Saturday, November 29, 2014

স্বজন হারা আওয়ামী লীগ:Time News

স্বজন হারা আওয়ামী লীগ আহসান জাকির টাইম নিউজ বিডি, ২৮ নভেম্বর, ২০১৪ ১২:২৮:৩৫ এক এক করে ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের আপনজনরা হারিয়ে যাচ্ছেন। দুদিন আগেও যারা অতি ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তারাই যেনো এখন দলের জন্য বড় বোঝা।  কিন্তু কী কারণে অতি কাছের নেতারা এভাবে পর হয়ে যাচ্ছেন-বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে কোনো কোনো সময় বেফাঁস মন্তব্য করে দলটিকে বিপদে ফেলেছেন নেতারা। এমনকি ৫ জানুয়ারির ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনের পরও এ
মপি-মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতারা বেফাঁস মন্তব্য করে দল থেকে ছিটকে পড়েছেন। তবে দলকে বিপদে ফেলে বিদায় নিতে হয়েছে সবক্ষেত্রে এমনটি মানতে নারাজ সাবেক অনেক নেতা। তারা মনে করছেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শচ্যুতি ও দলটিকে অতিরিক্ত কমিউনিস্টকরণের কারণেও আওয়ামী লীগ ছেড়েছেন কেউ কেউ। সাবেক জনপ্রিয় নেতাদের অনেকেই শেষ জীবনে আওয়ামী লীগ করতে পারেননি। দলীর সূত্রের দাবি, নিজ দলের বিশ্বাসের বাইরে গিয়ে বই লেখা, হজ্জ ও তাবলীগকে নিয়ে কটূক্তি ও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ‘ম্যাকানিজম’ জনসমক্ষে প্রকাশ করে শেখ হাসিনার সরকারকে যারা বিতর্কিত ও বেকায়দায় ফেলে দিচ্ছেন তারাই মূলত ছিটকে পড়ছেন। আর দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আপনজনদের বিদায় জানানো ছাড়া কোনো উপায় দেখছে না হাইকমান্ড। এক্ষেত্রে দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে তাদেরকে দূরে থাকতে হচ্ছে। কারো ক্ষেত্রে দল থেকেই বের হয়ে যেতে হচ্ছে। এতে করে দীর্ঘদিনের মিত্ররা যেন দল থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন। তবে আপনজনদের হারানোর ঘটনা আওয়ামী লীগে নতুন নয়। দলটির অনেক জনপ্রিয় নেতাই এখন আর দলে নেই। হয়তো দল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে অথবা নিজেই বের হয়ে গেছেন। জানা গেছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে হজ্জ ও তবলীগ জামাতের মতো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘আমি কিন্তু হজ আর তবলীগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী, আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী, তবে তার চেয়েও হজ ও তবলীগ জামাতের বেশি বিরোধী, এই হজে যে কত ম্যানপাওয়ার নষ্ট হয়, হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গেছে, এদের কোনো কাম নেই, এদের কোনো প্রডাকশন নেই, শুধু রিডাকশন দিচ্ছে, শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে। গড়ে যদি বাংলাদেশ থেকে এক লাখ লোক হজে যায়, প্রত্যেকের পাঁচ লাখ টাকা করে পাঁচশ কোটি টাকা খরচ হয়।’ তার এমন মন্তব্যের পর দলের সভাপতিমণ্ডলীর জ্যেষ্ঠ সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী তাকে ‘মুখফোড়’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। তাকে অব্যাহতি দেয়া হয় বস্ত্র ও পাট এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে। পরে জরুরি বৈঠক ডেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যপদসহ প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও। ২৩ নভেম্বর রাতে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমানে ঢাকায় ফেরেন লতিফ সিদ্দকী৷ ২৫ নভেম্বর দুপরে লতিফ সিদ্দিকী নিজেই ধানমন্ডি থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন৷ পরে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে ধর্মীয় উসকানির এক মামলায় কারাগারে পাঠান আদালত। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯-২০১৩ মেয়াদের পরিকল্পনামন্ত্রী ও মুক্তিবাহিনীর উপপ্রধান একে খন্দকারের লেখা ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে তা নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হয়। বইয়ে তিনি লিখেছেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তার ভাষণ শেষ করেছিলেন ‘জয় পাকিস্তান’ বলে। আর সশস্ত্র যুদ্ধের কোনো প্রস্তুতি ছিল না রাজনৈতিক নেতৃত্বের। এ প্রসঙ্গে বিএনপি নেতারা বলছেন, একে খন্দকারের বইয়ের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন বক্তব্যের অসারতা প্রমাণিত হয়েছে। হঠাৎ করেই বই লিখে দলকে বিপাকে ফেলে দেয়ার পর ছিটকে পড়েন একে খন্দকার। আওয়ামী লীগের সিনিয়র সদস্য তোফায়েল আহমদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আমির হোসেন আমু, রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, জাসদের মইন উদ্দিন খান বাদল তাদের বক্তব্যে বলেন, ‘১৯৭১:ভেতরে-বাইরে’ বইয়ে একে খন্দকার ‘মিথ্যা, বিকৃত ও বিভ্রান্তিকর’ তথ্য দিয়েছেন। তারা তাকে ‘কুলাঙ্গার’, ‘অকৃতজ্ঞ’ ও ‘খন্দকার মোশতাকের অনুগত’ আখ্যায়িত করে বলেন, এসব বিকৃত তথ্যের মাধ্যমে তিনি সংবিধান অপমান করেছেন। হয়তো আইএসআই’র টাকায় তিনি এ কাজ করেছেন। এটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। সেজন্য তার বিচারের পাশাপাশি বইটি বাতিল করার জন্য তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষেদের সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বেফাঁস মন্তব্য করে দলকে আবার ফেলেছেন বিতর্কের মুখে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হোসেন তৌফিক (এইচটি) ইমাম বলেন, ‘নির্বাচনের সময় (৫ জানুয়ারির নির্বাচন) আমি তো প্রত্যেকটি উপজেলায় কথা বলেছি, সব জায়গায় আমাদের যারা রিক্রুটেড, তাদের সঙ্গে কথা বলে, তাদেরকে দিয়ে মোবাইল কোর্ট করিয়ে আমরা নির্বাচন করেছি। তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, বুক পেতে দিয়েছে।’ ওই সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমাদের লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে হবে। তার পরে ‘ভাইভাটা’ আমরা দেখবো।’ এইচটি ইমামের এমন বক্তব্যের পর দলের ভেতরে-বাইরে নানা গুঞ্জন শুরু হয়। দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, দায়িত্বশীল পদে থেকে এমন বক্তব্যে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে নতুন করে বির্তকের সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর মতোই তিনি দল ও সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছেন বলে তারা মনে করেন। দলটির একাধিক নেতা মনে করেন দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে এমন মন্তব্য করে মূলত বিরোধী দলের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া হচ্ছে। ওই মন্তব্যের পর এইচটি ইমামের কাছ থেকে দলের অনেক নেতাই দূরত্ব বজায় রাখছেন। এদিকে জীবনের শেষ সময়ে আওয়ামী লীগে যথাযথ মর্যাদা পাননি বা দল থেকে বের হয়ে গেছেন এমন নেতার সংখ্যাও কম নয়। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শামছুল হক। এই দুই নেতাই জীবনের শেষ দিনগুলোতে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেননি। অভিযোগ রয়েছে- জাতীয় চার নেতার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদও জীবনের শেষ সময়ে আওয়ামী লীগে যথাযথ মর্যাদা পাননি। বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনও নেই আওয়ামী লীগে। তিনি এখন গণফোরামের সভাপতি। এমনকি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিবাহিনীর অধিনায়ক এম এ জি ওসমানীও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জীবনের শেষ দিনগুলোতে সম্পৃক্ত থাকতে পারেননি। ১৯৭০ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ ও ডাকসুর ভিপি আ স ম আব্দুর রবও নেই আওয়ামী লীগে। তৎকালীন ডাকসুর জিএস আব্দুল কুদ্দুস মাখন মারা গেছেন। নূরে আলম সিদ্দিকী প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশন গড়েছেন। শাজাহান সিরাজ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আ স ম আব্দুর রব জেএসডির সভাপতি। ছাত্রলীগের মুক্তিযুদ্ধকালীন সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘এখন আমি কোন আওয়ামী লীগ করব। আওয়ামী লীগ তো এখন কমিউনিস্ট লীগ হয়ে গেছে। এই আওয়ামী লীগ তো আর জাতির পিতার আওয়ামী লীগ নেই।’ তিনি বলেন, ‘যে সব নেতা স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতার দাবি ৬ দফার বিরোধিতা করেছেন এবং স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর চামড়া ও হাড় দিয়ে ডুগডুগি বাজাতে চেয়েছেন, তারা এখন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী। আজ দুঃখ করে বলতে হয়, কর্নেল তাহের আর সিরাজ শিকদার বেঁচে থাকলে হাসিনা তাদেরও মন্ত্রী বানাতেন। তাহলে এই আওয়ামী লীগ করে আমাদের লাভ কী?’ ছাত্রলীগের জনপ্রিয় নেতা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন আওয়ামী লীগ ছেড়ে এখন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি ড. ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীও এখন আওয়ামী লীগে নেই। তিনি এখন পিডিপির চেয়ারম্যান। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে ১৯৮৯ সালে ছাত্রলীগের প্যানেলে প্রথম ডাকসুর (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ) ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। আওয়ামী লীগের কোথাও নেই মনসুর।  ‘৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব এখন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা। ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতার হত্যার পর যখন সারাদেশ শোকে স্তব্ধ, নিথর, নীরব; তখন পিতা হত্যার প্রতিবাদে ভিসুভিয়াসের আগ্নেয়গিরির লাভার মতো প্রতিবাদের মশাল হয়ে জ্বলে উঠেছিলেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, এক কাপড়ে গড়ে তুলেছিলেন সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগ্রাম। তার পর ১৬ বছর ভারতে নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে বাংলার মাটি যিনি পা দিয়ে না ছুঁয়ে চুমো দিয়েছিলেন, সেই নেতারও স্থান হয়নি আওয়ামী লীগে। ১৯৯৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগ ছেড়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গড়ে তোলেন। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুপন্থী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম প্রধানও নেই আওয়ামী লীগে। শেখ শহিদুল ইসলাম জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) মহাসচিব। আর শফিউল আলম প্রধান জাগপার সভাপতি।  ‘৭৫-পরবর্তী ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানও। আওয়ামী লীগ করতে পারেননি। তিনি এখন বিএনপির কিশোরগঞ্জ জেলার সভাপতি। এভাবে বহু নেতকেই দলের সম্পর্কে বেফাঁস মন্তব্য না করেও কোনো না কোনো কারণে ছাড়তে হয়েছে আওয়ামী লীগ। এখন দেখার বিষয় এর পর কে? জেএ    

No comments:

Post a Comment