়ে ফাইল ছাড়তে বাধ্য হয়েছি।’ মন্তব্য pay per click
No comments:
Post a Comment