Sunday, June 14, 2015

জোড়া খুনে এমপিপুত্র রনিকে রক্ষার চেষ্টা পুলিশের!:আরটিএনএন

জোড়া খুনে এমপিপুত্র রনিকে রক্ষার চেষ্টা পুলিশের! নিজস্ব প্রতিবেদক আরটিএনএন ঢাকা:  রাজধানীতে আলোচিত জোড়া খুনের আসামি সরকারদলীয় এমপির পুত্র বখতিয়ার আলম রনিকে পুলিশ রক্ষার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রনির গুলিতেই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানালেও আদালতে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে তা লিখেননি। এ ঘটনাকে এমপিপুত্রের প্রতি পুলিশের পক্ষপাত বলে মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্টর
া। গত ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে নিউ ইস্কাটনে সড়কে গুলিবর্ষণে দুজন নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংরক্ষিত আসনের এমপি পিনু খানের ছেলে রনির চার দিনের রিমান্ড শেষে শনিবার তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। আদালত সূত্র জানায়, এই হত্যাকাণ্ড এবং গুলি সম্পর্কে রনির কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন বলে গোয়েন্দা পুলিশ রিমান্ড ফেরত প্রতিবেদনে দাবি করেছেন। তবে রনি এই হত্যা করেছেন বা তার গুলিতে দুইজন নিহত হয়েছেন এমনটি তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। এছাড়া তদন্ত কর্মকর্তা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আসামির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি নেওয়ার জন্যও কোনো আবেদন করেননি। এর আগে তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক দীপক কুমার বলেছিলেন, রনি নিজের লাইসেন্স করা বন্দুক দিয়ে গুলি ছোড়েন বলে স্বীকার করেছেন। দীপক জানান, গুলিতে কেউ মারা গিয়েছিল কি না তা তার (রনি) জানা ছিল না। তাছাড়া তাকে যে পুলিশ শনাক্ত করতে পারবে সেটিও তার ধারণায় ছিল না। নেশাগ্রস্ত থাকায় সে উত্তেজিত ছিল। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। তাই সামান্য যানজটে আটকা পড়ে গুলি চালিয়েছিল। এ মামলায় গত ৩১ মে রনি ও তার গাড়িচালক ইমরান ফকিরকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে তিনি জানান। এসআই দীপক বলেন, গ্রেপ্তারের পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রনি গুলিবর্ষণের কথা স্বীকার করেন। এর পরদিন ১ জুন তার গাড়িচালক ইমরান ঘটনা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। রনি সে সময় স্বীকারোক্তি না দেওয়ায় অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করে তাকে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রনি ‘অসুস্থ’ থাকায় চিকিৎসার জন্য তার রিমান্ড কার্যকরে দেরি হয়। রিমান্ড শেষে রনির জবানবন্দি নেওয়ার জন্য আবেদন না করা প্রসঙ্গে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘সে তো ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেবে না। তার বিরুদ্ধে সমস্ত ধরনের সাক্ষ্য প্রমাণ পেয়েছি। স্বীকারোক্তিতে কিবা যায় আসে।’ তবে এখন দীপকের ভাষ্য, ‘আসামির বিরুদ্ধে কনক্লুসিভ (সিদ্ধান্তমূলক) কোনো এভিডেন্স থাকলে তার স্বীকারোক্তি ম্যান্ডেটোরি না। আজকে স্বীকার করে পরে আদালতে যদি দাবি করে পুলিশ তাকে মারধর করে স্বীকারোক্তি আদায় করেছে তখন তো তা বাতিল হয়ে যাবে।’ রিমান্ড ফেরত প্রতিবেদনে রনির গুলিবর্ষণের কথা স্বীকারের বিষয়টি উল্লেখ না করার কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘যদি বস্তুগত তথ্য-প্রমাণ থাকে তাহলে রিমান্ডফেরত প্রতিবেদনে তা উল্লেখ না করলেও চলে।’ আইনজীবীরা বলছেন, রিমান্ডে আসামি গুলিবর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন এবং তার গুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়ার কথা তদন্ত কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলে পরে আদালতে প্রতিবেদনে তা উল্লেখ না করাটা রহস্যজনক। দুই জায়গায় দুই ধরনের বক্তব্যের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম। তিনি জানান, পুলিশ সাংবাদিকদের কাছে যাই বলুক না কেন আদালতে তা বিবেচ্য নয়, পুলিশি প্রতিবেদনে কী আছে তার ওপর ভিত্তি করে বিচার হয়। তবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শনিবার বিবিসিকে বলেন, ‘ঘটনাটি কে ঘটিয়েছে এবং কীভাবে ঘটিয়েছে, তা নিয়ে আমরা এখনো স্পষ্ট ধারণা পাইনি। তিনি (বখতিয়ার) স্বীকার করেননি, তার ড্রাইভার স্বীকারোক্তি দিয়েছে, আমি যতটুকু শুনেছি।’ ঘটনার পর পুলিশ আসলেই তদন্ত করেছে কি না কিংবা কাউকে ধরতে চেয়েছিল কি না অথবা ঘটনাটা ধামাচাপা পড়ে যাক, সে রকম চেয়েছিল কি না—এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ব্যাপারটা তা নয়। পুলিশ আইনি পথেই এগোচ্ছিল। পরে আরো কিছু বিষয়ে তাদের সন্দেহ হলে বিষয়টি গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে সমর্পণ করা হয়। কাউকে রক্ষা করার জন্য, ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বা আড়াল করার জন্য বিলম্বিত করা হয়নি। এমপির পুত্র বা আওয়ামী লীগ, যুবলীগের কেউ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে—এমন অভিযোগও নাকচ করে দেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, গত ১৩ এপ্রিল রাত পৌনে ২টার দিকে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে একটি কালো প্রাডো গাড়ি থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়লে তাতে অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী ও রিকশাচালক আবদুল হাকিম নিহত হন। এ ঘটনায় নিহত হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম অজ্ঞাতদের আসামি করে ১৫ এপ্রিল রাতে রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।  মামলার এজাহারে বলা হয়, একটি সাদা মাইক্রোবাস থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়লে তাতে তার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পরে তদন্তে প্রাডো গাড়ি থেকে রনির গুলিবর্ষণের বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে বলে তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন। মন্তব্য      

No comments:

Post a Comment