তি বিনষ্টের কারণ হতে পারবে না। মানবাধিকার সব জায়গায় এবং সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এ অধিকার একই সাথে সহজাত ও আইনগত অধিকার। স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম দায়িত্ব হলো এসব অধিকার রক্ষণাবেক্ষণ করা। প্রতিবছরের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস হিসেবে পালিত হয়। ১৯৪৮ সাল থেকে জাতিসংঘের নির্দেশনায় বিশ্বের সকল দেশে এ দিবসটি ঘটা করে পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও বিভিন্ন সংগঠন ব্যাপক আয়োজন করে দিবসটি পালন করছে। দিবসটি প্রতিবছর সারা বিশ্বে যেভাবে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে উদযাপন করা হয়, সেভাবেই যদি আমরা আমরা এর সুফল দেখতে পেতাম তাহলে হয়তো মানবাধিকারের জন্য আর লড়াই করতে হতো না। দাবি ও তার বাস্তবায়নের মধ্যে বিস্তর ফারাক থেকে যাচ্ছে বলেই আজ সমগ্র বিশ্বে মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। ফিলিস্তিন, ইরাক, সিরিয়া, মিসর, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, কাশ্মির, মায়ানমার ও আমেরিকাসহ পুরো বিশ্বজুড়েই চলছে মানবাধিকারের চরম লংঘন। মানবাধিকার রক্ষার কথা বলে সারা বিশ্বে চলছে মানবাধিকার বাণিজ্য। যারা মানবাধিকার রক্ষার কথা বলছে তারাই আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে মানবাধিকারকে গলা টিপে হত্যা করছে। সারা বিশ্বের দিকে না তাকিয়ে শুধু নিজ ভূমের দিকে তাকালেও আমরা যা দেখতে পাই সেটা আমাদের শঙ্কা আরও বাড়িয়ে তোলে। হত্যা, গুম, খুন, নির্যাতনসহ নানা রকমের হয়রানিতে দেশের মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। সুদ, ঘুষ আর দুর্নীতিতে ভরে আছে দেশ। থমকে গেছে উন্নয়ন। এরই মাঝে চলছে মানবাধিকার ব্যবসা। মানবাধিকারের নামে চলছে অধিকার হরণের প্রতিযোগিতা। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনার একটাই উদ্দেশ্য ছিল আর তা হলো নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু স্বাধীনতার তেতাল্লিশ বছর পরে এসেও মেলেনি মানবতার মুক্তি। প্রতিষ্ঠিত হয়নি সার্বজনীন মানবাধিকার। মানবতা আজও ভূলুণ্ঠিত। এখনও মানুষকে লড়তে হচ্ছে তার অধিকারের জন্য। কোথায় আমাদের সাংবিধানিক অধিকার? কোথায় আমাদের গণতন্ত্র? সবই আজ ক্ষমতার হাতে বন্দি। সংবিধানে বর্ণিত আইনের দৃষ্টিতে সমতা, আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার, জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার রক্ষণ, সমাবেশের স্বাধীনতা, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকারসহ আরও অনেক কিছুর বাস্তবায়ন আজ প্রশ্নবিদ্ধ। মৌলিক অধিকার আর মানবাধিকার যাই বলি না কেন সবই আজ ক্ষমতাসীনদের স্বার্থের কাছে পরাভূত। বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে আছে তা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবেদনের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। দেশে পরিচালিত মানবধিকার সংগঠন অধিকারের তথ্য মতে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মাসে সারা দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ১৬২ জন। এর মধ্যে কথিত ক্রসফায়ারে মারা গেছেন ১১০ জন, নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের, গুলিতে নিহত হয়েছেন ৩৮ জন, পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে ৪ জনকে। গত ১১ মাসে ৩৭ ব্যক্তি গুমের শিকার হয়েছেন। যার মধ্যে গত এপ্রিল মাসেই গুম হয়েছেন ১৮ জন। চলতি বছরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর হাতে ৩৩ জন নিহত ও ৬১ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ৯৮ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন। জেল হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে ৫২ জনের। রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৮১ জন নিহত ও ৮ হাজার ৭৫২ জন আহত হয়েছেন। যৌতুক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২৩৭ জন নারী, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬১০ জন, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ২৬০ জন, এসিড সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৬৪ জন। গত এগার মাসে সারা দেশে গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা গেছেন ১১০ জন ব্যক্তি। অপর দিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী গত জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১৩৬ জন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে গ্রেফতার ছাড়া ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ৭০ জন, আর গ্রেফতারের পর ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ৪৮ জন। সারা দেশে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় ১৩৭ জন নিহত ও অন্তত ৭২০৪ জন আহত হয়েছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র-আসকের তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ৮২ জন গুমের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ২৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে ১০ জনকে। অপহরণের পর সাত জনকে র্যাব গ্রেফতার দেখিয়েছে, এক জনকে থানায় ও দু’জনকে কারাগারে পাওয়া গেছে। এই সময়ে সারা দেশে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন ৯৫ জন। জেল হেফাজতে মারা গেছেন ৪৪ জন। জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছেন ২৭ জন, আহত হয়েছেন ৫৪ জন, অপহরণের শিকার হয়েছেন ৯১ জন ও অপহরণের পর ফিরে এসেছেন ৪৮ জন। এসব ঘটনার পেছনের কারণ হিসেবে যেগুলোকে দায়ি করা যায় সেগুলো হচ্ছে- দুর্বল আইন ও পক্ষপাতদুষ্ট প্রয়োগ, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, দলীয়করণ, অপরিপক্ক গণতন্ত্র, ক্ষমতায় টিকে থাকা আর ক্ষমতা কুক্ষিগত করার হীন প্রতিযোগিতা, ব্যবসায়িক রাজনীতি, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সরকারী আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা, ঘুষ-দুর্নীতির ব্যাপকতা বৃদ্ধি। এই দুরবস্থা থেকে পরিত্রান চায় দেশবাসী। মানবাধিকার নিয়ে আর কোন খেলা দেখতে চাই না দেশের মানুষ। এআর
Wednesday, December 10, 2014
মানবাধিকার মানবাধিকার খেলা:Time News
মানবাধিকার মানবাধিকার খেলা আবদুর রহমান টাইম নিউজ বিডি, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৪ ১৫:০৭:৫১ প্রতিটি মানুষের জন্মগত কিছু অধিকার রয়েছে যা প্রায় পৃথিবীর সব জায়গাতেই স্বীকৃত। সদ্যজাত শিশুটিও তার জন্মগত অধিকারের পাশাপাশি কিছু অধিকার প্রাপ্ত হয় যা কালের আবর্তনে সমাজ, রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। মানবাধিকার প্রতিটি মানুষের এক ধরনের অধিকার যেটা তার জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য। তবে এ চর্চা অন্যের ক্ষতিসাধন ও প্রশান্
তি বিনষ্টের কারণ হতে পারবে না। মানবাধিকার সব জায়গায় এবং সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এ অধিকার একই সাথে সহজাত ও আইনগত অধিকার। স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম দায়িত্ব হলো এসব অধিকার রক্ষণাবেক্ষণ করা। প্রতিবছরের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস হিসেবে পালিত হয়। ১৯৪৮ সাল থেকে জাতিসংঘের নির্দেশনায় বিশ্বের সকল দেশে এ দিবসটি ঘটা করে পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও বিভিন্ন সংগঠন ব্যাপক আয়োজন করে দিবসটি পালন করছে। দিবসটি প্রতিবছর সারা বিশ্বে যেভাবে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে উদযাপন করা হয়, সেভাবেই যদি আমরা আমরা এর সুফল দেখতে পেতাম তাহলে হয়তো মানবাধিকারের জন্য আর লড়াই করতে হতো না। দাবি ও তার বাস্তবায়নের মধ্যে বিস্তর ফারাক থেকে যাচ্ছে বলেই আজ সমগ্র বিশ্বে মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। ফিলিস্তিন, ইরাক, সিরিয়া, মিসর, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, কাশ্মির, মায়ানমার ও আমেরিকাসহ পুরো বিশ্বজুড়েই চলছে মানবাধিকারের চরম লংঘন। মানবাধিকার রক্ষার কথা বলে সারা বিশ্বে চলছে মানবাধিকার বাণিজ্য। যারা মানবাধিকার রক্ষার কথা বলছে তারাই আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে মানবাধিকারকে গলা টিপে হত্যা করছে। সারা বিশ্বের দিকে না তাকিয়ে শুধু নিজ ভূমের দিকে তাকালেও আমরা যা দেখতে পাই সেটা আমাদের শঙ্কা আরও বাড়িয়ে তোলে। হত্যা, গুম, খুন, নির্যাতনসহ নানা রকমের হয়রানিতে দেশের মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। সুদ, ঘুষ আর দুর্নীতিতে ভরে আছে দেশ। থমকে গেছে উন্নয়ন। এরই মাঝে চলছে মানবাধিকার ব্যবসা। মানবাধিকারের নামে চলছে অধিকার হরণের প্রতিযোগিতা। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনার একটাই উদ্দেশ্য ছিল আর তা হলো নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু স্বাধীনতার তেতাল্লিশ বছর পরে এসেও মেলেনি মানবতার মুক্তি। প্রতিষ্ঠিত হয়নি সার্বজনীন মানবাধিকার। মানবতা আজও ভূলুণ্ঠিত। এখনও মানুষকে লড়তে হচ্ছে তার অধিকারের জন্য। কোথায় আমাদের সাংবিধানিক অধিকার? কোথায় আমাদের গণতন্ত্র? সবই আজ ক্ষমতার হাতে বন্দি। সংবিধানে বর্ণিত আইনের দৃষ্টিতে সমতা, আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার, জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার রক্ষণ, সমাবেশের স্বাধীনতা, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকারসহ আরও অনেক কিছুর বাস্তবায়ন আজ প্রশ্নবিদ্ধ। মৌলিক অধিকার আর মানবাধিকার যাই বলি না কেন সবই আজ ক্ষমতাসীনদের স্বার্থের কাছে পরাভূত। বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে আছে তা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবেদনের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। দেশে পরিচালিত মানবধিকার সংগঠন অধিকারের তথ্য মতে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মাসে সারা দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ১৬২ জন। এর মধ্যে কথিত ক্রসফায়ারে মারা গেছেন ১১০ জন, নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের, গুলিতে নিহত হয়েছেন ৩৮ জন, পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে ৪ জনকে। গত ১১ মাসে ৩৭ ব্যক্তি গুমের শিকার হয়েছেন। যার মধ্যে গত এপ্রিল মাসেই গুম হয়েছেন ১৮ জন। চলতি বছরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর হাতে ৩৩ জন নিহত ও ৬১ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ৯৮ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন। জেল হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে ৫২ জনের। রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৮১ জন নিহত ও ৮ হাজার ৭৫২ জন আহত হয়েছেন। যৌতুক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২৩৭ জন নারী, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬১০ জন, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ২৬০ জন, এসিড সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৬৪ জন। গত এগার মাসে সারা দেশে গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা গেছেন ১১০ জন ব্যক্তি। অপর দিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী গত জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১৩৬ জন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে গ্রেফতার ছাড়া ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ৭০ জন, আর গ্রেফতারের পর ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ৪৮ জন। সারা দেশে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় ১৩৭ জন নিহত ও অন্তত ৭২০৪ জন আহত হয়েছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র-আসকের তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ৮২ জন গুমের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ২৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে ১০ জনকে। অপহরণের পর সাত জনকে র্যাব গ্রেফতার দেখিয়েছে, এক জনকে থানায় ও দু’জনকে কারাগারে পাওয়া গেছে। এই সময়ে সারা দেশে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন ৯৫ জন। জেল হেফাজতে মারা গেছেন ৪৪ জন। জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছেন ২৭ জন, আহত হয়েছেন ৫৪ জন, অপহরণের শিকার হয়েছেন ৯১ জন ও অপহরণের পর ফিরে এসেছেন ৪৮ জন। এসব ঘটনার পেছনের কারণ হিসেবে যেগুলোকে দায়ি করা যায় সেগুলো হচ্ছে- দুর্বল আইন ও পক্ষপাতদুষ্ট প্রয়োগ, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, দলীয়করণ, অপরিপক্ক গণতন্ত্র, ক্ষমতায় টিকে থাকা আর ক্ষমতা কুক্ষিগত করার হীন প্রতিযোগিতা, ব্যবসায়িক রাজনীতি, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সরকারী আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা, ঘুষ-দুর্নীতির ব্যাপকতা বৃদ্ধি। এই দুরবস্থা থেকে পরিত্রান চায় দেশবাসী। মানবাধিকার নিয়ে আর কোন খেলা দেখতে চাই না দেশের মানুষ। এআর
তি বিনষ্টের কারণ হতে পারবে না। মানবাধিকার সব জায়গায় এবং সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এ অধিকার একই সাথে সহজাত ও আইনগত অধিকার। স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম দায়িত্ব হলো এসব অধিকার রক্ষণাবেক্ষণ করা। প্রতিবছরের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস হিসেবে পালিত হয়। ১৯৪৮ সাল থেকে জাতিসংঘের নির্দেশনায় বিশ্বের সকল দেশে এ দিবসটি ঘটা করে পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও বিভিন্ন সংগঠন ব্যাপক আয়োজন করে দিবসটি পালন করছে। দিবসটি প্রতিবছর সারা বিশ্বে যেভাবে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে উদযাপন করা হয়, সেভাবেই যদি আমরা আমরা এর সুফল দেখতে পেতাম তাহলে হয়তো মানবাধিকারের জন্য আর লড়াই করতে হতো না। দাবি ও তার বাস্তবায়নের মধ্যে বিস্তর ফারাক থেকে যাচ্ছে বলেই আজ সমগ্র বিশ্বে মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। ফিলিস্তিন, ইরাক, সিরিয়া, মিসর, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, কাশ্মির, মায়ানমার ও আমেরিকাসহ পুরো বিশ্বজুড়েই চলছে মানবাধিকারের চরম লংঘন। মানবাধিকার রক্ষার কথা বলে সারা বিশ্বে চলছে মানবাধিকার বাণিজ্য। যারা মানবাধিকার রক্ষার কথা বলছে তারাই আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে মানবাধিকারকে গলা টিপে হত্যা করছে। সারা বিশ্বের দিকে না তাকিয়ে শুধু নিজ ভূমের দিকে তাকালেও আমরা যা দেখতে পাই সেটা আমাদের শঙ্কা আরও বাড়িয়ে তোলে। হত্যা, গুম, খুন, নির্যাতনসহ নানা রকমের হয়রানিতে দেশের মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। সুদ, ঘুষ আর দুর্নীতিতে ভরে আছে দেশ। থমকে গেছে উন্নয়ন। এরই মাঝে চলছে মানবাধিকার ব্যবসা। মানবাধিকারের নামে চলছে অধিকার হরণের প্রতিযোগিতা। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনার একটাই উদ্দেশ্য ছিল আর তা হলো নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু স্বাধীনতার তেতাল্লিশ বছর পরে এসেও মেলেনি মানবতার মুক্তি। প্রতিষ্ঠিত হয়নি সার্বজনীন মানবাধিকার। মানবতা আজও ভূলুণ্ঠিত। এখনও মানুষকে লড়তে হচ্ছে তার অধিকারের জন্য। কোথায় আমাদের সাংবিধানিক অধিকার? কোথায় আমাদের গণতন্ত্র? সবই আজ ক্ষমতার হাতে বন্দি। সংবিধানে বর্ণিত আইনের দৃষ্টিতে সমতা, আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার, জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার রক্ষণ, সমাবেশের স্বাধীনতা, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকারসহ আরও অনেক কিছুর বাস্তবায়ন আজ প্রশ্নবিদ্ধ। মৌলিক অধিকার আর মানবাধিকার যাই বলি না কেন সবই আজ ক্ষমতাসীনদের স্বার্থের কাছে পরাভূত। বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে আছে তা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবেদনের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। দেশে পরিচালিত মানবধিকার সংগঠন অধিকারের তথ্য মতে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মাসে সারা দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ১৬২ জন। এর মধ্যে কথিত ক্রসফায়ারে মারা গেছেন ১১০ জন, নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের, গুলিতে নিহত হয়েছেন ৩৮ জন, পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে ৪ জনকে। গত ১১ মাসে ৩৭ ব্যক্তি গুমের শিকার হয়েছেন। যার মধ্যে গত এপ্রিল মাসেই গুম হয়েছেন ১৮ জন। চলতি বছরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর হাতে ৩৩ জন নিহত ও ৬১ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ৯৮ জন অপহরণের শিকার হয়েছেন। জেল হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে ৫২ জনের। রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৮১ জন নিহত ও ৮ হাজার ৭৫২ জন আহত হয়েছেন। যৌতুক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২৩৭ জন নারী, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৬১০ জন, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ২৬০ জন, এসিড সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৬৪ জন। গত এগার মাসে সারা দেশে গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা গেছেন ১১০ জন ব্যক্তি। অপর দিকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী গত জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১৩৬ জন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে গ্রেফতার ছাড়া ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ৭০ জন, আর গ্রেফতারের পর ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ৪৮ জন। সারা দেশে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় ১৩৭ জন নিহত ও অন্তত ৭২০৪ জন আহত হয়েছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র-আসকের তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ৮২ জন গুমের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ২৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে ১০ জনকে। অপহরণের পর সাত জনকে র্যাব গ্রেফতার দেখিয়েছে, এক জনকে থানায় ও দু’জনকে কারাগারে পাওয়া গেছে। এই সময়ে সারা দেশে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন ৯৫ জন। জেল হেফাজতে মারা গেছেন ৪৪ জন। জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছেন ২৭ জন, আহত হয়েছেন ৫৪ জন, অপহরণের শিকার হয়েছেন ৯১ জন ও অপহরণের পর ফিরে এসেছেন ৪৮ জন। এসব ঘটনার পেছনের কারণ হিসেবে যেগুলোকে দায়ি করা যায় সেগুলো হচ্ছে- দুর্বল আইন ও পক্ষপাতদুষ্ট প্রয়োগ, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, দলীয়করণ, অপরিপক্ক গণতন্ত্র, ক্ষমতায় টিকে থাকা আর ক্ষমতা কুক্ষিগত করার হীন প্রতিযোগিতা, ব্যবসায়িক রাজনীতি, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সরকারী আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা, ঘুষ-দুর্নীতির ব্যাপকতা বৃদ্ধি। এই দুরবস্থা থেকে পরিত্রান চায় দেশবাসী। মানবাধিকার নিয়ে আর কোন খেলা দেখতে চাই না দেশের মানুষ। এআর
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment