ইরানের পরমাণু ইস্যুতে বেকায়দায় ওবামা আন্তর্জাতিক ডেস্ক টাইম নিউজ বিডি, ০৫ মার্চ, ২০১৫ ০২:১১:২৩ পরমাণু ইস্যুতে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ওবামা প্রশাসনের চুক্তিতে বাধা দেয়ার পরিকল্পনা করছে দেশটির বিরোধী রিপাবলিকান দল। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আপত্তি সত্ত্বেও রিপাবলিকান দলের আমন্ত্রণে কংগ্রেসে ভাষণ দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফলে চুক্তি নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন ওবামা। অবশ্য নেতানিয়াহুর হুমকি সত্ত্বেও পুনরায় ইরানের সঙ্গে পরমাণু ইস্যুতে আলোচনা শুরু করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। উল্লেখ্য, বর্তমানে মার্কিন পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ অবস্থানে আছে রিপাবলিকান দল। খবর বিবিসি, রয়টার্স ও আল-জাজিরার। দুই দলের দ্বন্দ্ব বাড়ছে মার্কিন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকানপন্থী নেতা মিচ ম্যাক কন্নেলে জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে তারা কংগ্রেসে ইরান ইস্যুতে একটি বিল উত্থাপন করবেন যার ওপর বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। এর ফলে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি চূড়ান্ত করার আগে ওবামার কংগ্রেসের অনুমোদন নেয়ার প্রয়োজন হবে। মিচ ম্যাক কন্নেলে গত মঙ্গলবার সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানান। এর ফলে কংগ্রেসে রিপাবলিকানদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে এক ধরনের দ্বন্দ্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যানরা ইরানের সঙ্গে চুক্তি করতে আরো সময় চান। কিন্তু রিপাবলিকানরা সেই সময়টা নাও দিতে পারেন। ম্যাক কন্নেলের কথায় সেটাই পরিলক্ষিত হচ্ছে। তিনি বলেছেন, আমরা মনে করি এখনই উপযুক্ত সময়। এই পদক্ষেপ ইরানের সঙ্গে কোন খারাপ চুক্তি স্বাক্ষরে প্রশাসনকে প্রতিরোধ করতে পারবে। আর তারা যদি সেটা করেন তাহলে কংগ্রেসে এর বিচার বিশ্লেষণ করাও সম্ভব হবে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, কংগ্রেসে ‘ইরান নিউক্লিয়ার রিভিউ অ্যাক্টে’ প্রেসিডেন্ট ওবামা তার ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। ইরানের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হলে কংগ্রেস চুক্তি বিবেচনা কিংবা প্রত্যাখান করার জন্য ৬০ দিন সময় পাবে। ডেমোক্র্যাট দল ইরানের ওপর বড় ধরনের কোন অবরোধ আরোপ করতে চায় না। তারা সমঝোতার মাধ্যমে একটি চুক্তিতে পৌঁছতে চায়। অন্যদিকে রিপাবলিকানরা চায় ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করার জন্য অবরোধ আরো কঠোর করতে। এমনকি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সিনেটে ইরানের ওপর বড় ধরনের অবরোধ আরোপের জন্যও একটি বিল আনতে পারে রিপাবলিকান দল। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো চায়, চলতি মাসের মধ্যে ইরানের সঙ্গে পরমাণু ইস্যুতে একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি এবং জুনে একটি চূড়ান্ত চুক্তি করা। নেতানিয়াহুর ভাষণ প্রত্যাখান ওবামার যুক্তরাষ্ট্র সফরে আসা ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তার ভাষণে প্রেসিডেন্ট ওবামার ইরান নীতির সমালোচনা করেছেন। মার্কিন কংগ্রেসে মঙ্গলবার দেয়া ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, অনুষ্ঠিতব্য চুক্তি ইরানের বোমা তৈরির পথ বন্ধ করবে না, বরং এটা ইরানকে বোমা তৈরির পথ করে দেবে। এ সময় তিনি বিশ্ববাসীকে ইরানের বিরুদ্ধে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানান। নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা বলে আসছি, বাজে চুক্তির চেয়ে কোনো চুক্তি না হওয়াই ভাল। এটা একটি বাজে চুক্তি, খুবই বাজে চুক্তি।’ হাতে লেখা ভাষণ থেকে নেতানিয়াহু উদ্ধৃত করেন, ‘আমি জানি আমার বক্তব্যের সাথে অনেকের দ্বিমত আছে। তবে এটা আমার দুশ্চিন্তার বিষয় নয়।’ দ্বিমত সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরাইলের ঐতিহাসিক মিত্রতা অক্ষুণ্ন থাকবে বলে উল্লেখ করেন নেতানিয়াহু। এ সম্পর্ক রাজনীতি থেকে অনেক দূরে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। নেতানিয়াহু বলেন, ইরান ভবিষ্যতে চুক্তির বিষয়বস্তু মানবে না। কংগ্রেসে ভাষণ দেয়ার আগেও বিভিন্ন সময় নেতানিয়াহু একই ধরনের কথা বলেছেন। এ বিষয়ে ওবামা বলেন, ‘আমি তার লিখিত ভাষণ পড়ে দেখেছি। সেখানে ব্যতিক্রম কিছুই নেই।’ অন্য ডেমোক্র্যাট নেতারাও নেতানিয়াহুর বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন। হোয়াইট হাউসের সাথে কথা না বলেই রিপাবলিকান স্পিকারের আমন্ত্রণে কংগ্রেসে বক্তব্য দিতে আসেন নেতানিয়াহু। ওবামা জানিয়ে দেন তিনি নেতানিয়াহুর সাথে সাক্ষাত্ করবেন না কারণ কিছুদিন পরেই ইসরাইলের নির্বাচন। শিগগিরই ইরানের পরমাণু ইস্যুতে বিশ্বের শক্তিধর ছয় রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন ও জার্মানির সঙ্গে দেশটির একটি চুক্তি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। চুক্তি স্বাক্ষর বন্ধ করার উদ্দেশে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগেরদিন ওবামা বলেন, ছয় বিশ্বশক্তির সাথে একটি সার্বিক ও স্থায়ী চুক্তির জন্য ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ১০ বছর বন্ধ রাখা উচিত। হুমকি সত্ত্বেও আলোচনা চলছে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর হুমকির মাত্র কয়েক ঘন্টা পরই তৃতীয় দিনের মতো গতকাল বুধবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন জন কেরি। গতকাল সুইজারল্যান্ডের মনট্রিক্স শহরে চলতি মাসের মধ্যে একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরির বিষয়ে আলোচনা করেন জন কেরি এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ। ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, ওবামা যা বলেছেন তা হুমকিপূর্ণ এবং এটি মেনে নেয়া যায় না। জারিফ মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের মন্ট্রিক্সে বলেছেন, ওবামার এ বক্তব্য পাশ্চাত্যের সঙ্গে ইরানের চলমান পরমাণু আলোচনার পরিপন্থি। জেআই
No comments:
Post a Comment