ডিসিসি নির্বাচনে আ. লীগের গলার কাটা আ.লীগ স্টাফ রিপাের্টার টাইম নিউজ বিডি, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ১৫:০৩:২৪ ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) দুই অংশের নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আওয়ামী লীগের প্রার্থীও ঠিক করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উত্তরের মেয়র পদে লড়বেন ব্যবসায়ী আনিসুল হক এবং দক্ষিণে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন। এদিকে গ্রিণ সিগনাল পাওয়ার পর দক্ষিণে মেয়র প্রার্থী হিসেবেসাঈদ খোকন বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। এ জন্যই নেত্রীর নির্দেশে মাঠে নেমেছি।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডেকেছিলেন। আমাকে প্রার্থী হতে বলেছেন। আমি সম্মতি দিয়েছি।' জানা গেছে, এ নির্বাচনে সাড়া নেই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় বিরোধী জোটের। এতে করে অনায়াসে ঢাকা সিটিতে জয় লাভের আশা ছিলো আওয়ামী শিবিরে। কিন্তু কাটা হয়ে দাড়াচ্ছেন নিজ দলের নেতারাই। মনোনয়ন পেতে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুয়ারে ধর্ণা দিচ্ছেন দলটির নেতারা। এমনকি আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা করলেও এখনো মনোনয়ন নিয়ে অনেকেই আশাবাদী। তাদের দাবি দলীয় সভানেত্রী তার মত পাল্টাবেন। মনোনয়ন না পেলে নিজেদের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিচ্ছেন কেউ কেউ। জানা গেছে, সিটি করপোরেশন দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে রয়েছেন স্বয়ং ত্রাণ ও দুর্যোগব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তবে তিনি প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। মায়াঘনিষ্ঠ অনেকেই মায়ার প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ সেলিম, আওলাদ হোসেন আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন চান। এ ছাড়া ১৪ দলের শরীক হিসেবে জাসদ নেত্রী শিরিন আখতারও মনোনয়ন চাইতে পারেন। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে জনগণের ব্যাপক চাপ রয়েছে। নেত্রীর সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।’ সবশেষ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা গোলাম মাওলা রনি। যদিও এখন তিনি আগের রাজনৈতিক ব্যানারে কোনো তৎপরতা চালান না। ঢাকায় তিনি মূলত আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেই মাঠে নামবেন। নিজের ফেসবুক পাতায় এক স্ট্যাটাসে এ ঘোষণা দিয়েছেন রনি। ওই স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, আসন্ন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিন সিটির মেয়র হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার নিয়ত করেছি। মহান আল্লাহর সাহায্য চাই এবং আপনাদের দোয়া কামনা করি। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার পূর্বে আমি শতবার ভেবেছি – এটা কি আমার দ্বারা সম্ভব হবে ? জীবনের বহু সফলতা এবং ব্যর্থতার অভিজ্ঞতার ওপর দাঁড়িয়ে মনে হয়েছে– ” ইন্শাআল্লাহ্ আমি পারবো”। বহু ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবার সকল কিছুই আল্লাহপাক আমাকে দান করেছেন। ঢাকাকে আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বাস্তব জ্ঞান আমি অর্জন করেছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো, সুইডেনের স্টকহোম এবং ডেন মার্কের কোপেনহেগেন মহা নগরীর ওপর গবেষনার সুযোগের কারণে। অন্যদিকে, তুমুল প্রতিযোগীতা এবং সম্পূর্ন বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভের অভিজ্ঞতাও আমার রয়েছে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে ক্ষমতার সমন্বয়, জনগনের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন এবং এলাকার উন্নয়ন করার বাস্তব নমুনা আমি রেখে এসেছি ১১৩ পটুয়াখালী-৩ নামক সংসদীয় নির্বাচনী এলাকায়। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হকের নাম ঘোষণা করেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপরও এ নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নিতে আরো বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাদের মধ্যে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার, এ কে এম রহমত উল্লাহ, ব্যবসায়ী নেতা এস এ মান্নান কচি ও মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাদেক খান রয়েছেন। এছাড়া অরাজনৈতিক ব্যানারে আওয়ামী লীগ নেতা এখলাস উদ্দিন মোল্লাও প্রার্থী হতে পারেন। উত্তর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হকের নাম ঘোষণা করায় ক্ষুব্ধ ঢাকা-১৫ আসনের সংসদ সদস্য ও উত্তরের মনোনয়ন প্রত্যাশিত সিটি মেয়র প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদার। তিনি বলেন, ‘আনিসুল হককে প্রধানমন্ত্রী সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। বেশ ভালো। কিন্তু তিনি কি আওয়ামী লীগ করেন? মেয়র হতে হলে জনগণের কাছে যেতে হয়। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতে হয়। কিন্তু তার জনগণের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমি বৃহত্তর মিরপুরে রাস্তা-ঘাট করেছি। স্কুল-মাদরাসা করেছি। এটা দৃশ্যমান। আশা করি আমি সবার ভোট পাবো। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আমাকে নমিনেশন দেবেন। আর মনোনয়ন না দিলেও আমি পাস করবো। কারণ নারায়ণগঞ্জে সেলিনা হায়াৎ আইভিকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তারপরও তিনি বিজয়ী হয়েছেন। অথচ শামীম ওসমানকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিলেও তিনি পাস করেননি।’ ঢাকা মহানগর উত্তরের মেয়র পদে নির্বাচনে আগ্রহী যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মাঈনুল হোসেন খান নিখিল ও সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতউল্লাহ। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর ডিসিসি নির্বাচন হচ্ছে। তাই এই নির্বাচনে অনেকেই অংশ নিতে চাইবেন। তবে সবকিছুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে। তিনি যাকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেবেন তাকেই নির্বাচন করতে হবে।’ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের প্রতি যাদের ত্যাগ আছে এবং জনপ্রিয় তাদেরকে এবার নির্বাচনে সমর্থন দিবেন প্রধানমন্ত্রী।’ প্রসঙ্গত, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরপরই ঢাকা সিটি করপোরেশন (উত্তর ও দক্ষিণ) নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুরোধ জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর জাতীয় সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগ করা হয়। অভিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০০২ সালের এপ্রিলে। এরপর টানা প্রায় ১০ বছর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা। ২০০৭ সালের ১৫ মে তার মেয়াদ শেষ হলে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। পরে ২০১২ সালের ২৯ এপ্রিল তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিলে ২৪ মে নির্বাচনের দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু ভোটার তালিকা ও সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় নির্বাচনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত। এরপর ২০১৩ সালের ১৩ মে আদালত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। জেএ
No comments:
Post a Comment