কক্সবাজার: মিয়ানমার-বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরের জলসীমানায় সীতারদ্বীপ এলাকায় নোঙর করে রয়েছে ২০টির বেশি যাত্রীবোঝাই কার্গো জাহাজ। সীতারদ্বীপ সেন্টমার্টিনের পূর্ব-দের্ণি মিয়ানমার-বাংলাদেশের সীমানায় অবস্থিত। এই সীতারদ্বীপ এলাকায় চট্টগ্রাম বন্দর ফেরত নোঙর করা প্রায় ২০টির বেশি কার্গো ট্রলারে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া পাড়ি জমাতে জড়ো করা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার যাত্রী। এই সব কার্গো জাহাজে টেকনাফ উপকূলীয় এলাকার চি
হ্নিত কয়েকটি ঘাট ছাড়াও মহেশখালী ও চট্টগ্রাম হয়ে ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত বোটের মাধ্যমে নৌযানে তুলে নেয়া হয় অপেমাণ যাত্রীদের। দালাল চক্রের সদস্যরা কোনো কিছুতেই ভীত না হয়ে অব্যাহতভাবে আদম পাচার চালিয়ে যাচ্ছে। জাহাজগুলোতে শুধু বাংলাদেশী নয়, রয়েছে অনেক মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকও। চকরিয়া ডুলহাজারা মালুমঘাট এলাকার একটি জাহাজ থেকে কৌশলে ফিরে আসা এক যুবক রহমত উল্লাহ ১৮ নভেম্বর স্থানীয় সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। রহমত উল্লাহ আরো জানান, চকরিয়া মালুমঘাট এলাকা থেকে দিনমজুরি কাজ করতে তিনি টেকনাফ উপজেলার সাবরাং এলাকায় ১০-১২ দিন আগে এসেছিলেন। গত ১৪ নভেম্বর কাজ শেষ করে সন্ধ্যায় সাবরাং বাজারে এলে স্থানীয় দালাল কর্তৃক অপহরণ হয়। ওই দিন রাতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি ছোট নৌকায়। সেখানে ওই রাতে জড়ো করা হয় আরো ৪০ জনের মতো যাত্রী। নৌকাতে চিৎকার করায় তাকে কিলঘুষিও মারে দালাল। সেখান থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি সীতা পাহাড় এলাকায়। এত দিন সেখানে রাখা হয় তাদের। প্রতিদিন দেয়া হতো দুই বেলা ভাত, ছোলার ডাল ও আর আলু। এ দিকে আটককৃতদের বাড়িঘরে দালালের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়। টেকনাফ ফিরে আসতে কন্ট্রাক্ট করা হয় ৩০ হাজার টাকায়। চাচাতো ভাই আমান ৩০ হাজার টাকা নিয়ে সোমবার বিকেলে টেকনাফ নয়াপাড়া বাজার এলাকায় গিয়ে ধরে ফেলে টাকা নিতে আসা দালালকে। পরে মঙ্গলবারের মধ্যে ফেরত দেয়ার শর্তে ওই দালালকে ছেড়ে দেয়া হয়। সোমবার রাতে ৩৫ জন যাত্রী নিয়ে গভীর সাগরে ভাসমান ট্রলারে ভেড়ে ছোট নৌকা। ওই নৌকাতে করে মঙ্গলবার দুপুরে কাটাবনিয়া ঘাটে নামিয়ে দেয়া হয় রহমত উল্লাহকে। এ দিকে টেকনাফ-কক্সবাজার অঞ্চল থেকে মানব পাচারের সাম্প্রতিক সময়ের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি দেশজুড়ে সর্বত্র আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। পুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও বিজিবি সদস্যদের অভিযানে বিভিন্ন সময়ে পাচারের আগে বিভিন্ন দল আটক হচ্ছে, গ্রেফতার হচ্ছে নগণ্য সংখ্যক দালাল। কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে মূল গডফাদারেরা। কক্সবাজার জেলা পুলিশ মানব পাচারের ঘটনা রোধে মাঠে নামলেও তা থামানো যাচ্ছে না। কোনো গডফাদারকেও আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। তবে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, মানব পাচারে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড নিয়ে গড়ে উঠেছে চার দেশীয় শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের গডফাদারদের অধীনে কাজ করছে অজস্র দালাল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যেসব দালাল অসহায় হতদরিদ্র মানুষকে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে কক্সবাজার অঞ্চলে জড়ো করছে তারা জানে না মূলত কাদের মাধ্যমে তাদের এ যাত্রা। তারা শুধু জানে যাত্রা যত দুর্গমই হোক মালয়েশিয়ায় তারা পৌঁছবে। অবৈধ পথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পথে ও মালয়েশিয়ায় পৌঁছে পুলিশের হাতে ধরা খেয়ে বন্দী জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে আসা কক্সবাজার অঞ্চলের অনেকের বক্তব্য এখন মানুষের মুখে মুখে। মালয়েশিয়ার জেল ছাড়াও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গলে একাধিক বন্দিশিবিরে অনেক বাংলাদেশীরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। ওই সব শিবিরে দিনের পর দিন আটক থেকে অনেকে মৃত্যু পথযাত্রী। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের নাজিরার টেক, পেশকারপাড়া, টেকনাফের শাহপরী দ্বীপ, বাহারছড়া ও উখিয়ার উপকূল সাগর পথ দিয়ে মালয়েশিয়াগামীদের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করে আসছে দালাল চক্র। গোয়েন্দা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে শতাধিক দালালের তালিকা থাকলেও তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না। যার ফলে মালয়েশিয়া আদম পাচারকারী চক্র দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। নতুন বার্তা/এমবি/জিহ
No comments:
Post a Comment