ব্লগার হত্যা, যৌন নিপীড়ন ব্যবস্থা নিতে কমিটির তাগিদ, গাফিলতি পাচ্ছে না পুলিশ নিজস্ব প্রতিবেদক আরটিএনএন ঢাকা: ব্লগার অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড ও পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যৌন হেনস্তার ঘটনায় নিজেদের কোনো গাফিলতি খুঁজে পায়নি পুলিশ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিকে এ তথ্য দিয়েছে পুলিশ। রবিবার জাতীয় সংসদে ভবনে দশম জাতীয় সংসদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির অষ্
টম বৈঠকে এই তথ্য উঠে আসে। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি টিপু মুনশি। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গণমাধ্যমে সতর্কতার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। বৈঠক শেষে টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের কোনো গাফিলতি ছিল না। আর সিলেটে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস হত্যার বিষয়েও দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।’ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পুলিশ কমিশনার ওই কমিটিকে জানান, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অভিজিৎ রায় খুন হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট এলাকায় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের দায়দায়িত্ব নিরূপণের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়। পুলিশ জানায়, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত্র আটটা ৫০ মিনিটে অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি প্রথম টিএসসি এলাকার পান দোকানদার সেলিম, শাহবাগ থানার ওয়ারলেস অপারেটর সুজন এবং সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) খলিলকে ফোন দিয়ে জানান। খবর পাওয়ার পরই অপারেটর সুজন, উপপরিদর্শক (এসআই) ওয়াহিদুজ্জামান, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) দেলোয়ারকে ঘটনাস্থলে যেতে বলেন। শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক সোহেল রানা এবং সহকারী উপপরিদর্শক খলিল ‘সিভিল পোশাকে’ ঘটনাস্থলে রওনা দেন। এসআই ওয়াহিদুজ্জামান আণবিক শক্তি কমিশনের কাছে অবস্থান করছিলেন। সংবাদ পেয়ে মোটরসাইকেলে কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে যান। পুলিশ দাবি করে ঘটনার দু-তিন মিনিটের মধ্যেই নিয়োজিত পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে হাজির হন। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের সময় এবং বর্ষবরণের দিন নারীদের ওপর যৌন হেনস্তার ঘটনায় কর্তব্যরত পুলিশের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। দুটি ঘটনাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় ঘটে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা চলাকালীন সন্ধ্যায় অভিজিৎকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। দুটি ঘটনার সময়ই ঘটনাস্থলে পুলিশকে দেখা যায়। কিন্তু এরপরও পুলিশ এসব ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। টিপু মুনশি বলেন, ‘রাজধানীর কুড়িল এলাকায় আদিবাসী নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া এই ঘটনায় পুলিশ একজনকে আটক করেছে।’ এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হেনস্তার ঘটনায় পুলিশের মহাপরিদর্শক শহীদুল হক বলেছিলেন, পহেলা বৈশাখের ওই ঘটনা আসলে কয়েকটা ছেলের দুষ্টামি। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মহাপরিদর্শকের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গণমাধ্যমে কথা বলার সময় যাতে সতর্কভাবে কথা বলেন, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পহেলা বৈশাখে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে এর সঙ্গে জড়িত দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান ও পুলিশ বাহিনীকে কর্তব্য পালনে আরো তৎপর হওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া ১০ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যার হুমকি দেওয়ার প্রসঙ্গে টিপু মুনশি বলেন, ‘আমরা পুলিশকে এই ১০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও ব্লগারদের নিরাপত্তা ও সতর্ক থাকার সুপারিশ করেছি। কমিটি পুলিশকে বলেছে, ঘটনার পরে সতর্ক হয়ে কী হবে, ঘটনার আগেই সতর্ক হতে হবে। বৈঠকে রংপুর ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ গঠনের সরকারি নীতিগত সিদ্ধান্তের সর্বশেষ কার্যক্রমের অগ্রগতি এবং পুলিশ বাহিনীর যানবাহন সমস্যা সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া বৈঠকে কমিটি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে ৫০ হাজার পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা, পুলিশ বাহিনীর যানবাহন সমস্যা সমাধানের জন্য মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রতা অবসানের পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণ ও অনুদানের মাধ্যমে যানবাহন ক্রয় করা এবং ২৪ নভেম্বর ২০১৫ এর মধ্যে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কার্যক্রমে গতিশীলতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে। কমিটির সদস্য স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শামসুল হক টুকু, মো. ফরিদুল হক খান, আবুল কালাম আজাদ, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ফখরুল ইমাম এবং কামরুন নাহার চৌধুরী বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবসহ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। মন্তব্য
No comments:
Post a Comment