Tuesday, November 25, 2014

সার্কে চরম সমন্বয়হীনতা; ঝুলে গেল বিদ্যুৎ চুক্তিও:Time News

সার্কে চরম সমন্বয়হীনতা; ঝুলে গেল বিদ্যুৎ চুক্তিও মো: কামরুজ্জামান, নেপালের কাঠমন্ডু থেকে টাইম নিউজ বিডি, ২৪ নভেম্বর, ২০১৪ ১৯:৩৬:৫৭ সকালে কিছুটা আশার আলো জাগলেও সন্ধ্যা নাগাদ তা আবার নিভে গেল। শেষ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তিটিও ঝুলে গেল। এই নিয়ে একে একে বহুল আলোচিত তিন চুক্তির সবকয়টিই ভেস্তে গেল। আজ (সোমবার) সন্ধ্যার পর এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিদ্যুৎ সহযোগিতা চুক্তির অনিশ্চয়তার এই সবশেষ হতা
শার খবরটি জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো: শহীদুল হক। তবে সোমবার সকালে কিছুটা আশার আলো জাগিয়ে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানিয়েছিলেন তিনটি চুক্তির দুটি স্বাক্ষরিত না হলেও শেষমেষ বিদ্যুৎ সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তিটি সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু নেপালের রাজধানী কাঠমন্ডুর হোটেল সল্টেতে দুই দিনের বৈঠক শেষে সোমবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, বিদ্যুৎ সহযোগিতা সংক্রান্ত যেই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল তা শেষ পর্যন্ত নাও হতে পারে। তবে, বিষয়টি আগামীকাল (মঙ্গলবার) সার্ক পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক ‘সার্ক কাউন্সিল অব মিনিস্টারস’-এ আলোচনার জন্য পেশ করা হবে। তাতে সত্যিকার অর্থে কোন ফল দাঁড়াবে কীনা-সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, তারা আশাবাদী পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এ বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হবে। এই আশাবাদ কতটা বাস্তবিক-জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব এই চুক্তি আদতে স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা যে খুবই ক্ষীন তা খোলামেলাভাবেই স্বীকার করেছেন। তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি। এর আগে, সোমবার সকালে সার্কভূক্ত আট দেশের পররাষ্ট্র সচিবদের অংশগ্রহণে দুই দিনের স্ট্যান্ডিং কমিটির দ্বিতীয় ও শেষ দিনের বৈঠক শুরুর পর পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছিলেন, শীর্ষ সম্মেলনে বিদ্যুৎ সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তার সাথে অনেকটা সুর মিলিয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মহাপরিচালক (দক্ষিণ এশিয়া ও সার্ক) নাফিস জাকারিয়াও বলেছিলেন, বিদ্যুৎ সহযোগিতা চুক্তি বিষয়ে তার দেশের সামান্য আপত্তি থাকলেও তার সমাধান হতে চলেছে। তাই এ চুক্তি হতে পারে। কিন্তু স্ট্যান্ডিং কমিটির দুই দিনের বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব সদস্যভূক্ত দেশগুলোর সমন্বয়হীনতার প্রতি ইঙ্গিত করে জানালেন, বিদ্যুৎ সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তিটিও না হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। শেষমেষ আলোচিত তিন চুক্তির অন্যতম বিদ্যুৎ সহযোগিতা চুক্তিটিও যে ঝুলে গেল এজন্য কোন কোন দেশ দায়ী- এমন এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, কয়েকটি দেশ তিনটি চুক্তির ব্যাপারেই একমত ছিল। কিন্তু দু’একটি দেশের ভূমিকার কারণে আলোচিত তিন চুক্তির সবগুলোই ঝুলে গেল। তবে এই দু’একটি দেশ কারা সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলেননি পররাষ্ট্র সচিব। অবশ্য সার্কভূক্ত আট দেশের যে কেউ এখন চাইলে বিদ্যুৎ খাতে অপর দেশে বিনিয়োগ করতে পারবে-এই মর্মে বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিবরা একমত হয়েছেন বলে জানালেন তিনি। অর্থাৎ সব মিলিয়ে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক)-এর শীর্ষ সম্মেলনে যেই বহুল আলোচিত তিন চুক্তি নিয়ে সদস্য দেশগুলো খুব উৎফুল্ল ছিল তার কেনটিই হচ্ছে না। বাকী যেই দুই চুক্তি না হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ তার মধ্যে রয়েছে সার্ক সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য আঞ্চলিক রেল সহযোগিতা চুক্তি এবং সার্ক পণ্য ও যাত্রীবাহী মোটরযান চলাচল বিষয়ক চুক্তি । এই পরিস্থিতিতে এবারের ১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের অর্জন তাহলে কী? আর দক্ষিণ এশিয়ার এই সর্বোচ্চ ফোরামের সাফল্যই বা কতটুকু? সাংবাদিকদের এ ধরণের একাধিক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, যেহেতু এখনো আমরা একত্রে বসছি, আলোচনা করছি-তাই এখনই হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এদিকে, সার্কের স্থায়ী সদস্য হওয়ার ব্যাপারে চীনের আগ্রহ এবং বিশেষজ্ঞদের ইতিবাচক মন্তব্যের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিবদের বৈঠকে কিছু আলোচনা হয়েছে কীনা-এমন এক প্রশ্নের জবাবে সচিব জানান, নয়টি অবজারভার বা পর্যবেক্ষক দেশের বিষয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা এই মর্মে একমত হয়েছি যে, চীন-জাপানসহ পর্যবেক্ষক দেশগুলোর সাথে আমাদের প্রকল্পভিত্তিক সম্পর্ক থাকবে। অর্থাৎ পর্যবেক্ষক দেশগুলোর কেউ সার্কের মাধ্যমে কোন দেশে বড় বিনিয়োগ করতে চাইলে সেই বিনিয়োগের ওপর ভিত্তি করে সার্কে ওই দেশের অবস্থান ঠিক করা হবে। বিষয়টি আরও খোলাসা করে তিনি বলেন, চীনসহ পর্যবেক্ষক দেশগুলোর মধ্যে কাউকে স্থায়ী সদস্য করা হবে না অন্যকোন উপাধি দেয়া হবে তা তাদের ভবিষ্যত কর্মপন্থাই ঠিক করে দিবে। তবে, এরপর থেকে সার্ক ডেভেলপমেন্ট বা সার্কের উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে নিয়মিত ভিত্তিতে। ২০১৫ সাল নাগাদ এ প্রতিবেদন নিয়মিত প্রকাশ করা হবে। এছাড়া সদস্য দেশগুলোর অর্থ-নৈতিক সহযোগিত আরও নিবিড় করতে সার্ক ইকোনমিক ইউনিয়ন বা সার্ক অর্থনৈতিক ইনিউয়ন গড়ার ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছেন। এছাড়া ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশের চট্টগ্রামের মধ্যে কন্টেইনার ট্রেন যোগাযোগ চালুর ব্যাপারে স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানালেন সচিব। পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, ভারতে সার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও বেশিমাত্রায় বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যাপারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে এবং তাতে একমত পোষণ করেছেন সদস্য দেশগুলো। দক্ষিণ এশিয়ার নারীদের জীবন মানের উন্নয়ন ও তাদের অধিকার রক্ষায় ‘দক্ষিণ এশিয়া নারী উন্নয়ন সংস্থা (South Asian Women Development Forum) গঠণের ব্যাপারেও সদস্য দেশগুলো একমত হয়েছে বলে জানান সচিব। আগামী ২৭ নভেম্বর শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী দিনে কাঠমন্ডু ঘোষণায় প্রায় ৪০টি দফা থাকতে পারে এমন ইঙ্গিত দিয়ে সচিব বলেন, এতে বাংলাদেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় থাকবে। উল্লেখ্য, শনিবার (২২ নভেম্বর) নেপালের রাজধানী কাঠমন্ডুর হোটেল সল্টিতে সার্কভূক্ত আট দেশের যুগ্ম পররাষ্ট্র সচিবদের অংশগ্রহণে প্রোগ্রামিং কমিটির বৈঠকের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ১৮ তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা। একই ভেন্যুতে পরদিন (রোববার) সার্ক সদস্যভূক্ত দেশের পররাষ্ট্র সচিবদের উপস্থিতিতে দুই দিনের স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দফার আনুষ্ঠানিকতা। আগামী ২৬-২৭ নভেম্বর সার্কভূক্ত দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানদের উপস্থিতিতে চূড়ান্ত পর্বের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনেই বিদ্যুৎ সহযোগিতাসহ হতে পারে সম্ভাব্য চুক্তিগুলো। এবারের সার্কের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘Deeper Integration for Peace and Prosperity’ অর্থাৎ শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য গভীর যৌথ-প্রয়াস। তবে এই প্রতিপাদ্যের আলোকে কতটা যৌথ অংশীদারমূলক পরিকল্পনা বা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে সেটাই দেখার বিষয়। এদিকে, আগামী কাল মঙ্গলবার সার্কভূক্ত দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সম্মেলনের তৃতীয় পর্বের কার্যক্রম সার্ক কাউন্সিল অব মিনিস্টারস। কাঠমন্ডুর হোটেল সল্টি থেকে    

No comments:

Post a Comment