Sunday, December 21, 2014

৬৯% বাংলাদেশির মত, সরকার জনগণের কথা শোনে না:RTNN

৬৯% বাংলাদেশির মত, সরকার জনগণের কথা শোনে না নিউজ ডেস্ক আরটিএনএন ঢাকা: বাংলাদেশের রাজনীতি ‘দুষ্টচক্রে’ বন্দি বলা হলেও এই রাজনীতি নিয়েই বেশিসংখ্যক মানুষ চিন্তা করছেন। এদেশিদের মত বিশ্বের কোনো দেশের মানুষ এত বেশি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে না। তবে, এদেশের ৬৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন, সরকার তাদের কথায় কান দেয় না। দাবি-দাওয়াকে তোয়াক্কা করে না। যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণা সংস্থার জরিপে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে।
সেখানে দেখানো হয়েছে, রাজনীতিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষ এগিয়ে। পৃথিবীর ৩৩টি দেশের ওপর পরিচালিত গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৬৫ শতাংশ নাগরিক উচ্চমাত্রায় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে, যা ওই সব দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এ তালিকায় বাংলাদেশের পেছনে আছে ভারত। আর পাকিস্তানের জনগণের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ জরিপের আওতায় আসা দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন- রাজনৈতিক অংশগ্রহণের এ তিনটি মাত্রার মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ বাংলাদেশি বলেছে, তারা নিম্নহারে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। এদিক দিয়েও বাংলাদেশ শীর্ষে অর্থাৎ, রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে সবচেয়ে কম। জরিপে মানুষের রাজনীতি সক্রিয়তার কারণ সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শান্তনু মজুমদার মনে করেন, বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের এ উচ্চমাত্রায় অবাক হওয়ার কিছু নেই এবং এটি হঠাৎ করেও হয়নি। এ ভূখণ্ডের দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামের ঐতিহ্যের ফসল এটি। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভাগ্য খুব ভালো যে বাংলাদেশের মানুষ অনেক বেশি রাজনীতি সক্রিয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের উন্নতির মূল কারণই এই সক্রিয়তা। এটা না থাকলে সামরিক শাসনের দৌরাত্ম্যে পড়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির পরিবর্তে পাকিস্তানের মতো সেনা সংস্কৃতিই মান সংস্কৃতি হিসেবে দাঁড়িয়ে যেত।’ উচ্চমাত্রায় রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিলেও বাংলাদেশের মানুষের হতাশাজনক মনোভাবের আরেকটি দিক ফুটে উঠেছে ওই জরিপে। এতে অংশ নেওয়া ৬৯ শতাংশ বাংলাদেশি বলেছেন, সরকার তাদের কথায় কান দেয় না। অবশ্য এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৫তম। ৩৩টি দেশের মধ্যে ১৪টি দেশের নাগরিকরা বাংলাদেশবাসীর চেয়েও হতাশ। জরিপে অংশ নেওয়া ওই সব দেশের ৬৯ শতাংশের বেশি নাগরিক মনে করেন, সরকার তাদের কথার তোয়াক্কা করছে না। গত ১৭ মার্চ থেকে ৫ জুন পর্যন্ত ৩৩টি দেশের ৩৭,৬২০ জন নাগরিকের সম্মুখ সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে পিউ রিসার্চ সেন্টার। তবে ওয়েবসাইটে দেওয়া তাদের প্রতিবেদনের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের হার সূচকে ৩০টি দেশের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাদের দেশের জনগণের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের মাত্রা দেখানো হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ১৮ বছরের বেশি বয়সী এক হাজার উত্তরদাতাকে এ জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গত ১৮ ডিসেম্বর পিউ রিসার্চ সেন্টার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে মানুষের মনোভাব সম্পর্কিত তথ্যের সূত্র হিসেবে সংস্থাটি নিজেদের ‘গ্লোবাল অ্যাটিচ্যুড সার্ভে ২০১৪’-কে উল্লেখ করেছে। রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বলতে জরিপে ভোট দেওয়া, প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া, সংগঠিতভাবে প্রতিবাদ জানানো, রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় সদস্য হওয়া, শ্রমিক ধর্মঘটে অংশ নেওয়া, মতামত দিতে টেলিভিশন-রেডিওতে ফোন করা, অনলাইনে রাজনৈতিক সংবাদে মন্তব্য করা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাজনৈতিক সংবাদ ‘পোস্ট’ করা, অনলাইনে প্রতিবাদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে যাওয়া ইত্যাদিকে বোঝানো হয়েছে। রাজনীতিতে সক্রিয়তার হার অঞ্চল ভিত্তিতে মধ্যপ্রাচ্যে বেশি। ওই অঞ্চলের ছয়টি দেশের গড়ে ৫৩ শতাংশ নাগরিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় উচ্চমাত্রায় সক্রিয়। এর পরের অবস্থানে আছে আফ্রিকা, ওই অঞ্চলের ৪৪ শতাংশ মানুষ উচ্চমাত্রায় রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। এছাড়া লাতিন আমেরিকার ৩১ শতাংশ ও এশিয়ার ২৪ শতাংশ মানুষ উচ্চমাত্রায় রাজনীতি সক্রিয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সুযোগ দেশভেদে ভিন্ন। এটা নির্ভর করে নির্বাচনের সংখ্যা, নাগরিক সংগঠনের উন্নয়ন ও মতামত দেওয়ার জন্য মুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশের ওপর। প্রতিবেদনে এশিয়ার দেশগুলো সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ কোনো কারণে এশিয়ায় কম। কিন্তু সেখানে ৬৫ শতাংশ বাংলাদেশি বলেছেন, তারা উচ্চমাত্রায় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। অন্য এশিয়ান দেশগুলোতে এ হার কম। সবচেয়ে কম পাকিস্তানে। সেখানে মাত্র ১২ শতাংশ মানুষ উচ্চমাত্রায় রাজনীতি সক্রিয়।’ রাজনৈতিক সক্রিয়তার বিভিন্ন বিষয়ে জরিপে বেশ কিছু প্রশ্ন করা হয়েছিল। ওই সব প্রশ্নের উত্তরে ৭৮ শতাংশ বাংলাদেশি বলেছেন, তারা কোনো একটি নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন, ৪৮ শতাংশ প্রচার অভিযানে অংশ নিয়েছেন, ৩৭ শতাংশ সংগঠিত প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন, ৩২ শতাংশ কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের সদস্য, ২৪ শতাংশ টেলিভিশন বা রেডিওতে মতামত দেওয়ার জন্য ফোন করেছেন, ৩১ শতাংশ শ্রমিক ধর্মঘটে অংশ নিয়েছেন ও ২০ শতাংশ অনলাইনে রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য দিয়েছেন। তবে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও ফিলিপাইনের চেয়ে পিছিয়ে। ভারতের ৮৮ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ৮৯ শতাংশ ও থাইল্যান্ডের ৯৬ শতাংশ নাগরিক বলেছেন, তারা কোনো না কোনো নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে। পিউ রিসার্চের প্রশ্নের উত্তরে ৬৯ শতাংশ পাকিস্তানি নাগরিক বলেছেন, তারা কোনো একটি নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। তবে অন্য ক্ষেত্রে তাদের অংশগ্রহণ খুবই নিম্ন। মাত্র ১৩ শতাংশ নাগরিক কোনো প্রচার অভিযানে অংশ নিয়েছেন, ৭ শতাংশ সংগঠিত প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন, ৪ শতাংশ কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের সদস্য, এক শতাংশ টেলিভিশন বা রেডিওতে মতামত দেওয়ার জন্য ফোন করেছেন, ৬ শতাংশ শ্রমিক ধর্মঘটে অংশ নিয়েছেন ও এক শতাংশ অনলাইনে রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য দিয়েছেন। সরকার তোয়াক্কা করে না বিশ্বের প্রায় সব অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ মনে করে, সরকার তাদের কথা তোয়াক্কা করে না। পিউ রিসার্চের জরিপ অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্যে ৬৭ শতাংশ, আফ্রিকায় ৬৫ শতাংশ, লাতিন আমেরিকায় ৭৭ শতাংশ, এশিয়ায় ৫৫ শতাংশ ও পূর্ব ইউরোপে প্রায় ৭৬ শতাংশ নাগরিক মনে করে, তাদের প্রতিবাদে কাজ হয় না। এশিয়ায় এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চিত্র হতাশাজনক। বাংলাদেশের ৬৯ শতাংশ মানুষ মনে করে সরকার তাদের কথা শোনে না। পাকিস্তানের ৫৫ ও ভারতের ৫৪ শতাংশ মানুষ মনে করে সরকার তাদের কথায় কান দেয় না। মন্তব্য      


No comments:

Post a Comment