Sunday, May 10, 2015

২৫ হাজার বাংলাদেশী পাচারে জাতিসঙ্ঘের উদ্বেগ:টাইমনিউজ

২৫ হাজার বাংলাদেশী পাচারে জাতিসঙ্ঘের উদ্বেগ স্টাফ রিপোর্টার টাইম নিউজ বিডি, ১০ মে, ২০১৫ ০৯:০১:১০ বঙ্গোপসাগর ব্যবহার করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশ থেকে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে মানবপাচার। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশ থেকে ২৫ হাজার লোককে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় পাচার করা হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর প্রকাশিত নিয়মিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার
ের এ ঘটনায় জাতিসঙ্ঘ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।   নিউ ইয়র্ক থেকে এনআরবি নিউজ জানায়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে পাচারকারীদের নৌকায় করে পাড়ি দিয়েছে আনুমানিক ২৫ হাজার রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী। এদের পৌঁছে দেয়ার কথা মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড। ২০১৪ সালে একই সময়ের তুলনায় এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর থেকে প্রকাশিত নিয়মিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল ‘ইরেগুলার মেরিটাইম মুভমেন্টস’ জানুয়ারি-মার্চ ২০১৫ প্রকাশ করে সংস্থাটি। এতে বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অনিয়মিত সমুদ্রপথ যাতায়াতের প্রধান রুটটি অব্যাহতভাবে শুরু হচ্ছে বঙ্গোপসাগর থেকে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে মালয়েশিয়া পৌঁছানোর আশায় ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রপথে যাত্রা করছেন হাজারো মানুষ। এ বছরের প্রথম তিন মাসে বঙ্গোপসাগর থেকে অনিয়মিত সমুদ্রপথে যাত্রা করেছে আনুমানিক ২৫ হাজার মানুষ। আগের দুই বছরের তুলনায় যা প্রায় দ্বিগুণ। অবৈধপথে যাত্রা করে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া পৌঁছতে সক্ষম হওয়া ব্যক্তিদের সাাৎকার নিয়ে ইউএনএইচসিআর জানতে পেরেছে যে, ঝুঁকিপূর্ণ এসব যাত্রায় কমপে ৩০০ ব্যক্তি মারা গেছেন। ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে মারা গেছেন মোট ৬২০ জন। ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর হয়ে এদের অনেকের মৃত্যু হয়েছে। অনেকে মারা গেছেন নৌকার ক্রুদের হাতে মারধরের শিকার হয়ে। পুরো নৌকা ডুবে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সাৎকারে প্রাপ্ত এসব তথ্য এবং হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা যাচাই করার কোনো উপায় নেই বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া অনেকে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের কথা বলেছেন। উঠে এসেছে গুম করে পাচার এবং নারীদের অজ্ঞাতসারে ভীন দেশে তাদের বিয়ে ঠিক করার মতো ভয়াবহ নানা চর্চার কথা। ইউএনএইচসিআরের প্রকাশিত ওই রিপোর্ট নিয়ে ৮ মে শুক্রবার নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরের প্রেস ব্রিফিংয়ে মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এসব তথ্য উপস্থাপনকালে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। স্টিফেন উল্লেখ করেন, এ সপ্তাহে থাইল্যান্ডের ইউএনএইচসিআর কার্যালয় কর্তৃপ এবং গণমাধ্যম প্রতিবেদন থেকে মালয়েশিয়া সীমান্তবর্তী থাইল্যান্ডের সংখলা প্রদেশে পাচারকারীদের ক্যাম্পে গণকবর খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছে। এতে ৩০ জনের মৃতদেহ পাওয়া যায়। বলা হয়, এরা এসেছিল বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে। অসুস্থতা বা নির্যাতনে তারা মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। থাই পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত করছে। একইসঙ্গে সংস্থাটি আশা প্রকাশ করেছে যে, দোষীদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা হবে। সংস্থাটি আরো উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, বঙ্গোপসাগর থেকে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত সমুদ্রপথের পাচার নেটওয়ার্ক পাচারকারীদের জন্য ক্রমেই লোভনীয় হয়ে উঠছে। একইসঙ্গে সেগুলো পাচারের শিকার হওয়া মানুষদের জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। বিপজ্জনক হওয়া সত্ত্বেও এসব রুট ব্যবহার করা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব যাত্রায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের বক্তব্যে জানা গেছে, পাচারকারীরা নৌকায় কিভাবে যাত্রীদের বাছাই করে। নৌকায় আরোহণের প্রাথমিক মূল্য প্রধানত কম থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিনামূল্যেও নৌকায় উঠতে দেয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে শর্ত জুড়ে দেয়া হয়, মালয়েশিয়ায় তাদের ভবিষ্যৎ উপার্জন থেকে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। নৌকাযাত্রীদের ভুয়া কাজের প্রতিশ্রুতি দেয়ার চর্চা রয়েছে। কখনোবা সামান্য পরিমাণ নগদ অর্থের প্রস্তাবও দেয়া হয়। নৌকায় উঠে কেউ সিদ্ধান্ত পাল্টে ফিরে যেতে চাইলে তাদের থাকতে বাধ্য করা হয়। রাস্তাঘাট থেকে শিশুদের অপহরণ করে নৌকায় উঠানো হয়। যাত্রা শেষে প্রত্যেকের কাছ থেকে যে অর্থ কেড়ে নেয়া হবে সে বিষয়ে যাত্রীদের কেউই অবগত থাকে না। চোরাচালান পরিণত হয় মানবপাচারে। পাচারকারীদের ক্যাম্পের পরিস্থিতিও বিভীষিকাময়। আটক ব্যক্তিদের পরিজন মুক্তিপণ পরিশোধ করার আগ পর্যন্ত তাদের নির্যাতন করা হয়। অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইউএনএইচসিআরকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অর্ধেকের বেশি ব্যক্তি জানিয়েছেন, তাদের ক্যাম্পে কেউ না কেউ আটক অবস্থায় মারা গেছেন। এসব ক্যাম্পে মারধর খুবই সাধারণ বিষয়। ধর্ষণও হয়ে থাকে। যারা পালানোর চেষ্টা করেন, তাদের ঝুঁকি থাকে গুলি খাওয়ার। নৌপথে ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণের ক্রমবর্ধমান চর্চা বিবেচনায় ইউএনএইচসিআর এ অঞ্চলের দেশগুলোকে মানব পাচার প্রতিহত করতে আরো নিবিড়ভাবে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে। নিষিদ্ধ এ বাণিজ্যের ওপর অভিযান চালানোর পদপে গ্রহণ প্রয়োজন। আর এ েেত্র আন্তর্জাতিক আইন চোরাচালানকারী আর মানবপাচারকারীদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য নির্দেশ করেছে। একই সঙ্গে চোরাচালান আর পাচারের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যেও পার্থক্য উল্লিখিত রয়েছে আন্তর্জাতিক আইনে। সংস্থাটি বলেছে, অভিবাসী আর শরণার্থীদের যেন পাচারকারীদের অভিমুখী না হতে হয় সেটা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টার পাশাপাশি আইন প্রয়োগের পদপেও গ্রহণ করতে হবে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় অংশ নিতে মানুষ কেন প্রবৃত্ত হচ্ছে তার মূল কারণ খুঁজে বের করে তার সমাধান করতে হবে। একই সঙ্গে তাদের আশ্রয় ও সুরা দেয়ার জন্য নিরাপদ বিকল্প প্রদান করতে হবে। এএইচ

No comments:

Post a Comment