ডিসিসহ ২৮ জন আসামি বিদ্যুৎ প্রকল্পে ২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা নিজস্ব প্রতিনিধি আরটিএনএন কক্সবাজার: কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর মাতারবাড়িতে হতে যাওয়া কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রায় ২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে মামলা হয়েছে। মামলায় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রুহুল আমিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকসহ (রাজস্ব) ২৮ জনকে আসামি করা হয়েছ
ে। মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নের সিকদারপাড়া এলাকার মৃত নুর আহমদ সিকদারের ছেলে একেএম কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী বাদি হয়ে বুধবার মামলাটি দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক)নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ও সাবেক স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট মোস্তাক আহমদ সাংবাদিকদের জানান, মামলাটি আমলে নিয়ে ওই আদালতের সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. সাদিকুল ইসলাম তালুকদার এ বিষয়ে তদন্ত করতে মামলাটি দুদকে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন। আগামী ২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। আদালত সূত্র মতে, ওই মামলায় কক্সবাজারের বর্তমান জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও অন্য আসামিরা হলেন- কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাফর আলম (বর্তমানে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট), জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা আরেফিন আক্তার নুর, মহেশখালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. ইলিয়াস, জেলা ভূমি অধিগ্রহণ শাখার প্রধান সহকারী আবুল কাশেম মজুমদার, জেলা ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কানুনগো আবদুল কাদের, সার্ভেয়ার ফখরুল ইসলাম ও বাদশা মিয়া, মাতারবাড়ির মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে রফিকুল ইসলাম ও মহিবুল ইসলাম, রফিকুল ইসলামের ছেলে আমিনুল ইসলাম, মাতারবাড়ির মাইজপাড়ার ছালে আহমদের ছেলে মো. হারুন, মিয়াজী পাড়ার মৃত আলী আহমদের ছেলে মো. জমির উদ্দিন, একই এলাকার মৃত ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে মো. এরফান, মৃত শফিউল আলমের ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলম, মৃত ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে মো. সেলিম, মৃত আলীর ছেলে জিএ ছমি উদ্দিন, মৃত ছালেহ আহমদের ছেলে নুর আহমদ, হোয়ানক ইউনিয়নের কেরুন তলীর মো. হোসেনের ছেলে নুরুল ইসলাম, চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের মৃত হাছন আলীর ছেলে আবুল বশর, মাতারবাড়ির মৃত আবুল হোছাইনের ছেলে আশরাফ আলী, মৃত আবু ছিদ্দিকের ছেলে দানু মিয়া, মৃত জমির আহমদের ছেলে মির কাশেম, কালারমারছড়ার আনু মিয়ার ছেলে মো. সেলিম উদ্দিন, মাতারবাড়ির বাদশা মিয়ার ছেলে মো. রিদুয়ান, আবুল বশরের ছেলে আনিছুর রহমান এবং মৃত মো. এলাদনের ছেলে ছকি আলম। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, দেশের এযাবতকালের সর্ববৃহৎ প্রকল্প হিসাবে ঘোষিত কক্সবাজারের মাতারবাড়ি কয়লা বিদুৎ প্রকল্প। সরকার ৩৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কয়লাভিত্তিক এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা এই প্রকল্পে ২৮ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ঋণ দেবে। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে ৭ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। বাকি তিন হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড যোগান দেবে। আগামী ২০২৩ সাল নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদানের কাজ। কিন্তু মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের অধিগ্রহণ করা চিংড়ি জমির ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়ার নামে স্বনামে-বেনামে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ২৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। মামলার বিবরণীতে আরও বলা হয়, এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনসহ ১ থেকে ৯ নম্বর ব্যক্তি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারী। আত্মসাতের ঘটনায় তারা জড়িত আছেন। আর ১০ থেকে ২৮ নম্বর আসামি কোনো জমি না থাকার পরও জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। মামলার এজাহার মতে, মামলার আগেই মাতারবাড়ির মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে রফিকুল ইসলাম ২ কোটি ২২ লাখ ৯০ হাজার টাকা, রফিকের ভাই মহিবুল ইসলাম ১ কোটি ৯ লাখ ৭৩ হাজার ৬৯৮ টাকা, রফিকুল ইসলামের ছেলে আমিনুল ইসলাম ১ কোটি ২৫ লাখ ৫১ হাজার ১৬৭ টাকা, মাতারবাড়ির মাইজপাড়ার ছালে আহমদের ছেলে মো. হারুন ৩৭ লাখ ৩ হাজার ৬২৩ টাকা, মিয়াজী পাড়ার মৃত হাজি আলী আহমদের ছেলে মো. জমির উদ্দিন ২ কোটি ৪ লাখ ১ হাজার ৪৭৭ টাকা, একই এলাকার মৃত হাজি ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে মো. এরফান ১ কোটি ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৫৭ টাকা, মৃত শফিউল আলমের ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলম ৬৮ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪১ টাকা, মৃত হাজি ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে মো. সেলিম ১ কোটি ৩৩ লাখ ৭৪ হাজার ১৯৫ টাকা, মৃত হাজি আলীর ছেলে জিএ ছমি উদ্দিন ১ কোটি ৬ লাখ ৬৮ হাজার ৯৯২ টাকা, মৃত ছালেহ আহমদের ছেলে নুর আহমদ ১৪ লাখ ৪০ হাজার ২৯৭ টাকা, হোয়ানক ইউনিয়নের কেরুনতলীর মো. হোসেনের ছেলে নুরুল ইসলাম ৬৮ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪১ টাকা, চকরিয়া উপজেলার বদরখালী এলাকার মৃত হাছন আলীর ছেলে আবুল বশর ৩০ লাখ ৬২০ টাকা, মাতারবাড়ি ইউনিয়নের মৃত আবুল হোছাইনের ছেলে আশরাফ আলী ১ কোটি ৬ লাখ ৬৮ হাজার ৪৯২ টাকা, মৃত আবু ছিদ্দিকের ছেলে দানু মিয়া ১ কোটি ৬ লাখ ৬৮ হাজার ৪৯২ টাকা, মৃত জমির আহমদের ছেলে মির কাশেম ১ কোটি ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৫৭ টাকা, কালারমারছড়া ইউনিয়নের আনু মিয়ার ছেলে মো. সেলিম উদ্দিন ১ কোটি ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৫৭ টাকা, মাতারবাড়ির বাদশা মিয়ার ছেলে মো. রিদুয়ান ১ কোটি ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৫৭ টাকা, আবুল বশরের ছেলে আনিছুর রহমান ১ কোটি ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৮৫৭ টাকা ও মৃত মো. এলাদনের ছেলে ছকি আলম ৩৪ লাখ ২৯ হাজার ২৮০ টাকার চেক তুলে নিয়ে আত্মসাত করেছেন। উল্লেখ্য, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে হরিলুট করা এই বিপুল অংকের টাকা উদ্ধারের জন্য কক্সবাজারের সার্টিফিকেট আদালতে গত ১২ অক্টোবর মহেশখালীর মাতারবাড়ি দ্বীপের ২১ জনের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা দায়েরপূর্বক টাকা ফেরত দেয়ার নোটিশ প্রদান করে। একইসঙ্গে জাল-জালিয়াতিতে যোগসাজসের জন্য জেলা প্রশাসনের চারজন কর্মচারী যথাক্রমে ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সাবেক প্রধান সহকারী আবুল কাশেম মজুমদার, কানুনগো আবদুল কাদের. সার্ভেয়ার ফখরুল ইসলাম ও বাদশা মিয়ার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও রুজু করা হয়েছে। সর্বশেষ এই ঘটনার প্রধান হোতা হিসাবে অভিযুক্ত জেলা ভূমি অধিগ্রহণ শাখার (এল.এ শাখা) সাবেক প্রধান সহকারী আবুল কাশেম মজুমদারকে সাসপেন্ড (সাময়িক বহিষ্কার) করা হয়েছে। আজ বিশেষ জজ আদালতে জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রশাসনের আরো আট কর্মচারীসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হলো। এনিয়ে জেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য ২১ জনের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা হলেও দুজনকে বাদ দিয়ে বুধবার মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। বাদ যাওয়া ওই দুজন হলেন- মহেশখালীর ধলঘাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আহসানুল হক বাচ্চু ও ব্যবসায়ী রইচ উদ্দিন। মন্তব্য pay per click
No comments:
Post a Comment