আন্তরিকতা আঁচ করতেই মূলত ভারত সফরে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোদীর পূর্বসূরি মনমোহন সিং-এর জমানায় ভারতে এসেছেন এবং মনমোহন সিং-ও ঢাকা গেছেন ২০১৩ সালে৷ ওই দুটি চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়ন নিয়ে চুক্তিও হয়েছে তখন৷ এখন চুক্তি দুটি রূপায়নের দায়িত্ব বর্তেছে মোদি সরকারের ওপর৷ তাই রাষ্ট্রপতি হামিদ প্রধানমন্ত্রী মোদিসহ ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে মতবিনিময় করে একটা ধারণা পেতে চেয়েছেন৷ প্রধানমন্ত্রী মোদি যে আব্দুল হামিদের সফরকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন, সেটা বোঝা যায় সংসদের জরুরি কাজকর্ম ফেলে রাষ্ট্রপতি হামিদের সঙ্গে তার দীর্ঘ বৈঠক থেকে৷ ঢাকা যাতে ছিটমহল হস্তান্তর এবং তিস্তা জলবণ্টন চুক্তির বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দিল্লির আন্তরিকতা নিয়ে কোনো রকম সন্দেহ পোষণ না করে, তার জন্য মোদি ছিলেন তৎপর ছিলেন৷ তাই তার সরকারের প্রচেষ্টার এ দুটি ইস্যুর অগ্রগতি সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি মোদির ব্যাখ্যা: দুটি ইস্যু একসঙ্গে বাস্তবায়নে যেহেতু রাজনৈতিক ঐকমত্য হতে সময় লাগবে, তাই কালক্ষেপ না করে আগে ছিটমহল বিনিময়ের কাজটা সম্পূর্ণ করা হোক৷ আর সেটা করার জন্য যা করা জরুরি, তা করা হয়েছে ইতিমধ্যেই৷ যেমন রাজনৈতিক ঐকমত্য, সংসদের স্থায়ী কমিটির সবুজ সংকেত, মন্ত্রিসভার অনুমোদন এবং শেষ ধাপে জমি হস্তান্তর সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিলটি পাস করানোর জন্য সংসদে পেশ করা হয়েছে৷ প্রথমে আশা করা হয়েছিল, সংসদের চলতি অধিবেশনেই তা পাস হয়ে যাবে৷ সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় সহজেই তা পাশ হয়ে যায়৷ কিন্তু গোল বাঁধে উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায়৷ সেখানেও বিল পাস করাতে বেগ পাওয়ার কথা নয়, কারণ মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস ছিটমহল বিনিময়ে আপত্তি না করার কথা আগেই জানিয়েছিল৷ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সম্মানে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দেয়া নৈশ ভোজের অনুষ্ঠানে উপস্থিত মমতা বন্দোপাধ্যায় আবারো তা জানিয়েছেন৷ অথচ তা সত্ত্বেও হয়নি৷ সংসদের অধিবেশন হৈ হট্টগোলের কারণে প্রায় প্রতিদিনই ব্যাহত হয়েছে৷ তবে সংসদের চলতি অধিবেশনে না হলেও, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাজেট অধিবেশনে অবশ্যই তা হবে বলে জানা গেছে৷ উল্লেখ্য, চলতি অধিবেশন শেষ হচ্ছে ২৩ ডিসেম্বর৷ প্রধানমন্ত্রী মোদিকে রাষ্ট্রপতি হামিদের ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ প্রসঙ্গে মোদি বলেন, ছিটমহল বিনিময়ের কাজ সম্পূর্ণ করার খবর নিয়েই তিনি ঢাকায় যাবেন৷ এছাড়া, দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে খুবই ইতিবাচক কথাবার্তা হয় দু'জনের৷ আগামী বছর ভারত নাকি আরো বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে বাংলাদেশকে৷ নেপাল ও ভুটানের বিদ্যুৎ পেতে ঢাকাকে সাহায্য করতেও প্রস্তুত দিল্লি৷ মোটকথা, ঢাকা-দিল্লি উষ্ণ সম্পর্ক উষ্ণতর হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস৷ না হবারও আপাত কোনো কারণও নেই। তিস্তার জল নিয়ে জটিলতা কাটাতে মমতাকে ধীরে ধীরে রাজি করানো সম্ভব হবে, যদি কেন্দ্র অন্যভাবে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়৷ তবে একটা শঙ্কা আমার রয়ে গেছে৷ আর সেটা হলো, ছিটমহলের জমি হস্তান্তের কৃতিত্ব নিয়ে যেন কংগ্রেস-বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক কাড়াকাড়ি শুরু না হয়৷ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় অল ইন্ডিয়া রেডিও (আকাশবাণী) এবং দূরদর্শন-এর (টিভি) নিজস্ব সংগ্রহ থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে দুটি সিডি উপহার দেন রাষ্ট্রপতি হামিদকে৷ এতে আছে ১৯৭১-৭২-এ ইন্দিরা গান্ধী এবং শেখ মুজিবুর রহমানে ভাষণ, ভারতীয় সংসদে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্ক, আলোচনা, বিবৃতি এবং সাক্ষাৎকার৷ সূত্র: ডিডব্লিউ নতুন বার্তা/জবা
Tuesday, December 23, 2014
রাষ্ট্রপতির ভারত সফরের বিশেষ তাৎপর্য :Natun Barta
আন্তরিকতা আঁচ করতেই মূলত ভারত সফরে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোদীর পূর্বসূরি মনমোহন সিং-এর জমানায় ভারতে এসেছেন এবং মনমোহন সিং-ও ঢাকা গেছেন ২০১৩ সালে৷ ওই দুটি চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়ন নিয়ে চুক্তিও হয়েছে তখন৷ এখন চুক্তি দুটি রূপায়নের দায়িত্ব বর্তেছে মোদি সরকারের ওপর৷ তাই রাষ্ট্রপতি হামিদ প্রধানমন্ত্রী মোদিসহ ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে মতবিনিময় করে একটা ধারণা পেতে চেয়েছেন৷ প্রধানমন্ত্রী মোদি যে আব্দুল হামিদের সফরকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন, সেটা বোঝা যায় সংসদের জরুরি কাজকর্ম ফেলে রাষ্ট্রপতি হামিদের সঙ্গে তার দীর্ঘ বৈঠক থেকে৷ ঢাকা যাতে ছিটমহল হস্তান্তর এবং তিস্তা জলবণ্টন চুক্তির বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দিল্লির আন্তরিকতা নিয়ে কোনো রকম সন্দেহ পোষণ না করে, তার জন্য মোদি ছিলেন তৎপর ছিলেন৷ তাই তার সরকারের প্রচেষ্টার এ দুটি ইস্যুর অগ্রগতি সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি মোদির ব্যাখ্যা: দুটি ইস্যু একসঙ্গে বাস্তবায়নে যেহেতু রাজনৈতিক ঐকমত্য হতে সময় লাগবে, তাই কালক্ষেপ না করে আগে ছিটমহল বিনিময়ের কাজটা সম্পূর্ণ করা হোক৷ আর সেটা করার জন্য যা করা জরুরি, তা করা হয়েছে ইতিমধ্যেই৷ যেমন রাজনৈতিক ঐকমত্য, সংসদের স্থায়ী কমিটির সবুজ সংকেত, মন্ত্রিসভার অনুমোদন এবং শেষ ধাপে জমি হস্তান্তর সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিলটি পাস করানোর জন্য সংসদে পেশ করা হয়েছে৷ প্রথমে আশা করা হয়েছিল, সংসদের চলতি অধিবেশনেই তা পাস হয়ে যাবে৷ সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় সহজেই তা পাশ হয়ে যায়৷ কিন্তু গোল বাঁধে উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায়৷ সেখানেও বিল পাস করাতে বেগ পাওয়ার কথা নয়, কারণ মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস ছিটমহল বিনিময়ে আপত্তি না করার কথা আগেই জানিয়েছিল৷ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সম্মানে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দেয়া নৈশ ভোজের অনুষ্ঠানে উপস্থিত মমতা বন্দোপাধ্যায় আবারো তা জানিয়েছেন৷ অথচ তা সত্ত্বেও হয়নি৷ সংসদের অধিবেশন হৈ হট্টগোলের কারণে প্রায় প্রতিদিনই ব্যাহত হয়েছে৷ তবে সংসদের চলতি অধিবেশনে না হলেও, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাজেট অধিবেশনে অবশ্যই তা হবে বলে জানা গেছে৷ উল্লেখ্য, চলতি অধিবেশন শেষ হচ্ছে ২৩ ডিসেম্বর৷ প্রধানমন্ত্রী মোদিকে রাষ্ট্রপতি হামিদের ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ প্রসঙ্গে মোদি বলেন, ছিটমহল বিনিময়ের কাজ সম্পূর্ণ করার খবর নিয়েই তিনি ঢাকায় যাবেন৷ এছাড়া, দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে খুবই ইতিবাচক কথাবার্তা হয় দু'জনের৷ আগামী বছর ভারত নাকি আরো বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে বাংলাদেশকে৷ নেপাল ও ভুটানের বিদ্যুৎ পেতে ঢাকাকে সাহায্য করতেও প্রস্তুত দিল্লি৷ মোটকথা, ঢাকা-দিল্লি উষ্ণ সম্পর্ক উষ্ণতর হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস৷ না হবারও আপাত কোনো কারণও নেই। তিস্তার জল নিয়ে জটিলতা কাটাতে মমতাকে ধীরে ধীরে রাজি করানো সম্ভব হবে, যদি কেন্দ্র অন্যভাবে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়৷ তবে একটা শঙ্কা আমার রয়ে গেছে৷ আর সেটা হলো, ছিটমহলের জমি হস্তান্তের কৃতিত্ব নিয়ে যেন কংগ্রেস-বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক কাড়াকাড়ি শুরু না হয়৷ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় অল ইন্ডিয়া রেডিও (আকাশবাণী) এবং দূরদর্শন-এর (টিভি) নিজস্ব সংগ্রহ থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে দুটি সিডি উপহার দেন রাষ্ট্রপতি হামিদকে৷ এতে আছে ১৯৭১-৭২-এ ইন্দিরা গান্ধী এবং শেখ মুজিবুর রহমানে ভাষণ, ভারতীয় সংসদে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্ক, আলোচনা, বিবৃতি এবং সাক্ষাৎকার৷ সূত্র: ডিডব্লিউ নতুন বার্তা/জবা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment