স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কোরআন খানী মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। দিনাজপুরের বিরল উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল কাশেম অরু স্মৃতি চারণ করে জানান, বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নে দক্ষিণ বহলাগ্রামে ৭১-এর ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পুরো গ্রামটিকে পিছু হটা পাকহানাদার বাহিনীর সদস্য ও রাজাকার আলবদরেরা ঘিরে ফেলে। তারা প্রস্তাব দেয় ওই গ্রামে পাক হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। পাক হানাদার বাহিনীর এই প্রস্তাবে গ্রামের মানুষ আপত্তি জানায়। ওই দিন মাগরিবের নামাজ শেষ করার সাথে সাথে হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোষররা গ্রামের মানুষকে সারিবদ্ধ করে ব্রাশফায়ার করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে ৪৩ জন নিরপরাধ মানুষ শহীদ হয়। সে সময় ভাগ্যের জোরে বেঁচে যান ওই গ্রামের আব্দুল গনি (৬৩) ও পায়ে গুলিবিদ্ধ পঙ্গু আনিসুর রহমান (৬১)। শহীদদের মধ্যে আব্দুল গনির পরিবারের ২০ জনকে পাকহানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হয়েছে। শহীদ হয় ওই পরিবারের আব্দুল গনির পিতা তসির মোহাম্মদ, চাচা আব্দুল লতিফ, ইসাহাক আলী, জয়নাল আবেদীন, উমর আলী, রহিম উদ্দীন, মহসিন আলী, ভাই নুর মোহাম্মদ, চাচাতো ভাই সমির মোহাম্মদ, সফি মোহাম্মদ, বরকতুল্লাহ, গোলাম মোস্তফা, মনু মিয়া, ফুফাতো ভাই রহমতউল্লাহ মামাতো ভাই আকবার আলী, আমিন মোহাম্মদ, ভগ্নিপতি আব্দুস সাত্তার, ভাতিজা আব্দুল করিম ও দাদা বারেক মোহাম্মদ পাকসেনাদের গুলিতে ওই দিন শহীদ হয়েছিল। শহীদদের মধ্যে অপর ২৩ জন ওই গ্রামের অন্যান্য পরিবারের সদস্য ছিল। ঘটনার দিন বহলা গ্রামে পুরুষ বলতে রক্তমাখা অবস্থায় জীবিত ছিল একমাত্র আব্দুল গণি ও আনিসুর রহমান। পাক-হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা আর হত্যাযজ্ঞের স্বাক্ষর এই বহলা বধ্যভূমিতে আজও পড়ে আছে স্বাধীনচেতা মানুষের হাড়গড়-দেহাবশেষ। স্বামী ও স্বজন হারা অনেকেই আজও এই বধ্যভূমিতে খুঁজে ফিরে তাদের আপনজনদের। পাড়ি জমায় সেখানে। স্মৃতিতে এখনও অনেকে শিহরে ওঠে। আতংকিত হয় শহীদদের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। নরীহ গ্রামবাসীর উপর এ বর্বরোচিত হামলা আর হত্যাযজ্ঞের কারণ হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের পরাজয়। প্রতিহিংসার আগুন। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতারাও রক্ষা পায়নি তাদের হিংস থাবায়। পাক-হানাদার বাহিনীর গুলির নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে অলৌকিক ভাবে প্রাণে বেঁচে গেছে আব্দুল গনি ও আনিসুর। তারা জানান, গ্রামে পুরুষ সদস্য জীবিত না থাকায় ৩ দিন লাশগুলো ঘটনাস্থলে পড়েছিল। ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের বিকেলে পার্শ্ববর্তী গ্রামের লোকজন এসে পচনধরা লাশগুলো বহলা গ্রামের গণকবরের স্থানটিতে কয়েকটি গর্ত করে একসাথে গণকবর দেয়। ওই দিনের ঘটনায় পাকহানার বাহিনীর গুলিতে নিহত শহীদ সমির মোহাম্মদের স্ত্রী লতিফা বেওয়া (৬২), শহীদ বরকতুল্লার স্ত্রী জরিনা খাতুন (৬০) ও তসির মোহাম্মদের স্ত্রী আকলিমা বেওয়া (৬১)। তারা এখনও হাতরে ফিরে সেই দিনের স্মৃতি। বহলা গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন পালন করছে বিভিন্ন কর্মসূচী। শহীদ স্মৃতি সৌধে পুস্পস্তবক অর্পন, দোয়া খায়ের ও মিলাদ মাহফিলসহ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচী পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জেএ
Saturday, December 13, 2014
দিনাজপুরে বহলা গণহত্যা দিবস আজ:Time News
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কোরআন খানী মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। দিনাজপুরের বিরল উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল কাশেম অরু স্মৃতি চারণ করে জানান, বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নে দক্ষিণ বহলাগ্রামে ৭১-এর ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পুরো গ্রামটিকে পিছু হটা পাকহানাদার বাহিনীর সদস্য ও রাজাকার আলবদরেরা ঘিরে ফেলে। তারা প্রস্তাব দেয় ওই গ্রামে পাক হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। পাক হানাদার বাহিনীর এই প্রস্তাবে গ্রামের মানুষ আপত্তি জানায়। ওই দিন মাগরিবের নামাজ শেষ করার সাথে সাথে হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোষররা গ্রামের মানুষকে সারিবদ্ধ করে ব্রাশফায়ার করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে ৪৩ জন নিরপরাধ মানুষ শহীদ হয়। সে সময় ভাগ্যের জোরে বেঁচে যান ওই গ্রামের আব্দুল গনি (৬৩) ও পায়ে গুলিবিদ্ধ পঙ্গু আনিসুর রহমান (৬১)। শহীদদের মধ্যে আব্দুল গনির পরিবারের ২০ জনকে পাকহানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হয়েছে। শহীদ হয় ওই পরিবারের আব্দুল গনির পিতা তসির মোহাম্মদ, চাচা আব্দুল লতিফ, ইসাহাক আলী, জয়নাল আবেদীন, উমর আলী, রহিম উদ্দীন, মহসিন আলী, ভাই নুর মোহাম্মদ, চাচাতো ভাই সমির মোহাম্মদ, সফি মোহাম্মদ, বরকতুল্লাহ, গোলাম মোস্তফা, মনু মিয়া, ফুফাতো ভাই রহমতউল্লাহ মামাতো ভাই আকবার আলী, আমিন মোহাম্মদ, ভগ্নিপতি আব্দুস সাত্তার, ভাতিজা আব্দুল করিম ও দাদা বারেক মোহাম্মদ পাকসেনাদের গুলিতে ওই দিন শহীদ হয়েছিল। শহীদদের মধ্যে অপর ২৩ জন ওই গ্রামের অন্যান্য পরিবারের সদস্য ছিল। ঘটনার দিন বহলা গ্রামে পুরুষ বলতে রক্তমাখা অবস্থায় জীবিত ছিল একমাত্র আব্দুল গণি ও আনিসুর রহমান। পাক-হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা আর হত্যাযজ্ঞের স্বাক্ষর এই বহলা বধ্যভূমিতে আজও পড়ে আছে স্বাধীনচেতা মানুষের হাড়গড়-দেহাবশেষ। স্বামী ও স্বজন হারা অনেকেই আজও এই বধ্যভূমিতে খুঁজে ফিরে তাদের আপনজনদের। পাড়ি জমায় সেখানে। স্মৃতিতে এখনও অনেকে শিহরে ওঠে। আতংকিত হয় শহীদদের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। নরীহ গ্রামবাসীর উপর এ বর্বরোচিত হামলা আর হত্যাযজ্ঞের কারণ হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের পরাজয়। প্রতিহিংসার আগুন। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতারাও রক্ষা পায়নি তাদের হিংস থাবায়। পাক-হানাদার বাহিনীর গুলির নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে অলৌকিক ভাবে প্রাণে বেঁচে গেছে আব্দুল গনি ও আনিসুর। তারা জানান, গ্রামে পুরুষ সদস্য জীবিত না থাকায় ৩ দিন লাশগুলো ঘটনাস্থলে পড়েছিল। ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের বিকেলে পার্শ্ববর্তী গ্রামের লোকজন এসে পচনধরা লাশগুলো বহলা গ্রামের গণকবরের স্থানটিতে কয়েকটি গর্ত করে একসাথে গণকবর দেয়। ওই দিনের ঘটনায় পাকহানার বাহিনীর গুলিতে নিহত শহীদ সমির মোহাম্মদের স্ত্রী লতিফা বেওয়া (৬২), শহীদ বরকতুল্লার স্ত্রী জরিনা খাতুন (৬০) ও তসির মোহাম্মদের স্ত্রী আকলিমা বেওয়া (৬১)। তারা এখনও হাতরে ফিরে সেই দিনের স্মৃতি। বহলা গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আজ শনিবার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন পালন করছে বিভিন্ন কর্মসূচী। শহীদ স্মৃতি সৌধে পুস্পস্তবক অর্পন, দোয়া খায়ের ও মিলাদ মাহফিলসহ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচী পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জেএ
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment