Wednesday, March 4, 2015

গ্রেফতারি পরোয়ানা পৌঁছেনি:Time News

গ্রেফতারি পরোয়ানা পৌঁছেনি স্টাফ রিপোর্টার টাইম নিউজ বিডি, ০৪ মার্চ, ২০১৫ ০০:৫৮:২১ জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা এখনও থানায় পৌঁছেনি। পরোয়ানাটি অভিযুক্ত খালেদা জিয়া বা তার আইনজীবীদের কাছেও পৌঁছেনি। এ অবস্থায় খালেদা জিয়া আজ রাজধানী ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের বিশেষ জজ আদালত-৩ এ হাজির হচ্ছেন না। তার অনুপস্থি
তিতেই আজ আবারও শুনানি শুরু হবে। পরপর তিনটি নির্ধারিত কার্যদিবসে হাজির না থাকায় ২৫ ফেব্রুয়ারি এ দুটি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ওই আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার। এরপর মঙ্গলবার রাত নয়টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১৫৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হয়েছে। মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘গ্রেফতারি পরোয়ানা এখনও পুলিশের হাতে আসেনি। কোর্টের আদেশ মানতে আমরা বাধ্য। আদেশে যা বলা থাকবে সেভাবেই আমরা ব্যবস্থা নেব।’ বুধবার আদালতে না গেলে খালেদাকে গ্রেফতার করা হবে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আগে ৪ তারিখ পার হোক, তারপর দেখা যাবে।’ এই দুই দুর্নীতির মামলার শুনানিতে আজ খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তার অপর আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া। তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে এ দিন খালেদা জিয়া আদালতে যাচ্ছেন না।’ গ্রেফতারি পরোয়ানা বাতিল চেয়ে করা আবেদনের শুনানি হবে আজ বকশিবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে। খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী তার আত্মসমর্পণ প্রসঙ্গে শর্তজুড়ে দিয়েছেন। খালেদা জিয়ার গ্রেফতার হবেন, না তিনি আজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইবেন এ বিষয় নিয়ে দিনভর দেশের বিভিন্ন স্থানে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কেউ কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। বিএনপির পক্ষ থেকেও স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। খালেদা জিয়ার একজন আইনজীবী জানিয়েছেন, তারা পরোয়ানা হাতে পাননি। অপর আইনজীবী বলেছেন, যদি আদালতে যেতে হয়, আত্মসমর্পণ করতে হয়, তাহলে তিনি (খালেদা জিয়া) আদালতে যেতে ইচ্ছুক। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইনের বাইরে গিয়ে কিছুই হবে না। গ্রেফতার হলেও আইনি প্রক্রিয়া মেনেই করা হবে। সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে সরকার অস্বস্তির মধ্যেই আছে। কারণ পুরনো মামলায় হাজির না হওয়ায় আদালত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। আদালত তার নিজস্ব এখতিয়ারের মধ্যেই কাজটি করেছেন। কিন্তু জনগণের কাছে বার্তা যাচ্ছে সরকার আন্দোলন দমনের জন্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। অন্যদিকে সরকার বিএনপিকে চাপে ফেলতে, খালেদা জিয়াকে গুলশান কার্যালয় থেকে বের করার জন্য এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে থাকতে পারে বলেও আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে ঘটছে উল্টো ঘটনা। খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, দাতা সংস্থার পক্ষ থেকে বিবৃতি দেয়া হচ্ছে, যা সরকারের ওপর এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করছে। এদিকে আদালতে আত্মসমর্পণের জন্য খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যদিও এখনও আমরা গ্রেফতারি পরোয়ানার কপি হাতে পাইনি, তারপরও যদি আদালতে যেতে এবং আত্মসমর্পণ করতে হয়, তাহলে তিনি (খালেদা জিয়া) আদালতে যেতে ইচ্ছুক। তবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও কার্যালয়ে ফিরে আসার আশ্বাস দিতে হবে।’ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘দুটি বিষয় আছে। একটি হচ্ছে, বিচারিক আদালতের প্রতি আমরা অনাস্থার আবেদন জানিয়েছি। ব্যাপারটি উচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় আছে। ওই আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিচারিক আদালত আইনগতভাবে ও নৈতিকতার দিক থেকে এ মামলার শুনানি করতে পারেন না। কারণ তার বিপক্ষে তো আমরা অনাস্থা দিয়েছি। তার তো নৈতিকতার দিক আছে, দেখি উচ্চ আদালত কি বলেন।’‘আরেকটি ব্যাপার হল, গ্রেফতারি পরোয়ানা এখনও খালেদা জিয়া হাতে পাননি। কিন্তু তারপরও যদি আদালতে হাজির হতে হয়, আÍসমর্পণ করতে হয়, তাহলে খালেদা জিয়া অবশ্যই আত্মসমর্পণ করতে ইচ্ছুক।’ এছাড়া গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার চেয়ে খালেদার পক্ষে মঙ্গলবার বিশেষ জজ আদালতে একটি আবেদন দায়ের করা হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টায় খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া এ আবেদন করেন। দুপুরে এ আবেদনের শুনানি হয়। শুনানি শেষে বিচারক আবু আহমেদ জমাদার বলেন, ‘সরকার গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে এ মামলা পরিচালনার জন্য বকশিবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এ মামলার কোনো বিষয়েই ওই স্থানের বাইরে তিনি শুনতে কিংবা সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না। এ বিষয়ে আগামী ধার্য তারিখে (বুধবার) ওই স্থানে (বকশিবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালত) এ বিষয়ে শুনানি গ্রহণ করা হবে।’ এদিকে গ্রেফতারি পরোয়ানার কার্যকারিতা স্থগিত চেয়ে মঙ্গলবার বিকালে হাইকোর্টে একটি সম্পূরক আবেদন করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন দাখিল করেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। সম্পূরক আবেদনের ওই কপি রাষ্ট্রপক্ষের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। পরে বিকালে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে করা আবেদনের সঙ্গে সম্পূরক আবেদনটির শুনানি হবে।’ সম্পূরক আবেদনে মামলার কার্যক্রম স্থগিত মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে। বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গ্রেফতারি পরোয়ানা স্থগিত চাওয়া হয়েছে।’ এ সময় তার সঙ্গে ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী, ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে । খালেদার পরোয়ানা পৌঁছেনি পুলিশের কাছে : খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের বিষয়ে আদালতকে জানানোর দিন চলে এলেও পরোয়ানাই এখনও পুলিশের হাতে পৌঁছেনি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘গ্রেফতারি পরোয়ানা এখনও পুলিশের হাতে আসেনি। কোর্টের আদেশ মানতে আমরা বাধ্য। আদেশে যা বলা থাকবে সেভাবেই আমরা ব্যবস্থা নেব।’ বুধবার আদালতে না গেলে খালেদাকে গ্রেফতার করা হবে কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আগে ৪ তারিখ পার হোক, তারপর দেখা যাবে।’ খালেদা জিয়া দুইবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় তাকে বিশেষ কোনো সুবিধা দেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নে কামাল বলেন, ‘উনি যেহেতু সাবেক প্রধানমন্ত্রী, সেজন্য যেটুকু রেসপেক্ট দেখানো দরকার তা দেখানো হবে।’ বিএনপি নেত্রী খালেদা গ্রেফতার হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার কোনো কারণ দেখছেন না বলেও জানান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতির অবনতি হবে কেন? জনগণ তো সচেতন। কেন তিনি গ্রেফতার হতে পারেন তা তো জনগণ জানে।’ বিএনপি জোটের অবরোধ-হরতালে নাশকতার ঘটনা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে দাবি করে কামাল বলেন, ‘বিএনপি যে ক্রাইসিস তৈরি করতে চাইছিল তেমন কিছু এখনও তৈরি হয়নি।’ এ ব্যাপারে গুলশান থানার ওসি রফিকুল ইসলাম  বলেন, খালেদা জিয়ার গ্রেফতার পরোয়ানা এখনও আমার থানায় পৌঁছেনি। ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। খালেদা জিয়ার আগের বাসার ঠিকানা অনুযায়ী ক্যান্টনমেন্ট থানায় পরোয়ানাটি পৌঁছানোর কথা। এ ব্যাপারে ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি আতিকুল ইসলাম বলেন, আগে খালেদা জিয়ার বাসা ছিল মইনুল রোডে। ঠিকানা অনুযায়ী অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট আমার থানায় আসার কথা। আমি এটিই শুনেছিলাম। তবে এখনও পর্যন্ত আসেনি। যে মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় আরও একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জেআই


No comments:

Post a Comment