সাগরে আটকেপড়াদের রক্ষার আহ্বান স্টাফ রিপোর্টার টাইম নিউজ বিডি, ২০ মে, ২০১৫ ০৮:২৭:২৩ আন্দামান ও বঙ্গোপসাগরে নৌযানে আটকেপড়াদের রক্ষার জন্য দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তিনটি আন্তর্জাতিক সংগঠন ও জাতিসংঘ মহাসচিবের অভিবাসন ও উন্নয়ন সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি। ইউএনএইচসিআর, ওএইচসিএইচআর, আইওএম এবং মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি একটি যৌথ বিবৃতিতে মানুষের প্রাণ বাঁচানো, মানবাধিকার রক্ষা এবং ম
ানুষের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। মিয়ানমারে নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার রোহিঙ্গারা গত কয়েক বছর ধরে বাঁচার আশায় সাগর পাড়ি দিয়ে আশপাশের দেশ, বিশেষ করে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টায় আছেন। আর বাংলাদেশ থেকেও নৌকা বা মাছ ধরার ট্রলারে করে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টার ঘটনা ঘটছে নিয়মিত। গতমাসের শেষে দক্ষিণ থাইল্যান্ডের জঙ্গলে পাচারকারীদের পরিত্যক্ত এক ক্যাম্পে অভিবাসীদের গণকবরের সন্ধান পাওয়ার পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। থাই পুলিশ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করায় এবং মালয়েশীয় ও ইন্দোনেশীয় নৌবাহিনী কঠোর অবস্থান নেওয়ায় পাচারকারীদের আরও বহু নৌকা সাগরে আটকে আছে বলে শঙ্কা তৈরি হয়। এতে অন্তত ৮ হাজার মানুষ সাগরে আটকা পড়েন বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ধারণা। গত কয়েক দিনে ওই তিন দেশের নৌবাহিনী মানুষবোঝাই বেশ কিছু নৌকা উপকূলে ভিড়তে না দিয়ে পানি ও খাবার সরবরাহ করে সেগুলো গভীর সাগরে ঠেলে দেয় বলে বিবিসি জানিয়েছে। শুধু যাদের নৌযান ডুবেছে তাদের উদ্ধার এবং যারা কোনোভাবে ওই দেশগুলোতে ঢুকতে পেরেছে তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। “নৌযান ভর্তি অসহায় নারী, পুরুল ও শিশু, যাদের খাবার, পানি ও চিকিৎসা সহায়তা জরুরি হলেও তা ছাড়াই সাগরে আটকা পড়ে থাকার খবরে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন,” বলা হয় যৌথ বিবৃতিতে। অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই ওই সব নৌযান নিরাপদে তীরে ভেড়ার সুযোগ দিয়ে আরোহীদের জীবন বাঁচানোর জন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। ‘পুশ ব্যাক’ বন্ধ করে সাগরে অনুসন্ধান ও উদ্ধার তৎপরতা জোরদার করারও আহ্বান জানানো হয়েছে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার প্রতি। অভিবাসন প্রত্যাশীদের আটকসহ অন্যান্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি সব অভিবাসী ও শরণার্থীর মানবাধিকার রক্ষার জন্যও বলেন তারা। “শিশুদের অধিকারের বিষয়গুলো মাথায় রেখে তাদের প্রতি সব ধরনের আচরণ করতে হবে,” বলেন তারা। “বিদেশিদের প্রতি অহেতুক বিদ্বেষ এবং ভাষা, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, নৃতত্ত্ব ও জাতীয়তাসহ যে কোনো কিছুর উপর ভিত্তি করে যাতে বৈষম্য না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন,” বলা হয় যৌথ বিবৃতিতে। নিরাপদ ও বৈধ অভিবাসনের সুযোগ বাড়ানোর জন্যও আহ্বান জানানো হয়েছে। শরণার্থী, আশ্রয় প্রার্থী ও দেশহীন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে যথাযথ পদ্ধতি বের করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয় যৌথ বিবৃতিতে। এই সংকটকে ‘বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরে কবরের পরিস্থিতি’ বলা হয়েছে বিবৃতিতে। এতে বলা হয়, এই ঘটনা দেখিয়েছে ‘বিশ্বব্যাপী অসহায় মানুষ নিরাপত্তা ও মর্যাদার জন্য, বিচার এড়াতে এবং দারিদ্র্য, বঞ্চনা, বৈষম্য ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে ছুটছে’। ‘ঝুঁকপূর্ণ ভ্রমণ’ তা স্থল, সাগর বা বিমান যেভাবেই হোক না-এটা ‘বৈশ্বিক বিষয়’ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ৮৮ হাজার মানুষ সাগরে এই বিপজ্জনক যাত্রা করেছে। এ বছরের প্রথম তিন মাসেই ২৫ হাজার মানুষ এভাবে দেশগুলোতে পৌঁছেছে। এ যাত্রায় সাগরে প্রায় এক হাজার এবং চোরাচালানীদের নির্যাতন-নিপীড়নে সমান সংখ্যক মানুষ মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “বঙ্গোপসাগরে অভিবাসীদের শুধু সাদা ভাত খেতে দেওয়া হয় এবং যৌন নিপীড়নসহ নানা নির্যাতনের শিকার হন তারা। নারীদের ধর্ষণ করা হয়। পরিবার থেকে আলাদা করে শিশুদের উপর নির্যাতন চালানো হয়। অনেক লোককে মারধর করা ছাড়াও সাগরে ফেলে দেওয়া হয়।” জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার আন্তেনিও গুতেরেজ, মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার জেইড রাদ আল হুসেন, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক উইলিয়াম এল সুইং এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন ও উন্নয়ন বিষয়ক জাতিসংঘ মাহসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি পিটার সাদারল্যান্ড যৌথ বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন। এএইচ
No comments:
Post a Comment