বিএনপির টার্গেট সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধি মোজাম্মেল হক তৃহিন টাইম নিউজ বিডি, ১৪ মে, ২০১৫ ০৯:১১:১১ ৮ বছরের বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় দলটি এখন সংসদে নয়, রাজপথের বিরোধী দলের ভূমিকায়। কিন্তু বারবার সরকার পতনের আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেও কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়নি দেশের অন্যতম বৃহৱ এই দলটি। সবশেষ জানুয়ারি থেকে চলমান আন্দোলনের মধ্যেই হটাৎ করেই
তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। সরকারের দমন-পীড়নের মধ্যে বারবার তাগাদা দিয়ে নেতাকর্মীদের রাজপথে নামাতে ব্যর্থ হয়ে নির্বাচনের মোড়কে রাজপথ দখলের কৌশলও খুব একটা কাজে আসেনি। কারণ সিটি নির্বাচনে দলের চেয়ারপারসন নিজে প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে নামলেও দলের একটি বিশাল অংশের নেতাকর্মী নির্বাচনের সময়ও আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে আসেনি। তাই আন্দোলন ও নির্বাচন সবক্ষেত্রেই সংগঠনের নেতাকর্মীদের দৈন্য দশার চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে হাইকমান্ডের কাছে। আর এজন্য সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের বিরূদ্ধে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ আনলেও কোনো ধরণের প্রতিবাদের কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়নি। বক্তব্য বিবৃতি আর আন্তর্জাতিক মহলের নিকট অভিযোগের মধ্যেই নির্বাচনের পরের কর্মসূচি সীমাবদ্ধ রেখেছে বিএনপি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলের সাংগঠনিক অবস্থায় বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে নতুন করে আর কঠোর কর্মসূচির পথে হাটছে না দলটি। তাই সবদিক বিবেচনায় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে এবার বিএনপির হাইকমান্ড দলকে সংগঠিত করার দিকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। দলের সব পর্যায়ে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার ওপর বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে। যদিও সিটি নির্বাচনের সময় থেকেই আড়ালে এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে দলটির হাইকমান্ড। বিশেষ করে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্যকে এ নিয়ে কাজ করার নির্দেশনাও দিয়েছেন চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তার নির্দেশনায় স্থায়ী কমিটির ওই সদস্য সারাদেশের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করে যাচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। দলের আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৭৮টি সাংগঠনিক কমিটিগুলোর মেয়াদোত্তীর্ন এবং দুর্বল কমিটিগুলোকে ভেঙে দিয়ে ত্যাগী নেতাকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করার পুনর্বিন্যাস করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের হাইকমান্ড। এছাড়াও দলের অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিও নতুন করে ঢেলে সাজানো হবে। দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাসের জন্য বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও চিকিৎসাধীন অবস্থায় লন্ডনে থেকেই কাজ করছেন। এমন কি গত আন্দোলনের সময় বিভিন্ন নেতাদেরকে তার পক্ষ থেকে জানিয়েও দেয়া হয়। যারা দলের জন্য রাজপথে নামার ঝুকি নিতে পারবেনা ভবিষ্যতে তাদের দল থেকে বাদ দেয়া হবে। দলের তৃণমুল পর্যায়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের কারণে বিগত আন্দোলনে নেতাকর্মীদের ক্ষয়-ক্ষতির একটি চিত্রও তার কাছে রয়েছে। এসব বিবেচনায় আগামীতে দলের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার বিষয়ে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় অচিরেই জাতীয় কাউন্সিলও করা হবে। এক্ষেত্রে দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত একটি ঝাঁকুনি দিয়ে নিষ্ক্রিয়দের ছেঁকে ফেলা হবে কিংবা সাইডলাইনে বসিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের হাইকমান্ড। দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে সুবিধাভোগীদের ছাঁটাই করে সাংগঠনকে শক্তিশালী করে আন্দোলনে নামলে সাফল্য অর্জন সম্ভব। এজন্য বিগত আন্দোলনের সময় বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এবার তাদের মধ্য থেকেই নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য দৃষ্টি দেয়া হচ্ছে। মামলা-হামলা আর নির্যাতনের চিত্র ধরে এসব ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাছাই শুরু করা হয়েছে। বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে বিশেষ করে ঢাকায় আবারো পরিবর্তন আনার চিন্তা করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সেক্ষেত্রে তিনি নেতৃত্বে কিছু নতুন মুখ আনার কথা ভাবছেন। এক্ষেত্রে ঢাকা মহানগরের শক্তি বৃদ্ধিতে দুটি ভাগে ভাগ করা শক্তভাবে বিবেচনাধীন রয়েছে। দলের সাংগঠনকি পূর্নবিণ্যাস করার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আসম হান্নান শাহ টাইমনিউজকে বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। এর ধারাবাহিকতায় এবারও কাজ চলছে। তবে এবার দলের জন্য যারা ত্যাগ শিকার করতে প্রস্তুত তাদেরকে মূল্যায়ন করা হবে।এর বেশি কিছু নয়। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান টাইমনিউজকে বলেন, এটি সত্য নির্বাচন ও আন্দোলনের সময় বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতার কিছুটা দিক সবাই দেখেছে। তবে এক্ষেত্রে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। তারা যেভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে তার প্রেক্ষাপটে কতটুকু সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকার সুযোগ ছিল। নেতাকর্মীরা গুম-খুন, কারাবরণ ও নির্যাতনের ভীতি নিয়েই এখনো কাজ করছে। এসব বিষয়ে বিএনপির একজন প্রভাবশালী নেতা নাম প্রকাশে অপারগতা জানিয়ে বলেন, দল সংকটে পড়লেই তৃণমূলের ডাক পড়ে। তাদের সাহায্য চাওয়া হয়। কিন্তু কখনোই তাদের রাজনৈতিকভাবে যোগ্যতার মূল্যায়ন করা হয় না। কিন্তু এবার যারা দলের জন্য নিবেদিত, যারা দলকে ভালোবেসে ত্যাগ করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত এমন নেতাকর্মীকেই চিহ্নিত করা হবে আগামীর নেতৃত্বের জন্য। এমএইচ/এমকে
No comments:
Post a Comment