Thursday, March 5, 2015

মধ্যস্থতায় কূটনীতিকদের জোর তৎপরতা:Time News

মধ্যস্থতায় কূটনীতিকদের জোর তৎপরতা স্টাফ রিপোর্টার টাইম নিউজ বিডি, ০৫ মার্চ, ২০১৫ ০১:৩২:১৯ চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে মধ্যস্থতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন বিদেশী কূটনীতিকরা। এ ব্যাপারে তারা আগের চেয়ে অনেক বেশি দৃশ্যমান ও জোরালো তৎপরতা শুরু করেছেন। সম্প্রতি বিদেশী কূটনীতিকরা সরকার ও বিএনপির সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী কূটনীতিকদের মাধ্যমে সরকারের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন,
সহিংসতা বন্ধ করলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ দেয়া হবে। অন্যদিকে আন্দোলন স্থগিত করতে তিন দফা শর্ত দিয়েছে বিএনপি। এগুলো হচ্ছে- খালেদা জিয়ার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তি এবং দলীয় কার্যালয় খুলে দেয়া। অন্যদিকে কূটনীতিকরা চাচ্ছেন, ভবিষ্যৎ নির্বাচনের সময় যাতে স্থায়ীভাবে সহিংসতা বন্ধ হয়, সেই লক্ষ্যে দুই দলের মধ্যেই একটি সমঝোতা সৃষ্টি করা। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় অবস্থানরত ১৬ কূটনীতিকের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সরকারের বার্তা পৌঁছে দেয়। এখন এ বিষয়ে বিএনপির সাড়া পাওয়ার অপেক্ষায় আছে সরকার। পাশাপাশি নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা বন্ধ করতে দুই দলের মধ্যে মতৈক্য প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কূটনীতিকদের আগ্রহের কথাও সরকার ও বিএনপিকে জানানো হয়েছে। জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বুধবার সন্ধ্যায় বলেন, বিদেশী কূটনীতিকরা আমাদের বার্তা ওদের (বিএনপি) অবহিত করেছে বলে জানতে পেরেছি। তাছাড়া বিদেশী কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার তাদের অভিমত প্রকাশ্যেই বলেছেন। অপরদিকে ঢাকায় একটি ইউরোপীয় দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বুধবার সন্ধ্যায়  জানিয়েছেন, কূটনীতিকরা ভবিষ্যতে সহিংসতা স্থায়ীভাবে অবসানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে মতৈক্যে পৌঁছাতে চেষ্টা করছেন। এ লক্ষ্যেই তারা সরকার ও বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, এ পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে কোনো পর্যায়ের বৈঠকেই বিদেশী কূটনীতিকরা মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা বলেননি। বরং তারা বলছেন, ভবিষ্যতে নির্বাচনকে ঘিরে যাতে সহিংসতা না চলে সেটার একটা সুরাহা তারা দেখতে চান। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের আওতাতেই সব সমস্যার সমাধানের বিষয়ে আমাদের যুক্তিও কূটনীতিকরা উপলব্ধি করেছেন। ১ মার্চ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেন বিদেশী কূটনীতিকরা। বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশী কূটনীতিকদের জানানো হয় যে, সহিংসতা বন্ধ করলে বিএনপিকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ দেয়া হবে। তবে এ পর্যন্ত সহিংস কর্মকাণ্ড, পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে মানুষ হত্যা ও অগ্নিদগ্ধ করা এবং গাড়ি পোড়ানোসহ যেসব নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়েছে তার বিচার করা হবে। পাশাপাশি বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বানও সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। বিদেশী কূটনীতিকরা সরকারকে জানিয়েই মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে সরকারের এ বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। কূটনীতিকরা পতাকাবিহীন দুটি মিনিবাসে খালেদা জিয়ার দফতরে যান। সেখানে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের গুঞ্জনের মধ্যেই তারা বৈঠক করেন। শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার হননি খালেদা জিয়া। বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে দেশের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা, প্রবৃদ্ধি, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের স্বার্থে কূটনীতিকদের যুক্তিগুলো বিএনপি মেনে নিয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের একটি কার্যকর উদ্যোগ দরকার। এ উদ্যোগের মধ্যে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তি এবং দলের কার্যালয় খুলে দেয়া হলে আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়াও ফিরে আসবে। সরকারও সময় নিয়ে পরে একটা সমাধানের চেষ্টা করতে পারবে। বিএনপির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, তাদের দল সহিংসতা করে না। আন্দোলনের কারণে সহিংসতা হয়ে থাকলে সরকারের উদ্যোগের মাধ্যমে আন্দোলন স্থগিত হতে পারে। সূত্রমতে, বিএনপি কূটনীতিকদের বলেছে, সরকার একটু পিছিয়ে গেলে তাদের তেমন কিছু হবে না। এতে বিএনপির ছাড় দেয়া সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বলেন, খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের কথা বলে বিএনপি একটি নাটক সাজাতে চেয়েছিল। সেই সুযোগ না পেয়ে আবার মানুষের ওপর হামলা শুরু করেছে। আজও (বুধবার) তাপসের নেতৃত্বাধীন একটি মিছিলে সন্ত্রাসী হামলা করেছে। এগুলো করে তারা পার পাবে না। এদিকে কূটনীতিকদের তৎপরতা সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বুধবার বলেন, বিদেশী কূটনীতিকরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। পরবর্তী সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার চিত্র তুলে ধরেছেন। তাদের সহিংসতার ভিডিও ফুটেজ সংবলিত তথ্য চিত্র দেখানো হয়েছে। এছাড়া সহিংসতা সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত তাদের কাছে দেয়া হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা কূটনীতিকদের এও বলেছি যে, গত ছয় বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে, বিএনপি সমস্যার সমাধান করতে চায় না। তাদের কোনো সদিচ্ছা থাকলে খালেদা জিয়া নির্বাচনের পূর্বে প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোনে সাড়া দিতেন। টেলিফোনের পরও আমাদের দরজা খোলা ছিল। সেই সুযোগ তারা হারিয়েছে। খালেদা জিয়ার ছেলে মারা যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শোক জানাতে গেলেও তাকে যেতে দেয়নি। বিএনপি সমস্যা সমাধানের বদলে অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্ব নেতারা উপলব্ধি করেছে যে, জামায়াত একটি জঙ্গি সংগঠন। যারা জ্বালাও-পোড়াও করে তাদের সঙ্গে জোট করাটা ঠিক নয়। কূটনীতিকরা আমাদের কাছে বলেছেন যে, তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে চান। আমরা তাদের বলেছি যে, বিএনপিকে এ বার্তা পৌঁছে দেবেন যে, বিএনপিকে সন্ত্রাসের পথ ছাড়তে হবে। সন্ত্রাসের পথ পরিহার করলে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে দেয়া হবে। তবে যারা নৃশংসতা পরিচালনা করেছে তাদের বিচার অবশ্যই হবে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, আমরা কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলেছি এ কারণে যে, সহিংসতা সম্পর্কে কেউ যেন বিদেশীদের ভুল ব্যাখ্যা দিতে না পারে। আমরা সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছি, সংবিধানের বাইরে কোনো মীমাংসা হবে না। খালেদা জিয়ার কাছ থেকে কূটনীতিকরা কী সাড়া পেয়েছেন- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা কূটনীতিকদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। তাছাড়া সহিংসতা বন্ধের ব্যাপারে আমাদের আহ্বানে বিএনপি কী সাড়া দেবে সেটা আমরা মাঠে-ময়দানে দেখব। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অনেক বদলে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে দেখতে চান। আমরা যে আত্মমর্যাদার স্থানে অধিষ্ঠিত, তার বড় প্রমাণ হল গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার। সরকারের ওপর বিদেশী চাপ সেখান থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। ভবিষ্যতেও আত্মমর্যাদার বিষয়ে সরকারের আস্থার বিষয়টি বিদেশী কূটনীতিকরা ভালোভাবেই জানেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার আগেও সরকারকে জানিয়েই কূটনীতিকরা গেছেন। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ডেনমার্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, সুইডেন, তুরস্ক, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা সরকার ও বিএনপির সঙ্গে চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে উল্লিখিত তৎপরতা চালিয়েছেন। এই কূটনীতিকরা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপি নেত্রী উভয়ের সঙ্গে বৈঠককালেই সহিংসতার পরিসমাপ্তি এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কূটনীতিকদের দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে আমরা আমাদের এই আশা জানাতে লিখছি যে, ক্ষতিকর সময় থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটবে। আমরা স্বাভাবিকভাবেই সাম্প্রতিক সপ্তাহে সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের নিন্দা জানাই। এসবের কারণে জীবন, অঙ্গ ও আস্থার ওপর মূল্য দিতে হয়েছে। আমরা এই সহিংসতার পরিসমাপ্তির আহ্বান জানাই। সহিংসতার অবসান ও সংকট উত্তরণে আস্থা বৃদ্ধির পদক্ষেপের প্রয়োজন। এটা কীভাবে করা হবে সেটা বাংলাদেশকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা সব পক্ষকে জ্বালাময়ী রাজনৈতিক ভাষা প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করি যা অপর পক্ষকে আবারও বিচ্ছিন্ন করবে এবং সহিংসতার দিকে নিয়ে যাবে। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে রাজনৈতিক মতপার্থক্য শান্তিপূর্ণ, আইনগত এবং গণতান্ত্রিক উপায়ে নিরসন সম্ভব হবে। আমরা বিশ্বাস করি আস্থা সৃষ্টি, জনগণের নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির জন্য এ পরিবেশ জরুরি। এতে বাংলাদেশের অব্যাহত উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা এবং উগ্রবাদ দমনে শক্তি দীর্ঘস্থায়ী হবে। আমরা সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনাকে স্বাগত জানাব।সূত্র: যুগান্তর জেআই


No comments:

Post a Comment