Thursday, May 21, 2015

কী করছে বিএনপি :নতুন বার্তা

ঢাকা: কী করছে বিএনপি- এ প্রশ্ন এখন দলটির তৃণমূল নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের। আন্দোলনের কর্যত ব্যর্থতার পর দল কোন দিকে এগুচ্ছে, সেটি অস্পষ্ট। আন্দোলনের ব্যর্থতার পেছনের কারণগুলো কমবেশি সবার জানা। তবে প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে সাংগঠনিক দুর্বলতা, বিরোধী মিডিয়া এবং দলের নেতাদের অবিশ্বস্ততা। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল কারাগারে। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির মতো বিশাল দলের পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব
নেই, এটাই দলের সাংগঠনিক দুর্বলতার বড় উদাহরণ। ছাত্রদলের কমিটির খবর নেই। কেন্দ্রীয় কমিটি হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা কমিটির গড়ার কোনো লক্ষণও নেই। চল্লিশোর্ধ্ব বিবাহিত ব্যক্তিরা এখনো ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের পদ ধরে রেখেছেন। এর সমাধান কবে হবে, তা কেউ জানে না। শুধু সরকার নয়, প্রতিপক্ষ মিডিয়াকেও মোকাবেলা করতে হচ্ছে বিএনপিকে। স্যোসাল মিডিয়াতে বিএনপির সমর্থকরা যেভাবে সক্রিয়, তার একশ’ ভাগের একভাগ যদি মূল ধারার মিডিয়া কার্যকর হতো, তাতে সরকার যেমন বেকায়দায় পড়ত, তেমনি সুবিধা পেত বিএনপি। বর্তমানে মিডিয়াতে বিএনপিপন্থী সাংবাদিকদের সংখ্যা ২০ ভাগের বেশি নয়। আর মিডিয়ার সংখ্যা ১০ ভাগেরও কম। বলা হয়, বিএনপি সাংবাদিকবান্ধব হলেও মিডিয়া নিয়ে ভাবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সাংবাদিকবান্ধব না হলেও মিডিয়া গড়ায় পারঙ্গম। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্ভাগ্য হলো তার কোনো বিশ্বস্ত লোক নেই। কাদের ওপর নির্ভর করে তিনি দল চালাবেন তা স্থির করা কঠিন। দলের নেতাদের একটি বড় অংশ নিজেকে রক্ষা এবং আখের গোছাতে ব্যস্ত। দল নয়, ব্যক্তিস্বার্থই এসব নেতাদের কাছে মূল বিষয়। তার নজির সর্বশেষ মিলেছে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। বিএনপির সামনের কর্মসূচি বলতে দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। এর আগে উল্লেখ করার মতো কোনো কর্মসূচি নেই। সামনেই রোজা। কর্মসূচি থাকার সম্ভাবনাও কম। সিটি নির্বাচনের পরে ধারণা করা হয়েছিল দল গোছাবে বিএনপি। কিন্তু তার কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যায়নি। সমস্যাও রয়েছে। নেতাদের অনেকেই হয় জেলে, নতুবা পলাতক। এটি শীর্ষ থেকে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে। কে বা কারা দল গোছাবেন তেমন নেতাও এখন নেই। বিএনপির আরেকটি সমস্যা নতুন করে জন্ম হয়েছে। সেটি হলো নেতাকর্মীদের হতাশা। তারা ধরেই নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকার থাকছে। মেয়াদ পূর্ণ তো করবেই। সামনেও আবার ক্ষমতায় আসতে পারে। হতাশ ও স্বপ্নহীন নেতাকর্মীদের দল চালানো কঠিন। আসলে দল টিকিয়ে রাখাই চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিএনপি কিছু করছে বলে এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে না। এ বিষয়টি বিএনপির জন্য ভবিষ্যতে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। জাতীয় নির্বাচনের এখনো প্রায় সাড়ে তিন বছর বাকি। কিন্তু এখনই বাতাসে ভাসছে নানা গুজব। সরকার সামনে কীভাবে নির্বাচন করবে তার নানা ফর্মুলা বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে। কেউ বলছে গুজব। কেউ বলছে সরকারের নীলনকশা। বিএনপি ভাঙবে। নতুন বিএনপি হবে। আর সেই নতুন বিএনপি নির্বাচনে যাবে। বিষয়টি খুব সরলিকরণ বলে কেউ কেউ উড়িয়ে দিতে পারেন। কিন্তু এসবের কিছু একটা হবে না তা বলা মুশকিল। কারণ সরকার বিএনপি ভাঙার জন্য তৎপর যে হবেই, সেটি মনে করলে খুব ভুল করা হবে না। হয়তো বিষয়টি কেউ কেউ সময়ের ওপর ছেড়ে দিতে চাইবেন। তবে রাজনীতিতে কোনো কিছুতেই খুব বেশি সময় নেয় না। হতাশ কর্মীদের ভাগিয়ে নেয়া সহজ। নেতাদেরও। এই সুযোগটি সরকারিদল কাজে লাগাবে না, এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। ইতিমধ্যেই শোনা যাচ্ছে সিটি করপোরেশনে বিরোধীদলের নির্বাচিত কাউন্সিলররা সরকারি দলে যোগদানে দেন দরবার করছেন। তারা হয়তো বহিষ্কৃত মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের বিষয়টি মাথায় রেখেছেন। সমালোচনার জন্য মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের বহিষ্কারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু ঘটনা যা ঘটার তা ঘটেই গেছে। সরকার হয়তো এটি আইনের ফাঁদে ফেলে করেছে। কিন্তু সেই ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বিরোধীদলের যে আন্দোলনের প্রয়োজন ছিল, সেটি তারা করতে পারেনি। আন্দোলনেও সমস্যা রয়েছে। হরতাল-অবরোধ ভোঁতা হয়ে গেছে। কর্মীরা মাঠে না নামলে হরতাল-অবরোধ যে আর হবে না, সেটি এখন স্পষ্ট। কেন্দ্রীয় নেতারা দুয়েকটি সেমিনারে গতানুগতিক বক্তব্য রাখছেন। বক্তব্য দিয়ে রাজনৈতিক বিজয় যে আসে না, তা প্রমাণ হয়ে গেছে। বিএনপিতে এখন ‘কাজের লোকের’ প্রয়োজন। সেই লোক কোথায়?  আদৌ আছে কি? এসব প্রশ্নের জবাব সম্ভবত দলের নেতাদের কাছেও নেই। কারণ, তারা নিজেরাই নিষ্ক্রিয়। বিএনপির সবচেয়ে বড় সমস্যা- তারা তাদের সংকটের কথা জানে। কিন্তু সমাধানে উদ্যোগ নেয় না। নতুন বার্তা/কেএমআর/জিহ  

No comments:

Post a Comment