াংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কর্মকর্তারা জানান, জ্বালানি তেলের প্রধান স্থাপনা চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত ডিজেল মজুদ রয়েছে। তবে দেশব্যাপী সহিংসতার কারণে তেল পরিবহন করতে না পারায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত ডিপোগুলোয় জ্বালানি তেল সংকট দেখা দিচ্ছে। এছাড়া রেলের ইঞ্জিন সংকট থাকায় ট্যাংক ওয়াগনে জ্বালানি তেল পরিবহন সম্ভব হচ্ছে না। সম্প্রতি নাশকতার আশঙ্কায় রাতের বেলা জ্বালানি তেল পরিবহন বন্ধ রয়েছে। শুধু দিনের বেলায় পুলিশ ও বিজিবির প্রহরায় জ্বালানি তেল পরিবহন করা হচ্ছে। বিপিসির চেয়ারম্যান এ এম বদরুদ্দোজা বলেন, ‘চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় ডিপোগুলোয় পর্যাপ্ত ডিজেল মজুদ থাকার পরও শুধু পরিবহন সংকটের কারণে বিভিন্ন জেলায় ডিজেল ঘাটতি দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রামে জ্বালানি তেলের প্রধান স্থাপনা থেকে যেসব অঞ্চলে দুই দিনের মধ্যে তেল পৌঁছানো যেত, সেসব এলাকায় এখন চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগছে। এ ছাড়া রেলের ইঞ্জিন সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। তাই ওয়াগননির্ভর ডিপোগুলোয় পর্যাপ্ত ডিজেল পরিবহন সম্ভব হচ্ছে না।’ জানুয়ারি মাসে ডিজেল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তিন লাখ ২০ হাজার টন। কিন্তু চলতি মাসের প্রথম ১৪ দিনে বিক্রি হয়েছে মাত্র এক লাখ ১৭ হাজার টন। বিপিসির তথ্য মতে, সেচ মৌসুমে দৈনিক গড়ে ১২ হাজার টন ডিজেল বিক্রি হলেও চলতি মাসের প্রথম ১৪ দিনে দেশব্যাপী ডিজেল বিক্রির গড় পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে আট হাজার টন। দেশের বিভিন্ন ডিপোতে বর্তমানে ডিজেল মজুদ আছে প্রায় দুই লাখ ৭৭৪ হাজার টন। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রামে রয়েছে প্রায় এক লাখ টন। কর্মকর্তারা আরো জানান, নৌপথে জ্বালানি তেল পরিবহন সচল থাকলেও রেল ওয়াগননির্ভর জ্বালানি তেলের ডিপোগুলোয় তেল পরিবহন করা যাচ্ছে না। এছাড়া সড়কপথে নাশকতার আশঙ্কায় বহুলাংশে কমে গেছে জ্বালানি তেল পরিবহন। বিপিসির তথ্য অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার সারা দেশের ২৩টি ডিপো থেকে প্রায় ১৪ হাজার ৮০ টন ডিজেল বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের প্রধান স্থাপনা থেকে ডিজেল বিক্রি হয়েছে মাত্র এক হাজার ৭০০ টন, গোদনাইল ডিপো থেকে বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৩৬৬ টন, ফতুল্লা ডিপো থেকে এক হাজার ৭৭ টন, ঢাকার ইপিওএল ডিপো থেকে ৫৪ টন, দৌলতপুর ডিপো থেকে তিন হাজার ৬২৭ টন, বাঘাবাড়ি ডিপো থেকে দুই হাজার ৪৭৬ টন, পার্বতীপুর ডিপো থেকে ৮৪৯ টন, সিলেট ডিপো থেকে ৩৮ টন, শ্রীমঙ্গল থেকে ২০৭ টন এবং সচনাবাজার (বার্জ) ডিপো থেকে ৫৭ টন। মংলাবাজার ডিপোর মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার কোনো ডিজেল বিক্রি হয়নি। এ ছাড়া বরিশাল ডিপো থেকে ডিজেল বিক্রি হয়েছে ৩৪২ টন, ঝালকাঠি ডিপো থেকে ২৩৪ টন, চাঁদপুর ডিপো থেকে ৪৫২ টন, ভৈরব ডিপো থেকে ৯১৫ টন, আশুগঞ্জ ডিপো থেকে ৫০৭ টন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডিপো থেকে মাত্র ১৬ টন, রাজশাহী ডিপো থেকে ১০৫ টন এবং চিলমারী ডিপো থেকে ৫৮ টন। জ্বালানি তেল বিপণন কম্পানির কর্মকর্তারা জানান, উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় বাঘাবাড়ী এবং পার্বতীপুর ডিপো থেকে মূলত ডিজেল পরিবহন হয়ে থাকে। আর পার্বতীপুর ডিপোর জ্বালানি তেল যায় দৌলতপুর ডিপো এবং চট্টগ্রাম থেকে। বর্তমানে রেলের ইঞ্জিন সংকটের কারণে জ্বালানি তেল পরিবহন বিঘ্নিত হচ্ছে। কর্মকর্তারা আরো জানান, পার্বতীপুর ডিপো থেকে রংপুর ডিপোর দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। এই রেলপথটি মিটারগেজ হওয়ায় ব্রডগেজের ইঞ্জিন চলাচল বিঘ্নিত হয়। এই ৪০ কিলোমিটার পথ ডুয়েলগেজ হলে জ্বালানি তেল পরিবহন সহজ হয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। জানা গেছে ডিজেলের মজুদ কমেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৩ জেলায়। এর মধ্যে যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলায় প্রায় ২৫০-২৬০টি পেট্রল পাম্প ও ২৫০টি এজেন্সি পয়েন্ট রয়েছে। এসব পেট্রল পাম্প ও এজেন্সি পয়েন্টের সঙ্গে সাড়ে তিন শ ট্যাংকলরির আড়াই হাজার শ্রমিক-কর্মচারী যুক্ত রয়েছেন। টানা অবরোধ, হরতাল ও নাশকতায় এসব মানুষ অনেকটাই বেকার হয়ে পড়েছেন। খুলনার পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তেল ডিপো থেকে তেল উত্তোলন ও সরবরাহও অর্ধেকে নেমে এসেছে। তেল ডিপোর কর্মকর্তারা জানান, স্বাভাবিকভাবে অর্থাৎ অবরোধের আগে খুলনার তিনটি ডিপো থেকে গত ৩ জানুয়ারি ২৮৫ টন পেট্রল, ৭২ টন অকটেন, তিন হাজার ২৪৮ টন ডিজেল ও ১২৬ টন কেরোসিন সরবরাহ করা হয়। ৬ জানুয়ারি অবরোধ চলাকালে একই ডিপো থেকে মাত্র ৩২ টন পেট্রল, আট টন অকটেন, ৩৮৯ টন ডিজেল ও ২৮ টন কেরোসিন সরবরাহ করা হয়। আর গত ১৪ জানুয়ারি সরবরাহ হয়েছে ৮৯ টন পেট্রল, ৩৯ টন অকটেন, তিন হাজার ৫৯৬ টন ডিজেল ও ৯৩ টন কেরোসিন। বাদামতলা এলাকার মেসার্স মোড়ল ফিলিং স্টেশনের মালিক মোড়ল আব্দুস সোবাহান বলেন, ‘অবরোধের কারণে পাম্পগুলোয় তেল বিক্রি নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। স্বাভাবিক দিনে ডিজেল, পেট্রল, অকটেন সাত-আট হাজার লিটার বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ১০০০ থেকে ১২০০ লিটারে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় খুব বিপদেই রয়েছি। এই ফিলিং স্টেশনে ১৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিদ্যুৎ বিলসহ বিভিন্ন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’ বাংলাদেশ ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন খুলনা বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমার দুটি ফিলিং স্টেশনে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিটিতে গড়ে তিন-চার হাজার লিটার তেল বিক্রি হলেও বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।’ দক্ষিণাঞ্চলের ১৩ জেলার ফিলিং স্টেশন ও এজেন্সি পয়েন্টে স্বাভাবিক দিনে ১৫ লাখ লিটার জ্বালানি তেল বিক্রি হয়। কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তা ছয়-সাত লাখ লিটারে নেমে এসেছে। আবার সেচ মৌসুম হওয়ায় কৃষকদেরও জ্বালানির চাহিদা বেড়েছে। অথচ সেই তুলনায় সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ব্যবসায়ী ও কৃষক উভয়েই বিপদের মধ্যে রয়েছে। মন্তব্য
Saturday, January 17, 2015
জ্বালানি তেল বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে:RTNN
জ্বালানি তেল বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে নিজস্ব প্রতিবেদক আরটিএনএন ঢাকা: ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ ও সহিংসতার কারণে পরিবহনব্যবস্থা হ-য-ব-র-ল হয়ে পড়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। মজুদ কমে যাওয়ায় নাটোর, রংপুর, হরিয়ানা এবং সিলেটের মোগলাবাজার ডিপো থেকে ডিজেল বিক্রি বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আশুগঞ্জ, সচনাবাজার ও সিলেট ডিপোতে জ্বালানি তেলের মজুদ কমে এসেছে। ব
াংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কর্মকর্তারা জানান, জ্বালানি তেলের প্রধান স্থাপনা চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত ডিজেল মজুদ রয়েছে। তবে দেশব্যাপী সহিংসতার কারণে তেল পরিবহন করতে না পারায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত ডিপোগুলোয় জ্বালানি তেল সংকট দেখা দিচ্ছে। এছাড়া রেলের ইঞ্জিন সংকট থাকায় ট্যাংক ওয়াগনে জ্বালানি তেল পরিবহন সম্ভব হচ্ছে না। সম্প্রতি নাশকতার আশঙ্কায় রাতের বেলা জ্বালানি তেল পরিবহন বন্ধ রয়েছে। শুধু দিনের বেলায় পুলিশ ও বিজিবির প্রহরায় জ্বালানি তেল পরিবহন করা হচ্ছে। বিপিসির চেয়ারম্যান এ এম বদরুদ্দোজা বলেন, ‘চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় ডিপোগুলোয় পর্যাপ্ত ডিজেল মজুদ থাকার পরও শুধু পরিবহন সংকটের কারণে বিভিন্ন জেলায় ডিজেল ঘাটতি দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রামে জ্বালানি তেলের প্রধান স্থাপনা থেকে যেসব অঞ্চলে দুই দিনের মধ্যে তেল পৌঁছানো যেত, সেসব এলাকায় এখন চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগছে। এ ছাড়া রেলের ইঞ্জিন সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। তাই ওয়াগননির্ভর ডিপোগুলোয় পর্যাপ্ত ডিজেল পরিবহন সম্ভব হচ্ছে না।’ জানুয়ারি মাসে ডিজেল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তিন লাখ ২০ হাজার টন। কিন্তু চলতি মাসের প্রথম ১৪ দিনে বিক্রি হয়েছে মাত্র এক লাখ ১৭ হাজার টন। বিপিসির তথ্য মতে, সেচ মৌসুমে দৈনিক গড়ে ১২ হাজার টন ডিজেল বিক্রি হলেও চলতি মাসের প্রথম ১৪ দিনে দেশব্যাপী ডিজেল বিক্রির গড় পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে আট হাজার টন। দেশের বিভিন্ন ডিপোতে বর্তমানে ডিজেল মজুদ আছে প্রায় দুই লাখ ৭৭৪ হাজার টন। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রামে রয়েছে প্রায় এক লাখ টন। কর্মকর্তারা আরো জানান, নৌপথে জ্বালানি তেল পরিবহন সচল থাকলেও রেল ওয়াগননির্ভর জ্বালানি তেলের ডিপোগুলোয় তেল পরিবহন করা যাচ্ছে না। এছাড়া সড়কপথে নাশকতার আশঙ্কায় বহুলাংশে কমে গেছে জ্বালানি তেল পরিবহন। বিপিসির তথ্য অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার সারা দেশের ২৩টি ডিপো থেকে প্রায় ১৪ হাজার ৮০ টন ডিজেল বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের প্রধান স্থাপনা থেকে ডিজেল বিক্রি হয়েছে মাত্র এক হাজার ৭০০ টন, গোদনাইল ডিপো থেকে বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৩৬৬ টন, ফতুল্লা ডিপো থেকে এক হাজার ৭৭ টন, ঢাকার ইপিওএল ডিপো থেকে ৫৪ টন, দৌলতপুর ডিপো থেকে তিন হাজার ৬২৭ টন, বাঘাবাড়ি ডিপো থেকে দুই হাজার ৪৭৬ টন, পার্বতীপুর ডিপো থেকে ৮৪৯ টন, সিলেট ডিপো থেকে ৩৮ টন, শ্রীমঙ্গল থেকে ২০৭ টন এবং সচনাবাজার (বার্জ) ডিপো থেকে ৫৭ টন। মংলাবাজার ডিপোর মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার কোনো ডিজেল বিক্রি হয়নি। এ ছাড়া বরিশাল ডিপো থেকে ডিজেল বিক্রি হয়েছে ৩৪২ টন, ঝালকাঠি ডিপো থেকে ২৩৪ টন, চাঁদপুর ডিপো থেকে ৪৫২ টন, ভৈরব ডিপো থেকে ৯১৫ টন, আশুগঞ্জ ডিপো থেকে ৫০৭ টন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডিপো থেকে মাত্র ১৬ টন, রাজশাহী ডিপো থেকে ১০৫ টন এবং চিলমারী ডিপো থেকে ৫৮ টন। জ্বালানি তেল বিপণন কম্পানির কর্মকর্তারা জানান, উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় বাঘাবাড়ী এবং পার্বতীপুর ডিপো থেকে মূলত ডিজেল পরিবহন হয়ে থাকে। আর পার্বতীপুর ডিপোর জ্বালানি তেল যায় দৌলতপুর ডিপো এবং চট্টগ্রাম থেকে। বর্তমানে রেলের ইঞ্জিন সংকটের কারণে জ্বালানি তেল পরিবহন বিঘ্নিত হচ্ছে। কর্মকর্তারা আরো জানান, পার্বতীপুর ডিপো থেকে রংপুর ডিপোর দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। এই রেলপথটি মিটারগেজ হওয়ায় ব্রডগেজের ইঞ্জিন চলাচল বিঘ্নিত হয়। এই ৪০ কিলোমিটার পথ ডুয়েলগেজ হলে জ্বালানি তেল পরিবহন সহজ হয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। জানা গেছে ডিজেলের মজুদ কমেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৩ জেলায়। এর মধ্যে যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলায় প্রায় ২৫০-২৬০টি পেট্রল পাম্প ও ২৫০টি এজেন্সি পয়েন্ট রয়েছে। এসব পেট্রল পাম্প ও এজেন্সি পয়েন্টের সঙ্গে সাড়ে তিন শ ট্যাংকলরির আড়াই হাজার শ্রমিক-কর্মচারী যুক্ত রয়েছেন। টানা অবরোধ, হরতাল ও নাশকতায় এসব মানুষ অনেকটাই বেকার হয়ে পড়েছেন। খুলনার পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তেল ডিপো থেকে তেল উত্তোলন ও সরবরাহও অর্ধেকে নেমে এসেছে। তেল ডিপোর কর্মকর্তারা জানান, স্বাভাবিকভাবে অর্থাৎ অবরোধের আগে খুলনার তিনটি ডিপো থেকে গত ৩ জানুয়ারি ২৮৫ টন পেট্রল, ৭২ টন অকটেন, তিন হাজার ২৪৮ টন ডিজেল ও ১২৬ টন কেরোসিন সরবরাহ করা হয়। ৬ জানুয়ারি অবরোধ চলাকালে একই ডিপো থেকে মাত্র ৩২ টন পেট্রল, আট টন অকটেন, ৩৮৯ টন ডিজেল ও ২৮ টন কেরোসিন সরবরাহ করা হয়। আর গত ১৪ জানুয়ারি সরবরাহ হয়েছে ৮৯ টন পেট্রল, ৩৯ টন অকটেন, তিন হাজার ৫৯৬ টন ডিজেল ও ৯৩ টন কেরোসিন। বাদামতলা এলাকার মেসার্স মোড়ল ফিলিং স্টেশনের মালিক মোড়ল আব্দুস সোবাহান বলেন, ‘অবরোধের কারণে পাম্পগুলোয় তেল বিক্রি নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। স্বাভাবিক দিনে ডিজেল, পেট্রল, অকটেন সাত-আট হাজার লিটার বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ১০০০ থেকে ১২০০ লিটারে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় খুব বিপদেই রয়েছি। এই ফিলিং স্টেশনে ১৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিদ্যুৎ বিলসহ বিভিন্ন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’ বাংলাদেশ ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন খুলনা বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমার দুটি ফিলিং স্টেশনে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিটিতে গড়ে তিন-চার হাজার লিটার তেল বিক্রি হলেও বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।’ দক্ষিণাঞ্চলের ১৩ জেলার ফিলিং স্টেশন ও এজেন্সি পয়েন্টে স্বাভাবিক দিনে ১৫ লাখ লিটার জ্বালানি তেল বিক্রি হয়। কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তা ছয়-সাত লাখ লিটারে নেমে এসেছে। আবার সেচ মৌসুম হওয়ায় কৃষকদেরও জ্বালানির চাহিদা বেড়েছে। অথচ সেই তুলনায় সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ব্যবসায়ী ও কৃষক উভয়েই বিপদের মধ্যে রয়েছে। মন্তব্য
াংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কর্মকর্তারা জানান, জ্বালানি তেলের প্রধান স্থাপনা চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত ডিজেল মজুদ রয়েছে। তবে দেশব্যাপী সহিংসতার কারণে তেল পরিবহন করতে না পারায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত ডিপোগুলোয় জ্বালানি তেল সংকট দেখা দিচ্ছে। এছাড়া রেলের ইঞ্জিন সংকট থাকায় ট্যাংক ওয়াগনে জ্বালানি তেল পরিবহন সম্ভব হচ্ছে না। সম্প্রতি নাশকতার আশঙ্কায় রাতের বেলা জ্বালানি তেল পরিবহন বন্ধ রয়েছে। শুধু দিনের বেলায় পুলিশ ও বিজিবির প্রহরায় জ্বালানি তেল পরিবহন করা হচ্ছে। বিপিসির চেয়ারম্যান এ এম বদরুদ্দোজা বলেন, ‘চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বড় ডিপোগুলোয় পর্যাপ্ত ডিজেল মজুদ থাকার পরও শুধু পরিবহন সংকটের কারণে বিভিন্ন জেলায় ডিজেল ঘাটতি দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রামে জ্বালানি তেলের প্রধান স্থাপনা থেকে যেসব অঞ্চলে দুই দিনের মধ্যে তেল পৌঁছানো যেত, সেসব এলাকায় এখন চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগছে। এ ছাড়া রেলের ইঞ্জিন সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। তাই ওয়াগননির্ভর ডিপোগুলোয় পর্যাপ্ত ডিজেল পরিবহন সম্ভব হচ্ছে না।’ জানুয়ারি মাসে ডিজেল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তিন লাখ ২০ হাজার টন। কিন্তু চলতি মাসের প্রথম ১৪ দিনে বিক্রি হয়েছে মাত্র এক লাখ ১৭ হাজার টন। বিপিসির তথ্য মতে, সেচ মৌসুমে দৈনিক গড়ে ১২ হাজার টন ডিজেল বিক্রি হলেও চলতি মাসের প্রথম ১৪ দিনে দেশব্যাপী ডিজেল বিক্রির গড় পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে আট হাজার টন। দেশের বিভিন্ন ডিপোতে বর্তমানে ডিজেল মজুদ আছে প্রায় দুই লাখ ৭৭৪ হাজার টন। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রামে রয়েছে প্রায় এক লাখ টন। কর্মকর্তারা আরো জানান, নৌপথে জ্বালানি তেল পরিবহন সচল থাকলেও রেল ওয়াগননির্ভর জ্বালানি তেলের ডিপোগুলোয় তেল পরিবহন করা যাচ্ছে না। এছাড়া সড়কপথে নাশকতার আশঙ্কায় বহুলাংশে কমে গেছে জ্বালানি তেল পরিবহন। বিপিসির তথ্য অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার সারা দেশের ২৩টি ডিপো থেকে প্রায় ১৪ হাজার ৮০ টন ডিজেল বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের প্রধান স্থাপনা থেকে ডিজেল বিক্রি হয়েছে মাত্র এক হাজার ৭০০ টন, গোদনাইল ডিপো থেকে বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৩৬৬ টন, ফতুল্লা ডিপো থেকে এক হাজার ৭৭ টন, ঢাকার ইপিওএল ডিপো থেকে ৫৪ টন, দৌলতপুর ডিপো থেকে তিন হাজার ৬২৭ টন, বাঘাবাড়ি ডিপো থেকে দুই হাজার ৪৭৬ টন, পার্বতীপুর ডিপো থেকে ৮৪৯ টন, সিলেট ডিপো থেকে ৩৮ টন, শ্রীমঙ্গল থেকে ২০৭ টন এবং সচনাবাজার (বার্জ) ডিপো থেকে ৫৭ টন। মংলাবাজার ডিপোর মজুদ ফুরিয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার কোনো ডিজেল বিক্রি হয়নি। এ ছাড়া বরিশাল ডিপো থেকে ডিজেল বিক্রি হয়েছে ৩৪২ টন, ঝালকাঠি ডিপো থেকে ২৩৪ টন, চাঁদপুর ডিপো থেকে ৪৫২ টন, ভৈরব ডিপো থেকে ৯১৫ টন, আশুগঞ্জ ডিপো থেকে ৫০৭ টন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডিপো থেকে মাত্র ১৬ টন, রাজশাহী ডিপো থেকে ১০৫ টন এবং চিলমারী ডিপো থেকে ৫৮ টন। জ্বালানি তেল বিপণন কম্পানির কর্মকর্তারা জানান, উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় বাঘাবাড়ী এবং পার্বতীপুর ডিপো থেকে মূলত ডিজেল পরিবহন হয়ে থাকে। আর পার্বতীপুর ডিপোর জ্বালানি তেল যায় দৌলতপুর ডিপো এবং চট্টগ্রাম থেকে। বর্তমানে রেলের ইঞ্জিন সংকটের কারণে জ্বালানি তেল পরিবহন বিঘ্নিত হচ্ছে। কর্মকর্তারা আরো জানান, পার্বতীপুর ডিপো থেকে রংপুর ডিপোর দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। এই রেলপথটি মিটারগেজ হওয়ায় ব্রডগেজের ইঞ্জিন চলাচল বিঘ্নিত হয়। এই ৪০ কিলোমিটার পথ ডুয়েলগেজ হলে জ্বালানি তেল পরিবহন সহজ হয়ে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। জানা গেছে ডিজেলের মজুদ কমেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৩ জেলায়। এর মধ্যে যশোর, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল, মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলায় প্রায় ২৫০-২৬০টি পেট্রল পাম্প ও ২৫০টি এজেন্সি পয়েন্ট রয়েছে। এসব পেট্রল পাম্প ও এজেন্সি পয়েন্টের সঙ্গে সাড়ে তিন শ ট্যাংকলরির আড়াই হাজার শ্রমিক-কর্মচারী যুক্ত রয়েছেন। টানা অবরোধ, হরতাল ও নাশকতায় এসব মানুষ অনেকটাই বেকার হয়ে পড়েছেন। খুলনার পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তেল ডিপো থেকে তেল উত্তোলন ও সরবরাহও অর্ধেকে নেমে এসেছে। তেল ডিপোর কর্মকর্তারা জানান, স্বাভাবিকভাবে অর্থাৎ অবরোধের আগে খুলনার তিনটি ডিপো থেকে গত ৩ জানুয়ারি ২৮৫ টন পেট্রল, ৭২ টন অকটেন, তিন হাজার ২৪৮ টন ডিজেল ও ১২৬ টন কেরোসিন সরবরাহ করা হয়। ৬ জানুয়ারি অবরোধ চলাকালে একই ডিপো থেকে মাত্র ৩২ টন পেট্রল, আট টন অকটেন, ৩৮৯ টন ডিজেল ও ২৮ টন কেরোসিন সরবরাহ করা হয়। আর গত ১৪ জানুয়ারি সরবরাহ হয়েছে ৮৯ টন পেট্রল, ৩৯ টন অকটেন, তিন হাজার ৫৯৬ টন ডিজেল ও ৯৩ টন কেরোসিন। বাদামতলা এলাকার মেসার্স মোড়ল ফিলিং স্টেশনের মালিক মোড়ল আব্দুস সোবাহান বলেন, ‘অবরোধের কারণে পাম্পগুলোয় তেল বিক্রি নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। স্বাভাবিক দিনে ডিজেল, পেট্রল, অকটেন সাত-আট হাজার লিটার বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ১০০০ থেকে ১২০০ লিটারে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় খুব বিপদেই রয়েছি। এই ফিলিং স্টেশনে ১৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিদ্যুৎ বিলসহ বিভিন্ন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’ বাংলাদেশ ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন খুলনা বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আমার দুটি ফিলিং স্টেশনে স্বাভাবিক সময়ে প্রতিটিতে গড়ে তিন-চার হাজার লিটার তেল বিক্রি হলেও বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।’ দক্ষিণাঞ্চলের ১৩ জেলার ফিলিং স্টেশন ও এজেন্সি পয়েন্টে স্বাভাবিক দিনে ১৫ লাখ লিটার জ্বালানি তেল বিক্রি হয়। কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তা ছয়-সাত লাখ লিটারে নেমে এসেছে। আবার সেচ মৌসুম হওয়ায় কৃষকদেরও জ্বালানির চাহিদা বেড়েছে। অথচ সেই তুলনায় সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ব্যবসায়ী ও কৃষক উভয়েই বিপদের মধ্যে রয়েছে। মন্তব্য
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment