Monday, April 6, 2015

'প্রাণ ভিক্ষার সিদ্ধান্ত দেখার করার পর':Time News

'প্রাণ ভিক্ষার সিদ্ধান্ত দেখার করার পর' স্টাফ রিপাের্টার টাইম নিউজ বিডি, ০৬ এপ্রিল, ২০১৫ ১০:৩৫:১৪ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের আইনজীবি শিশির মনির বলেছেন, কামারুজ্জামানের সাথে দেখার করার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করবেন কি না। সোমবার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়া
তের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন আদালত খারিজ করে রায় প্রকাশের পর তিনি এ কথা বলেন। এর আগে রোববার সকাল থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে কামারুজ্জামানের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানি করেন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ শুনানি গ্রহণ করেন। বেঞ্চের অন্য তিন সদস্য ছিলেন, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। আসামিপক্ষের সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে এর আগে দু’দফায় পিছিয়েছে শুনানির দিন। গত বুধবার (১ এপ্রিল) কামারুজ্জামানের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন অসুস্থ উল্লেখ করে চার সপ্তাহের সময়ের আবেদন জানানো হয়। ওইদিন চারদিন পিছিয়ে রোববার দিন পুনর্নির্ধারণ করেন আপিল বিভাগ। গত ৯ মার্চও শুনানির জন্য কার্যতালিকায় এলে প্রথমবার চার সপ্তাহের সময়ের আবেদন জানান আসামিপক্ষ। সেবারও কারণ হিসেবে খন্দকার মাহবুব হোসেনের ব্যক্তিগত অসুবিধার কথা বলা হয়েছিল। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি পিছিয়ে ১ এপ্রিল পুনর্নির্ধারণ করেন সর্বোচ্চ আদালত। উল্লেখ্য, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই জামায়াত নেতার সর্বোচ্চ দণ্ডাদেশ বহাল রেখে গত বছরের (২০১৪)৩রা নভেম্বর আপীল বিভাগ। আপীল বিভাগের এই রায়ের পরই কামারুজ্জামানকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে চলতি বছরের (২০১৫) ১৮ই ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ করা হয়। পরের দিনই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জমানের মৃত্যু পরোয়ানা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। আপিল বিভাগের এই রায়কে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য গত ৫ই মার্চ আপিল বিভাগে রিভিউ পিটিশান দাখিল করেন কামারুজ্জামান। এর আগে ২০১৩ সালের ৯ মে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাতটি অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ (১, ২, ৩, ৪ ও ৭) সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এই পাঁচটিতে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ও খালাস চেয়ে আপিল করেছিলেন কামারুজ্জামান। প্রথম অভিযোগ (বদিউজ্জামান হত্যা): প্রথম অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ২৯ জুন সকালে কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে আলবদর সদস্যরা শেরপুরের ঝিনাইগাতী থানার রামনগর গ্রামের আহম্মেদ মেম্বারের বাড়ি থেকে মো. ফজলুল হকের ছেলে বদিউজ্জামানকে অপহরণ করে আহম্মেদনগর সেনাক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে সারা রাত তাঁকে নির্যাতন করে পরদিন গুলি করে হত্যা করা হয়। প্রথম অভিযোগে অপরাধের গভীরতা ও আনুপাতিকভাবে আসামির সংশ্লিষ্টতা বিবেচনা করে কামারুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। তবে এই অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ। দ্বিতীয় অভিযোগ (সৈয়দ আবদুল হান্নানের প্রতি অমানবিক আচরণ): এই অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের মে মাসের মাঝামাঝি এক বিকেলে কামারুজ্জামান ও তাঁর সহযোগীরা শেরপুর কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ আবদুল হান্নানকে প্রায় নগ্ন করে শহরের রাস্তায় হাঁটাতে হাঁটাতে চাবুকপেটা করে। দ্বিতীয় অভিযোগে কামারুজ্জামানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। এই দণ্ড সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। তৃতীয় অভিযোগ (সোহাগপুরে নির্বিচারে হত্যা): তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ২৫ জুলাই সকালে আলবদর ও রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে সোহাগপুর গ্রামে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় ও নারীদের ধর্ষণ করে। ওই হত্যাযজ্ঞের পর থেকে গ্রামটি ‘বিধবাপল্লী’ নামে পরিচিত হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এর ২০(২) ধারা অনুসারে তৃতীয় অভিযোগে কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এই অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। চতুর্থ অভিযোগ (মোস্তফা হত্যা): এতে বলা হয়, একাত্তরের ২৩ আগস্ট কামারুজ্জামানের নির্দেশে আলবদর সদস্যরা শেরপুর শহরের কলেজ মোড় এলাকা থেকে গোলাম মোস্তফাকে ধরে সুরেন্দ্র মোহন সাহার বাড়িতে স্থাপিত আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। গোলাম মোস্তফার চাচা তোফায়েল আহমেদ সেখানে কামারুজ্জামানের কাছে গিয়ে তাঁকে (গোলাম মোস্তফা) ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু রাতে কামারুজ্জামান ও আলবদর সদস্যরা গোলাম মোস্তফা ও আবুল কাসেম নামের একজনকে সেরিহ সেতুর কাছে নিয়ে গুলি করে। গোলাম মোস্তফা নিহত হন এবং আঙুলে গুলিবিদ্ধ কাসেম নদীতে লাফিয়ে পড়ে প্রাণে বেঁচে যান। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এর ২০(২) ধারায় চতুর্থ অভিযোগেও কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। তবে আপিল বিভাগ এই অভিযোগে তাঁকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। সপ্তম অভিযোগ (দারাসহ ছয়জনকে হত্যা): সবশেষ এই অভিযোগে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধকালে ২৭ রমজান বেলা একটার দিকে কামারুজ্জামান ১৫-২০ জন আলবদর সদস্যকে নিয়ে ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানার কাঁচিঝুলি গ্রামের গোলাপজান রোডে ট্যাপা মিয়ার বাড়িতে হামলা চালান। ট্যাপা ও তাঁর বড় ছেলে জহুরুল ইসলাম দারাকে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে অবস্থিত আলবদর ক্যাম্পে নেওয়া হয়। পরদিন সকালে আলবদররা তাঁদের আরও পাঁচজনের সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে নিয়ে সারিতে দাঁড় করায়। প্রথমে ট্যাপাকে বেয়নট দিয়ে খোঁচাতে গেলে তিনি নদীতে লাফিয়ে পড়েন। আলবদররা গুলি করলে তাঁর পায়ে লাগে, তবে তিনি পালাতে সক্ষম হন। অন্য ছয়জনকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। সপ্তম অভিযোগে অপরাধের গভীরতা ও আনুপাতিকভাবে আসামির সংশ্লিষ্টতা বিবেচনা করে কামারুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে তাঁর এই দণ্ড বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। দুই অভিযোগে খালাস কামারুজ্জামান: পঞ্চম ও ষষ্ঠ অভিযোগ থেকে কামারুজ্জামানকে খালাস দেয় ট্রাইব্যুনাল। পঞ্চম অভিযোগ (আহম্মেদনগর ক্যাম্পে হত্যা): ঝিনাইগাতীর আহম্মেদনগর সেনাক্যাম্পে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগটি প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ক্যাম্পে বন্দি ১১ জনের মধ্যে তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়, বাকি আটজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের ১৪তম সাক্ষীর সাক্ষ্য অনুসারে, ঘটনার দিন কামারুজ্জামানের নির্দেশে চারজন বন্দিকে হত্যা করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের ৭ ও ১৪ নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্যে এ অভিযোগ প্রমাণিত হয় না। ষষ্ঠ অভিযোগ (টুনু হত্যা): টুনু হত্যার জন্য কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটিও রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পারেনি। রায়ে বলা হয়, রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী বলেছেন, আসামি ময়মনসিংহের জেলা কাউন্সিল ডাকবাংলোয় স্থাপিত আলবদর ক্যাম্পে যাতায়াত করতেন এবং রাতের বেলা বিভিন্ন অভিযানে যেতেন। টুনুকে ওই আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে হত্যার অভিযোগ প্রমাণের জন্য এ বক্তব্য যথেষ্ট নয়। এ ছাড়া অনির্দিষ্ট কারও কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ শুনে ওই সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন, যার ওপর ভিত্তি করে কাউকে অপরাধের জন্য দায়ী হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। ইআর


No comments:

Post a Comment