Saturday, January 17, 2015

সরকারের পতন আসন্ন, ফরহাদ মজহারের মত:RTNN

সরকারের পতন আসন্ন, ফরহাদ মজহারের মত নিজস্ব প্রতিবেদক আরটিএনএন ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ‘আসন্ন’ বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার।   তিনি লিখেছেন, সাধারণ মানুষ, যারা সরকারের পক্ষে নন কিন্তু সরাসরি আন্দোলন সংগ্রামেও নাই, তারা কিছুটা বিভ্রান্ত বটে। সরকার ক্রমে সব নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসছে এই প্রপাগান্ডায় অনেকের মনে একটি দ্বিধান্বিত প্রশ্ন আছে যে, এই সরকারের পতন ঘটবে কি? উ
ত্তর : অবশ্যই। সেটা আসন্নই বলা যায়।’ দৈনিক নয়া দিগন্তে শুক্রবার প্রকাশিত তার নিয়মিত কলামে তিনি লিখেছেন, এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় আমি একটি কবিতা লিখেছিলাম, ‘এরশাদ তোমাকে দেখামাত্রই গুলি করবে’। সে রকম একটা নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল সেই সময়। তখনই বুঝেছিলাম এটা মারণকামড়ের মতো। সামরিক শাসকের হাত থেকে নিস্তার পাওয়া স্রেফ অল্প কিছু সময়ের ব্যাপার মাত্র। তা-ই ঘটেছে। গতকাল (বুধবার) দেখছি, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, ‘একজন ব্যক্তি যদি বোমা ফাটায়, তাহলে পাঁচজন লোক নিহত হতে পারে। এ দৃশ্য কোনো বিজিবি সদস্যের নজরে এলে ওই বোমা বহনকারীকে ক্যাজুয়ালটি (হতাহত) করা তার দায়িত্ব।’ (দেখুন প্রথম আলো, ১৬ জানুয়ারি ২০১৫)। ফরহাদ মজহার লিখেছেন, ‘না, এটা তার দায়িত্ব না। তার দায়িত্ব সীমান্ত রক্ষা করা। ভারতীয় সীমান্তরী বাহিনীর হাতে বাংলাদেশের নাগরিকদের গুলি করে হত্যার হাত থেকে বাঁচানো। কে বোমা হাতে চলাফেরা করছে, কিম্বা কে বোমাসদৃশ কিছু ফাটাবে সেটা তিনি আগাম জানতে পারবেন না, সেটা সম্ভব নয়। তার মানে তিনি বলছেন, কেউ বোমা ফাটাবে এমন সন্দেহ হলে তিনি গুলি করবেন। অথচ স্বীকার করছেন, ‘বিজিবির সবই লিথ্যাল (প্রাণঘাতী) অস্ত্র। বিজিবির সদস্যরা কাউকে গুলি করবে না। তবে কেউ আক্রমণ করলে জীবন বাঁচাতে গুলি করতে পারে।’ যদি বিজিবি গুলি না করে, তাহলে এইসব বলার কী দরকার! আক্রমণ করলে আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালানো আর আগেভাগে কাউকে বোমা বহনকারী সন্দেহ করে গুলি করার মধ্যে ফারাক আছে। মানবাধিকার কর্মী হিসাবে আমি বিজিবির মহাপরিচালকের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করি। এটা তার এখতিয়ারবহির্ভূত মন্তব্য। এটা বলার কোনো আইনি বা সাংবিধানিক অধিকার তার নাই। আশা করি তিনি এই বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেবেন। বাংলাদেশ সামরিক শাসনের অধীনে নয়, কিম্বা শেখ হাসিনা জরুরি অবস্থা জারি করেছেন বলেও আমরা শুনি নাই। আইনের অধীনে থেকে নাগরিকদের সাংবিধানিক ও মানবিক অধিকার রা করাই আইনশৃংখলা বাহিনীর কর্তব্য। বিজিবির অস্ত্র প্রাণঘাতী জেনেও তা নাগরিকদের ওপর ব্যবহারের চিন্তাটাই বিপজ্জনক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন। নাগরিকদের হত্যা তো দূরের কথা।   বিএনপির সময়ে জেল খাটা এবং সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের কড়া সমালোচনাকারী এই কলামিস্ট লিখেছেন, ‘শুনবার পর থেকেই মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদের বক্তব্য নিয়ে ভাবছিলাম। দেখামাত্রই গুলির কথাবার্তা আমার কাছে মারণকামড়ের লক্ষণ বলেই মনে হয়েছে। আইনশৃংখলা বাহিনী তো অকাতরে আইনবহির্ভূতভাবে গুলি করছে, এটা আবার সাংবাদিক সম্মেলনে বলবার দরকার কি? এর উত্তর আছে দৈনিক যুগান্তরের খবরে। ‘কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্পর্শকাতর ও জনবহুল স্থানে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে ককটেল, বিস্ফোরণ, গুলি ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা’ (দেখুন, ‘অপরাধী কারা?’ ১৬ জানুয়ারি ২০১৫)। তিনি লিখেছেন, যে ভাষাতেই খবরটি পরিবেশিত হোক সারকথা হোল, অবরোধ কর্মসূচি চলছে, চলবে এবং তার মাত্রা বাড়তে থাকবে, কমবে না। একে এখন হুমকি দিয়ে থামিয়ে দেবার জন্যই দেখামাত্র গুলির কথা বললেন বিজিবির মহাপরিচালক। ‘তার কথাকে আমি মতাসীনদের সম্ভাব্য পতনের অগ্রিম আলামত হিসাবে নির্ণয় করেছি। তবে আমার বিচারে এটা তিন নম্বর লক্ষণ। কবিতা না লিখে আলামতগুলো বোঝাবার জন্যই এই কলামটি পাঠকদের দরবারে পেশ করছি। ডিজিটাল টেকনলজি ও ডিজিটাল বাংলাদেশের রমরমা সময়েও বাস্তবে কি ঘটছে সেটা জানা বেশ কঠিন। মাঠের খবর জানতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। অথচ মাঠের খবরের ওপর এখন নির্ভর করছে বাংলাদেশের আগামি রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বাংলাদেশ ছোট দেশ। কঠিন হলেও কি ঘটছে জানতে চাইলে জানা কঠিন নয়। এটা পরিষ্কার যে উত্থানপতন সত্ত্বেও বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচি সফল। সেটা একান্তই তৃণমূলের কর্মীদের জন্য। দুই-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া গণমাধ্যম মতাসীনদের নির্বিচারে মদদ দিয়ে যাচ্ছে। ফলে মাঠের ভূমিকা জাতীয় রাজনীতিকে কিভাবে আগামি দিনে প্রভাবিত করতে পারে সেটা সকলের কাছে স্পষ্ট নয়,’ লিখেছেন ফরহাদ মজহার। এরপর তিনি লিখেছেন, ‘অধিকাংশ গণমাধ্যম তাদের ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে। সেই ভূমিকা হচ্ছে ফ্যাসিস্ট সরকার-বিরোধী আন্দোলন স্তব্ধ করে দেবার জন্য ক্রমাগত প্রপাগান্ডা চালানো। এতে আসল খবর জেনে বাস্তবোচিত বিশ্লেষণ সাধারণ মানুষের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। এমনকি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের জন্যও। সাধারণ মানুষ, যারা সরকারের পক্ষে নন কিন্তু সরাসরি আন্দোলন সংগ্রামেও নাই, তারা কিছুটা বিভ্রান্ত বটে। সরকার ক্রমে সব নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসছে এই প্রপাগান্ডায় অনেকের মনে একটি দ্বিধান্বিত প্রশ্ন আছে যে, এই সরকারের পতন ঘটবে কি? উত্তর : অবশ্যই। সেটা আসন্নই বলা যায়।’   ফরহাদ মজহার লিখেছেন, এটা সম্ভবত স্পষ্ট যে বিরোধী দলের কর্মসূচি কেবল একটি কারণেই ব্যর্থ হতে পারে, যদি খালেদা জিয়া আন্দোলনে অবিচল না থেকে কোনো প্রকার দোদুল্যমানতা প্রদর্শন করেন। আমার অনুমান পিছু হটে আসা তার পক্ষে এখন আর সম্ভব নয়। তাকে গ্রেপ্তার করলেও তিনি তৃণমূলে যে সংবাদ পৌঁছয়ে দেবার, সেটা খানিক পেরেছেন। ফলে তার চার দিকে ঘিরে থাকা জাতীয় নেতৃবৃন্দ তার কর্মসূচি এর আগে যেভাবে বানচাল করে দিয়েছিল, তিনি অবিচল থাকলে সেটা আর সম্ভব হবে না। আন্দোলনের নেতৃত্ব অপেক্ষাকৃত তরুণদের হাতে চলে যাবে। বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য তার পরিণতি কী দাঁড়াবে, সেটা বলবার সময় আসেনি। তবে অবরোধ আন্দোলন আরো এক স্তর তীব্র হলে সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে আমার ধারণা। ‘আপাতত আমরা বোমা হাতে সন্দেহে কাউকে হত্যার চিন্তায় গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন। একে মতাসীনদের পতনের আওয়াজ গণ্য করলেও এই ধরনের মানবাধিকারবিরোধী চিন্তার নিন্দা জানানো আমাদের কর্তব্য।’ মন্তব্য      


No comments:

Post a Comment