
র্তাদের আরও সতর্ক হয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে জেলা প্রশাসকেরা (ডিসি) নিজ নিজ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করার কথা জানিয়েছেন। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে চলমান সহিংস পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা সরকারের সহায়তা চেয়েছেন। বেশির ভাগ ডিসি পরিস্থিতি সামাল দিতে র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েনের অনুরোধ জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তারা তাদের নিজেদের ও পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তা, সরকারি সম্পদ ও সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন। জেলা-উপজেলায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বাসাবাড়িতেও হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এসব চিঠি আসার পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ডিসিদের চিঠি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে বলেন, 'আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। মাঠ প্রশাসনের নিরাপত্তার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছি। ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে আনসার, র্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছি।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে সেনা মোতায়েনের কোনো আশঙ্কা নেই। এদিকে অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মোকাবিলায় রেল চলাচল নির্বিঘ্ন করতে এবং রেল লাইনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঝুঁকিপূর্ণ এক হাজার ৪১টি স্থান ও স্থাপনায় ১০ দিনের জন্য ৮ হাজার ৩২৮ জন আনসার মোতায়োনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রযোজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলায় জেলায় সামাজিক কমিটি করার কথা ভাবা হচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মী, সব বাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এসব কমিটিতে থাকবেন। এলাকার আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির উন্নয়নে তারা কাজ করবেন। আজ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ ব্যাপারে তার পরামর্শ চাইতে পারেন বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। ৫ জানুয়ারির 'একতরফা' নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে ২০-দলীয় জোট এই টানা অবরোধ ডেকেছে। কিন্তু সংঘাতের শুরু ৪ জানুয়ারি থেকে। এই আট দিনে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ১২ জন। পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৩ সালের সহিংসতায় বেশির ভাগ হতাহতের ঘটনা ছিল ঢাকার বাইরে। এবার ঢাকায়ও হচ্ছে। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন সম্পদ ও স্থাপনা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। যোগাযোগ করা হলে নারায়ণগঞ্জের ডিসি আনিসুর রহমান মিঞা বলেন, গত কয়েক দিনে নারায়ণগঞ্জে চোরাগোপ্তা হামলা বেড়ে গেছে, অগ্নিসংযোগ হচ্ছে। শনিবার রাতেও একটি ট্রাক পোড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বাড়াতে তাঁরা আগেই আনসার চেয়েছেন। এখন অতিরিক্ত ফোর্স হিসেবে বিজিবি চেয়েছেন। জানতে চাইলে বগুড়ার ডিসি শফিকুর রেজা বিশ্বাস বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ইতিমধ্যে সেখানে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিনও অতিরিক্ত বাহিনী চেয়েছেন। আরও হামলা হওয়ার আশঙ্কায় ইউএনওসহ পদস্থ কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন জেলা প্রশাসকেরা। রংপুর বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, বর্তমানে যে পরিস্থিতি, তাতে সতর্ক তো থাকতেই হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (এপিডি) মহিবুল হক বলেন, 'আমরা মাঠ প্রশাসনের সব কর্মকর্তাকে সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছি। এ ছাড়া যেকোনো পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলেছি।' নিরাপত্তা জোরদার করতে চিঠি: গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, এর আগে তারা দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েনের অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আরও দুই প্লাটুন বিজিবি সদস্য পলাশবাড়ী উপজেলার মহাসড়কে মোতায়েনের অনুরোধ করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে সেখানে অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করে অবরোধ চলা পর্যন্ত তিন প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করার অনুরোধ করা হয়েছে। পাবনা জেলা প্রশাসন থেকে পাঠানো চিঠিতে জরুরি ভিত্তিতে চার প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েনের অনুরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী, সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, খুলনা, মাগুরা, ঝিনাইদহ, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা থেকেও একই অনুরোধ জানানো হয়েছে।সূত্র: প্রথম আলো ইআর
No comments:
Post a Comment