Tuesday, February 24, 2015

অবরোধের হাফ সেঞ্চুরি:Time News

অবরোধের হাফ সেঞ্চুরি স্টাফ রিপোর্টার টাইম নিউজ বিডি, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ১৭:৫১:৩০ হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করলো ২০ দলীয় জোটের ডাকা দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের চলমান অবরোধ। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে গত ৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে এ অবরোধ। ঢাকায় ৫ জানুয়ারির সমাবেশে বাধা ও খালেদা জিয়াকে কার্যালয় থেকে বের হতে না দেয়াকে কেন্দ্র করে ঘোষণা করা হয় এই কর্মসূচির। অবরোধের পাশাপ
াশি বিভিন্ন ইস্যুতে দফায় দাফায় ডাকা হয় হরতাল। সপ্তাহের প্রথম দু'তিন কর্ম দিবসে হরতাল আহবান করেও তা বর্ধিত করা হয় সপ্তাহব্যাপী। এ কারণে দূরপাল্লা তো দূরের কথা স্থানীয় পরিবহনগুলোর চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। থমকে দাঁড়ায় নৌ পথে চলাচলকারী যানবাহন। শিডিউল বিপর্যয় ঘটে রেলপথেও। এতে করে জনজীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। তাছাড়া অবরোধের প্রথম দিকে মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করা হলেও কিছু দিন পর থেকেই শুরু হয় ব্যাপক ভাংচুর-আগুন। বাস-ট্রাক থেকে শুরু করে ছোট ছোট যানবাহনও রেহাই পায়নি এসব হামলা থেকে। দুর্বৃত্তদের ককটেল বিস্ফোরণে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে অংসংখ্য মানুষ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সহজপ্রাপ্য ভয়ঙ্কর এক মরণাস্ত্র 'পেট্রলবোমা', যার আগুনে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়েছে অসংখ্য মানুষের ছোট-বড় স্বপ্ন। নারী-শিশুসহ প্রায় সব বয়সী মানুষই এর শিকার হয়েছেন। হাসপাতালের বেডে দীর্ঘদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েও অবশেষে জীবনযুদ্ধে হেরে যেতে হয়েছে অনেককে। হাসপাতালের আকাশ-বাতাস ভারি হয়েছে তাদের স্বজনদের কান্নায়। এদিকে হরতাল-অবরোধে নাশকতা বন্ধে কঠোর অবস্থান নেয় সরকার ও প্রশাসন। শুধু আটক আর নির্যাতনেই থেমে থাকেনি, হত্যায় মেতে উঠেছেন তারাও। বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গুমের শিকার হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। ডিবি পরিচয়ে আটকের পর অস্বীকারের ঘটনাও ঘটেছে অনেকের বেলায়।  এমনকী পেট্রোল বোমা মারা যেন রাজনীতির একটি শক্ত গুটিতে পরিণত হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগ নেতাসহ পেট্রোল বোমাসহ বেশ কয়েকজন সরকারদলীয় সমর্থকও ধরা পড়ে পুলিশের হাতে। কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে প্রাণ হরণ করা হয়েছে অসংখ্য মানুষের। গুলি করে হত্যার পর গণপিটুনিতে নিহত বলে চালিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকটি। এর মধ্যে উল্লেযোগ্য ঘটনা ঘটেছে গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে। রাজধানীর টেকনিক্যালে ৩ জনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শরীরে গুলির চিহ্ন থাকার পরও পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, হরতালে নাশকতা করতে গিয়ে তারা গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে। এত কিছুর পরও সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হচ্ছে দেশ স্বাভাবিক। জনজীবনে নেই হরতাল-অবরোধের প্রভাব। কূটনীতিকদের ডেকে এনে নাটকের মতো প্রদর্শিত হয়েছে বিরোধী জোটের চলমান আন্দোলনের ফসল। নিজ দলের নেতাকর্মীদের হামলায় হতাহতদের চালিয়ে দেয়া হয়েছে ২০ দলের অপকর্ম বলে। টানা হরতাল-অবরোধেও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সচল বলে দাবি করেছেন মন্ত্রী-এমপিরা। তবে আসল চিত্র তুলে ধরেছেন ব্যবসায়ীরা। সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতির কথা। রাস্তায় দাঁড়িয়েছেন প্রতিবাদ জানাতে। বন্ধের হুমকি দিয়েছেন সব ব্যবসা-বাণিজ্য। কর্মহীন মানুষের দুর্দশার চিত্র ফুটে উঠেছে রাস্তা-ঘাটে, চলমান বা চায়ের দোকানে বসে আড্ডারত মানুষের আলোচনা-সমালোচনায়। এদিকে হরতাল-অবরোধের মধ্যেই চলে আসে পূর্বনির্ধারিত এসএসসি ও সমানের পরীক্ষা। শুরু হয় নতুন রাজনীতি। শিশুদের ব্যবহার করে চাঙা হয়ে ওঠে রাজনীতির নামে অপরাজনীতি। বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে সংলাপের তাড়া দিয়ে পরীক্ষা বন্ধের আহবান জানানো হয়। আর সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধী জোটের আন্দোলন দমাতে যু্ক্তির ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় দেশের কয়েক লাখ শিশু শিক্ষার্থীকে। পরীক্ষা না পিছিয়ে আন্দোলন বন্ধের আহবান জানানো হয়। তবে সবাই যার যার অবস্থানে অনড়। চলছে পরীক্ষা। অবরোধের আতঙ্ক মাথায় নিয়েই পরীক্ষার্থীদের হলে প্রবেশ করতে হচ্ছে। আর দুশ্চিন্তা নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের স্বজনদের। বারবার পরীক্ষার শিডিউল পরিবর্তনের ফলে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি। তারপরও বড় আশা নিয়ে হলে যাচ্ছেন পরীক্ষার্থীরা।  শেষ পর্যন্ত দেশের বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলো একটি অর্থপূর্ণ সংলাপের মধ্য দিয়ে চলমান সংকট উত্তরণে এগিয়ে আসবে-সেই প্রত্যাশাই করেন দেশের সাধারণ মানুষ। বহির্বিশ্বও এমন একটি সমাধানের কথাই বার বার বলে আসছে। এআর, কেবি


No comments:

Post a Comment