ছে। হরতাল-আন্দোলন বা আগের বছরের মতো রাজনৈতিক হানাহানি অনেকটা নেই বললেই চলে। তারপরও দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন মানবাধিকারকর্মীরা। আগের বছরগুলোর তুলনায় মানুষ গুম-খুন ও নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা বেড়ে যাওয়া, এসব ঘটনা সরকারের অস্বীকার করার প্রবণতা, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগের কার্যকর তদন্ত না করা, নাগরিকদের মত প্রকাশ ও সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আজ ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। দেশীয় মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান ঘেঁটে গুম-অপহরণের উদ্বেগজনক চিত্র পাওয়া গেছে। পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত আট বছরের মধ্যে চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে এ ধরনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে। এ সময়ে দেশে ৮২ ব্যক্তি গুম-অপহরণের শিকার হয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে এসব ব্যক্তিকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে তাঁদের স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন। পরে এদের মধ্যে ২৩ জনের লাশ পাওয়া গেছে। ১০ জন ছাড়া পেয়েছেন। সাতজনকে গ্রেপ্তারের খবর পরে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তিনজনকে পরে থানায় ও কারাগারে পাওয়া গেছে। বাকি ৩৯ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন, ভুক্তভোগী পরিবার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এসব ঘটনায় রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে দায়ী করলেও সরকার বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে। এ ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তা ব্যক্তিদের বক্তব্য একই রকম। তাদের দাবি, নিখোঁজ ব্যক্তিদের অনেকে বিভিন্ন মামলার আসামি। গ্রেপ্তার এড়াতে তারা পালিয়ে আছেন। সরকার অস্বীকার করলেও নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় র্যা বের ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তাসহ ১৬ জন জড়িত থাকার কথা প্রকাশ পাওয়ার পর গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে। এ বিষয়ে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, এখন দেশে আইনের শাসনের যে দুর্বলতা, তাতে মানবাধিকার পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান আইনের তোয়াক্কা করছে না। জবাবদিহি খুবই নাজুক। এজন্য মানবাধিকার পরিস্থিতি ভীষণ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, সংখ্যালঘু নির্যাতন এরই প্রতিফলন। আসকের পরিসংখ্যান বলছে, এই গুম-খুন ও অপহরণের ঘটনা থেকে সরকারি দলের লোকজনও রেহাই পাচ্ছে না। এ বছরের ৮২ ভুক্তভোগীর মধ্যে ১১ জন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। অন্যদের মধ্যে ১৮ জন বিএনপির, তিনজন জামায়াতে ইসলামীর, ১১ জন ব্যবসায়ী, আটজন চাকরিজীবী, তিনজন ছাত্র, দুজন শিক্ষক, একজন আইনজীবী, দুজন কৃষক, একজন অটোরিকশাচালক, একজন টোল আদায়কারী এবং পৌর কাউন্সিলর ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য দুজন। বাকি ১৯ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এর আগে ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালে গুম-অপহরণের শিকার হয়েছিলেন ২১ জন। ২০১০-এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪ জন, যাদের মধ্যে ছয়জন পরে ছাড়া পেয়েছিলেন ও একজনকে পুলিশে দেওয়া হয়েছিল। পরে ছয়জনের লাশ পাওয়া যায়। এছাড়া ৩১ জনের কোনো খোঁজ মেলেনি। ২০১১ সালে গুম-অপহরণ হন ৫৯ জন। তাদের মধ্যে ১৬ জনের লাশ উদ্ধার হলেও ৩৯ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। চারজন পরে ছাড়া পান। ২০১২ সালে এ সংখ্যা ছিল ৫৬। যাদের মধ্যে আটজন পরে ছাড়া পান, চারজনের লাশ পাওয়া যায়। ১০ জনকে পুলিশ হেফাজতে ও কারাগারে পাওয়া যায়। ৩৪ জন এখনো নিখোঁজ। ২০১৩ সালে গুমের শিকার হন ৭৬ জন। এদের মধ্যে ২৩ জনের লাশ পরে পাওয়া গেছে। অন্যরা এখনো নিখোঁজ। এ ছাড়া গত এক দশকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কথিত ‘ক্রসফায়ার’, ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘এনকাউন্টারের’ ঘটনায় ও হেফাজতে নিহতের সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি। একইভাবে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে মারা গেছেন ১৩৬ জন। এসব মৃত্যুর ঘটনাকে বিচারবহির্ভূত হত্যা হিসেবে উল্লেখ করেছে আসক। বিচারবহির্ভূত হত্যার সর্বশেষ বড় অভিযোগ উঠেছে খুলনার পাইকগাছার জিরবুনিয়া গ্রামে পুলিশের বিরুদ্ধে। গত ৫ অক্টোবর সেখানে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে একসঙ্গে ১৩ জন নিহত হন। পুলিশের দাবি, নিহত ব্যক্তিদের সবাই সুন্দরবনের দস্যু। তবে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের দাবি, স্থানীয় মানুষের সহায়তায় পুলিশ তাদের পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে। অন্যান্য বিচারবহির্ভূত হত্যার মতো এ ঘটনায়ও সরকার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। নেয়নি নিরপেক্ষ তদন্তের উদ্যোগ। অবশ্য মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির কথা মানতে রাজি নন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, ‘দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে, ‘এটা একদম বাজে কথা। মানবাধিকারকর্মীরা খামোকাই এ গৎবাঁধা কথা বলেন।’ তার দাবি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তারা যাচাই করে দেখেন। বেশির ভাগ অভিযোগই সত্য নয়। ফলে সরকারের করার কিছু থাকে না। তবে সত্য ঘটনার ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। সরকারের এই অস্বীকার করার প্রবণতার কারণে মানবাধিকার পরিস্থিতি এত উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মনে করেন আসকের পরিচালক মো. নূর খান। তিনি বলেন, গুম-অপহরণের অনেক ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার, মানবাধিকার সংগঠন ও গণমাধ্যম সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করার পরও কার্যকর তদন্ত হয়নি। রাস্তা থেকে, ঘর থেকে মানুষকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। কোথাও প্রতিকার পাচ্ছে না মানুষ। সর্বত্র ভীষণ ভয়ের আবহ তৈরি হয়েছে। নূর খান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে গুম-অপহরণসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য একটা স্বাধীন কমিশন গঠন করার দাবি জানান। এ দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কী দরকার? আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভয়ানক সক্রিয়।’ মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, শুধু গুম-খুনই নয়, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও বিরোধী দলের সভা-সমাবেশের অধিকারও অনেক সংকুচিত হয়ে এসেছে। বিরোধী দলের ওপর মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ হচ্ছে। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর পরিচালক এস এম নাসির উদ্দিন বলেন, দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে গুম-খুনের বাইরে নতুন যুক্ত হয়েছে ৭৪-এর বিশেষ ক্ষমতা আইনের প্রয়োগ, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের অপব্যবহার। ১ ডিসেম্বর বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। এর মাধ্যমে এনজিওসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোকেও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একইভাবে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে শঙ্কিত গণমাধ্যমকর্মীরা। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে মানুষকে গ্রেপ্তারের পর হেফাজতে নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি ও মানুষকে ধরে পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে শৃঙ্খলা অমান্য করার উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে। গত বছর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, কখনো কখনো এ বাহিনীর ওপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। শাহদীন মালিকের মতে, জনপ্রিয়তা ও জনসমর্থন যখন কম থাকে, তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর সরকারের নির্ভরতা বাড়ে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভরতা বাড়লে তারা যদি আইনের বাইরেও কাজ করে, তখন সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এ কারণেই বর্তমানে দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির এ অবস্থা। মন্তব্য
Wednesday, December 10, 2014
মানবাধিবার পরিস্থিতি ৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ:RTNN
বিশ্ব মানবাধিকার দিবস আজ মানবাধিবার পরিস্থিতি ৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ নিজস্ব প্রতিবেদক আরটিএনএন ঢাকা: উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি। এখনও দিন-দুপুরে হরহামেশা গুম-খুনের শিকার হচ্ছেন মানুষ। বছরের পর বছর ধরে যারা গুম হয়ে আছেন তাদের উদ্ধারে কোন তৎপরতা নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দৃশ্যত স্থিতিশীল রয়ে
ছে। হরতাল-আন্দোলন বা আগের বছরের মতো রাজনৈতিক হানাহানি অনেকটা নেই বললেই চলে। তারপরও দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন মানবাধিকারকর্মীরা। আগের বছরগুলোর তুলনায় মানুষ গুম-খুন ও নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা বেড়ে যাওয়া, এসব ঘটনা সরকারের অস্বীকার করার প্রবণতা, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগের কার্যকর তদন্ত না করা, নাগরিকদের মত প্রকাশ ও সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আজ ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। দেশীয় মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান ঘেঁটে গুম-অপহরণের উদ্বেগজনক চিত্র পাওয়া গেছে। পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত আট বছরের মধ্যে চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে এ ধরনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে। এ সময়ে দেশে ৮২ ব্যক্তি গুম-অপহরণের শিকার হয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে এসব ব্যক্তিকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে তাঁদের স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন। পরে এদের মধ্যে ২৩ জনের লাশ পাওয়া গেছে। ১০ জন ছাড়া পেয়েছেন। সাতজনকে গ্রেপ্তারের খবর পরে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তিনজনকে পরে থানায় ও কারাগারে পাওয়া গেছে। বাকি ৩৯ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন, ভুক্তভোগী পরিবার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এসব ঘটনায় রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে দায়ী করলেও সরকার বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে। এ ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তা ব্যক্তিদের বক্তব্য একই রকম। তাদের দাবি, নিখোঁজ ব্যক্তিদের অনেকে বিভিন্ন মামলার আসামি। গ্রেপ্তার এড়াতে তারা পালিয়ে আছেন। সরকার অস্বীকার করলেও নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় র্যা বের ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তাসহ ১৬ জন জড়িত থাকার কথা প্রকাশ পাওয়ার পর গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে। এ বিষয়ে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, এখন দেশে আইনের শাসনের যে দুর্বলতা, তাতে মানবাধিকার পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান আইনের তোয়াক্কা করছে না। জবাবদিহি খুবই নাজুক। এজন্য মানবাধিকার পরিস্থিতি ভীষণ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, সংখ্যালঘু নির্যাতন এরই প্রতিফলন। আসকের পরিসংখ্যান বলছে, এই গুম-খুন ও অপহরণের ঘটনা থেকে সরকারি দলের লোকজনও রেহাই পাচ্ছে না। এ বছরের ৮২ ভুক্তভোগীর মধ্যে ১১ জন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। অন্যদের মধ্যে ১৮ জন বিএনপির, তিনজন জামায়াতে ইসলামীর, ১১ জন ব্যবসায়ী, আটজন চাকরিজীবী, তিনজন ছাত্র, দুজন শিক্ষক, একজন আইনজীবী, দুজন কৃষক, একজন অটোরিকশাচালক, একজন টোল আদায়কারী এবং পৌর কাউন্সিলর ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য দুজন। বাকি ১৯ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এর আগে ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালে গুম-অপহরণের শিকার হয়েছিলেন ২১ জন। ২০১০-এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪ জন, যাদের মধ্যে ছয়জন পরে ছাড়া পেয়েছিলেন ও একজনকে পুলিশে দেওয়া হয়েছিল। পরে ছয়জনের লাশ পাওয়া যায়। এছাড়া ৩১ জনের কোনো খোঁজ মেলেনি। ২০১১ সালে গুম-অপহরণ হন ৫৯ জন। তাদের মধ্যে ১৬ জনের লাশ উদ্ধার হলেও ৩৯ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। চারজন পরে ছাড়া পান। ২০১২ সালে এ সংখ্যা ছিল ৫৬। যাদের মধ্যে আটজন পরে ছাড়া পান, চারজনের লাশ পাওয়া যায়। ১০ জনকে পুলিশ হেফাজতে ও কারাগারে পাওয়া যায়। ৩৪ জন এখনো নিখোঁজ। ২০১৩ সালে গুমের শিকার হন ৭৬ জন। এদের মধ্যে ২৩ জনের লাশ পরে পাওয়া গেছে। অন্যরা এখনো নিখোঁজ। এ ছাড়া গত এক দশকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কথিত ‘ক্রসফায়ার’, ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘এনকাউন্টারের’ ঘটনায় ও হেফাজতে নিহতের সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি। একইভাবে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে মারা গেছেন ১৩৬ জন। এসব মৃত্যুর ঘটনাকে বিচারবহির্ভূত হত্যা হিসেবে উল্লেখ করেছে আসক। বিচারবহির্ভূত হত্যার সর্বশেষ বড় অভিযোগ উঠেছে খুলনার পাইকগাছার জিরবুনিয়া গ্রামে পুলিশের বিরুদ্ধে। গত ৫ অক্টোবর সেখানে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে একসঙ্গে ১৩ জন নিহত হন। পুলিশের দাবি, নিহত ব্যক্তিদের সবাই সুন্দরবনের দস্যু। তবে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের দাবি, স্থানীয় মানুষের সহায়তায় পুলিশ তাদের পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে। অন্যান্য বিচারবহির্ভূত হত্যার মতো এ ঘটনায়ও সরকার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। নেয়নি নিরপেক্ষ তদন্তের উদ্যোগ। অবশ্য মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির কথা মানতে রাজি নন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, ‘দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে, ‘এটা একদম বাজে কথা। মানবাধিকারকর্মীরা খামোকাই এ গৎবাঁধা কথা বলেন।’ তার দাবি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তারা যাচাই করে দেখেন। বেশির ভাগ অভিযোগই সত্য নয়। ফলে সরকারের করার কিছু থাকে না। তবে সত্য ঘটনার ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। সরকারের এই অস্বীকার করার প্রবণতার কারণে মানবাধিকার পরিস্থিতি এত উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মনে করেন আসকের পরিচালক মো. নূর খান। তিনি বলেন, গুম-অপহরণের অনেক ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার, মানবাধিকার সংগঠন ও গণমাধ্যম সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করার পরও কার্যকর তদন্ত হয়নি। রাস্তা থেকে, ঘর থেকে মানুষকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। কোথাও প্রতিকার পাচ্ছে না মানুষ। সর্বত্র ভীষণ ভয়ের আবহ তৈরি হয়েছে। নূর খান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে গুম-অপহরণসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য একটা স্বাধীন কমিশন গঠন করার দাবি জানান। এ দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কী দরকার? আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভয়ানক সক্রিয়।’ মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, শুধু গুম-খুনই নয়, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও বিরোধী দলের সভা-সমাবেশের অধিকারও অনেক সংকুচিত হয়ে এসেছে। বিরোধী দলের ওপর মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ হচ্ছে। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর পরিচালক এস এম নাসির উদ্দিন বলেন, দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে গুম-খুনের বাইরে নতুন যুক্ত হয়েছে ৭৪-এর বিশেষ ক্ষমতা আইনের প্রয়োগ, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের অপব্যবহার। ১ ডিসেম্বর বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। এর মাধ্যমে এনজিওসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোকেও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একইভাবে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে শঙ্কিত গণমাধ্যমকর্মীরা। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে মানুষকে গ্রেপ্তারের পর হেফাজতে নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি ও মানুষকে ধরে পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে শৃঙ্খলা অমান্য করার উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে। গত বছর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, কখনো কখনো এ বাহিনীর ওপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। শাহদীন মালিকের মতে, জনপ্রিয়তা ও জনসমর্থন যখন কম থাকে, তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর সরকারের নির্ভরতা বাড়ে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভরতা বাড়লে তারা যদি আইনের বাইরেও কাজ করে, তখন সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এ কারণেই বর্তমানে দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির এ অবস্থা। মন্তব্য
ছে। হরতাল-আন্দোলন বা আগের বছরের মতো রাজনৈতিক হানাহানি অনেকটা নেই বললেই চলে। তারপরও দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন মানবাধিকারকর্মীরা। আগের বছরগুলোর তুলনায় মানুষ গুম-খুন ও নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা বেড়ে যাওয়া, এসব ঘটনা সরকারের অস্বীকার করার প্রবণতা, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগের কার্যকর তদন্ত না করা, নাগরিকদের মত প্রকাশ ও সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আজ ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। দেশীয় মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান ঘেঁটে গুম-অপহরণের উদ্বেগজনক চিত্র পাওয়া গেছে। পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত আট বছরের মধ্যে চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে এ ধরনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে। এ সময়ে দেশে ৮২ ব্যক্তি গুম-অপহরণের শিকার হয়েছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে এসব ব্যক্তিকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে তাঁদের স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন। পরে এদের মধ্যে ২৩ জনের লাশ পাওয়া গেছে। ১০ জন ছাড়া পেয়েছেন। সাতজনকে গ্রেপ্তারের খবর পরে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তিনজনকে পরে থানায় ও কারাগারে পাওয়া গেছে। বাকি ৩৯ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন, ভুক্তভোগী পরিবার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এসব ঘটনায় রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে দায়ী করলেও সরকার বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে। এ ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তা ব্যক্তিদের বক্তব্য একই রকম। তাদের দাবি, নিখোঁজ ব্যক্তিদের অনেকে বিভিন্ন মামলার আসামি। গ্রেপ্তার এড়াতে তারা পালিয়ে আছেন। সরকার অস্বীকার করলেও নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় র্যা বের ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তাসহ ১৬ জন জড়িত থাকার কথা প্রকাশ পাওয়ার পর গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে। এ বিষয়ে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, এখন দেশে আইনের শাসনের যে দুর্বলতা, তাতে মানবাধিকার পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান আইনের তোয়াক্কা করছে না। জবাবদিহি খুবই নাজুক। এজন্য মানবাধিকার পরিস্থিতি ভীষণ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, সংখ্যালঘু নির্যাতন এরই প্রতিফলন। আসকের পরিসংখ্যান বলছে, এই গুম-খুন ও অপহরণের ঘটনা থেকে সরকারি দলের লোকজনও রেহাই পাচ্ছে না। এ বছরের ৮২ ভুক্তভোগীর মধ্যে ১১ জন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। অন্যদের মধ্যে ১৮ জন বিএনপির, তিনজন জামায়াতে ইসলামীর, ১১ জন ব্যবসায়ী, আটজন চাকরিজীবী, তিনজন ছাত্র, দুজন শিক্ষক, একজন আইনজীবী, দুজন কৃষক, একজন অটোরিকশাচালক, একজন টোল আদায়কারী এবং পৌর কাউন্সিলর ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য দুজন। বাকি ১৯ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এর আগে ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালে গুম-অপহরণের শিকার হয়েছিলেন ২১ জন। ২০১০-এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪ জন, যাদের মধ্যে ছয়জন পরে ছাড়া পেয়েছিলেন ও একজনকে পুলিশে দেওয়া হয়েছিল। পরে ছয়জনের লাশ পাওয়া যায়। এছাড়া ৩১ জনের কোনো খোঁজ মেলেনি। ২০১১ সালে গুম-অপহরণ হন ৫৯ জন। তাদের মধ্যে ১৬ জনের লাশ উদ্ধার হলেও ৩৯ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। চারজন পরে ছাড়া পান। ২০১২ সালে এ সংখ্যা ছিল ৫৬। যাদের মধ্যে আটজন পরে ছাড়া পান, চারজনের লাশ পাওয়া যায়। ১০ জনকে পুলিশ হেফাজতে ও কারাগারে পাওয়া যায়। ৩৪ জন এখনো নিখোঁজ। ২০১৩ সালে গুমের শিকার হন ৭৬ জন। এদের মধ্যে ২৩ জনের লাশ পরে পাওয়া গেছে। অন্যরা এখনো নিখোঁজ। এ ছাড়া গত এক দশকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কথিত ‘ক্রসফায়ার’, ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘এনকাউন্টারের’ ঘটনায় ও হেফাজতে নিহতের সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি। একইভাবে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে মারা গেছেন ১৩৬ জন। এসব মৃত্যুর ঘটনাকে বিচারবহির্ভূত হত্যা হিসেবে উল্লেখ করেছে আসক। বিচারবহির্ভূত হত্যার সর্বশেষ বড় অভিযোগ উঠেছে খুলনার পাইকগাছার জিরবুনিয়া গ্রামে পুলিশের বিরুদ্ধে। গত ৫ অক্টোবর সেখানে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে একসঙ্গে ১৩ জন নিহত হন। পুলিশের দাবি, নিহত ব্যক্তিদের সবাই সুন্দরবনের দস্যু। তবে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের দাবি, স্থানীয় মানুষের সহায়তায় পুলিশ তাদের পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে। অন্যান্য বিচারবহির্ভূত হত্যার মতো এ ঘটনায়ও সরকার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। নেয়নি নিরপেক্ষ তদন্তের উদ্যোগ। অবশ্য মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির কথা মানতে রাজি নন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, ‘দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে, ‘এটা একদম বাজে কথা। মানবাধিকারকর্মীরা খামোকাই এ গৎবাঁধা কথা বলেন।’ তার দাবি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তারা যাচাই করে দেখেন। বেশির ভাগ অভিযোগই সত্য নয়। ফলে সরকারের করার কিছু থাকে না। তবে সত্য ঘটনার ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। সরকারের এই অস্বীকার করার প্রবণতার কারণে মানবাধিকার পরিস্থিতি এত উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মনে করেন আসকের পরিচালক মো. নূর খান। তিনি বলেন, গুম-অপহরণের অনেক ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার, মানবাধিকার সংগঠন ও গণমাধ্যম সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করার পরও কার্যকর তদন্ত হয়নি। রাস্তা থেকে, ঘর থেকে মানুষকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। কোথাও প্রতিকার পাচ্ছে না মানুষ। সর্বত্র ভীষণ ভয়ের আবহ তৈরি হয়েছে। নূর খান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে গুম-অপহরণসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্তের জন্য একটা স্বাধীন কমিশন গঠন করার দাবি জানান। এ দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘কী দরকার? আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভয়ানক সক্রিয়।’ মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, শুধু গুম-খুনই নয়, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও বিরোধী দলের সভা-সমাবেশের অধিকারও অনেক সংকুচিত হয়ে এসেছে। বিরোধী দলের ওপর মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ হচ্ছে। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন অধিকার-এর পরিচালক এস এম নাসির উদ্দিন বলেন, দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে গুম-খুনের বাইরে নতুন যুক্ত হয়েছে ৭৪-এর বিশেষ ক্ষমতা আইনের প্রয়োগ, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের অপব্যবহার। ১ ডিসেম্বর বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। এর মাধ্যমে এনজিওসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোকেও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একইভাবে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে শঙ্কিত গণমাধ্যমকর্মীরা। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে মানুষকে গ্রেপ্তারের পর হেফাজতে নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি ও মানুষকে ধরে পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে শৃঙ্খলা অমান্য করার উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে। গত বছর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, কখনো কখনো এ বাহিনীর ওপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। শাহদীন মালিকের মতে, জনপ্রিয়তা ও জনসমর্থন যখন কম থাকে, তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর সরকারের নির্ভরতা বাড়ে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভরতা বাড়লে তারা যদি আইনের বাইরেও কাজ করে, তখন সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এ কারণেই বর্তমানে দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির এ অবস্থা। মন্তব্য
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment