নমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটাই বর্তমানের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার ভিত্তি। একের পর এক হচ্ছে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, পুলিশি হেফাজতে বা নিরাপত্তা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে থাকা ব্যক্তিদের এনকাউন্টারে মৃত্যুর একটি ধারা লক্ষ্য করছে তারা। নিরাপত্তা বাহিনীগুলো এসব ব্যক্তিকে সন্ত্রাসী বা অপরাধী বলে দাবি করছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এসব মৃত্যু এক ধরনের অবৈধ হত্যাকাণ্ডের শামিল। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীর এক সদস্য বলেছেন, ধরপাকড় ও ক্রসফায়ারের ভয়ে তাদের অনেক কর্মীই ক্রমে চলে যাচ্ছে আন্ডারগ্রাউন্ডে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জানুয়ারি মাসে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের জোট শরিক জামায়াতে ইসলামী আগাম নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে নামে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। পুলিশ হাজারো কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে আর বিরোধী দলগুলোকে সভ-সমাবেশ আয়োজনে নিষিদ্ধ করেছে। বিরোধীরা ওই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে। ফলে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ। পুলিশ যেসব কৌশল অবলম্বন করে সহিংস প্রতিবাদের জবাব দিচ্ছে, সমালোচকদের অভিযোগ তার মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক মতপ্রকাশ রুদ্ধ করা এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। মানবাধিকার কর্মীদের আশঙ্কা জঙ্গি দলগুলো এখন বিরোধীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের মধ্য থেকে নতুন সদস্য সংগ্রহ করতে পারে। উদার ইসলামের ভূমি হিসেবে দীর্ঘদিন পরিচিত এ দেশটিতে এখন এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে গেলে, জঙ্গিবাদের উত্থান হতে পারে। ভিন্ন মতপ্রকাশের রাজনৈতিক সুযোগ এখন খুবই সামান্য।’ রাজনৈতিক মতপ্রকাশের সুযোগ সীমিত করা বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ সরকার অস্বীকার করছে। সরকারের সিনিয়র এক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, কর্তৃপক্ষ ‘শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক’ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ দেবে। কিন্তু ‘নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে। এদিকে, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক শহিদুল হক বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীগুলো শুধু আত্মরক্ষার্থে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সরকার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতার জন্য প্রচারণা চালায় এমন একটি সংগঠন হলো সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়ার সকল পথ যদি রূদ্ধ হয়ে যায় তাহলে নির্বাচনী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ইসলামপন্থি দলগুলো রাজনৈতিক প্রক্রিয়া পরিত্যাগ করে তালেবানে পরিণত হতে পারে। বাইরের জঙ্গি দলগুলোও এ ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ের সুযোগ নিতে পারে।’ সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোকে পুলিশ একাধিক অস্ত্রের মজুদ উদ্ধারের ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলছে এগুলো নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদিনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ২০০২ সালে আদালত, প্রেক্ষাগৃহ ও বিপণিবিতানে সিরিজ বোমা হামলার অভিযোগ রয়েছে এ সংগঠনের বিরুদ্ধে। পুলিশের আশঙ্কা এ দলটি নতুন করে ফিরে আসার প্রক্রিয়ায় থাকতে পারে। বিশেষ করে গত বছরের শেষের দিকে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বিস্ফোরণের পর পর এ আশঙ্কা বেড়েছে। ওই ঘটনায় ভারত একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। আর দেশটির পুলিশ বলছে ধৃত ব্যক্তিরা জেএমবির সদস্য। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার আংশিক ভিত্তি গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরম বিতর্কিত নির্বাচন। হাসিনা সংবিধান থেকে নির্বাচন তদারকিতে অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করেন। এরপর বিরোধীরা নির্বাচন বর্জন করে। তারা হাসিনার কর্তৃত্বপরায়ণ প্রবণতার অভিযোগ তোলে। বিরোধী দলগুলো তার পদত্যাগ এবং নতুন নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। এদিকে হাসিনা তার অবস্থান থেকে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যা দিয়েছেন। আর তার দলের কর্মকর্তারা বিএনপিকে জঙ্গি সংগঠন আইএসের সঙ্গে তুলনা করেছে। দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপন্থি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচিত বিএনপি। তাদের দাবি জোরালো করতে দেশব্যাপী সড়ক, রেল এবং নৌপথে অবরোধ পালন করার চেষ্টা করার কারণেই হাসিনার সহযোগীরা এমন মন্তব্য করেছেন। সরকারের অভিযোগ বিএনপি ও তার জোট শরিকরা যানবাহনে সিরিজ বোমা হামলার জন্য দায়ী। এসব হামলায় ৬০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। বিরোধী দলগুলো এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, তারা শুধু শান্তিপূর্ণভাবেই আচরণ করছে। এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে এ মাসে যোগ হয়েছে বিরোধী দল বিএনপির মুখপাত্র এবং যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের গুমের ঘটনা। তাকে সশস্ত্র ব্যক্তিরা বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। তার পরিবার বলছে, তারা ছিল পুলিশের গোয়েন্দা। স্ত্রী হাসিনা আহমেদ তার স্বামীকে হাজির করতে পুলিশের প্রতি দাবি জানিয়ে হাইকোর্টে আবেদন দাখিল করেন। আদালতে দাখিলকৃত লিখিত বিবৃতিতে পুলিশ সালাহউদ্দিনকে আটকের কথা অস্বীকার করেছে। হাসিনা আহমেদ শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা ভীষণ আতঙ্কিত যে, তাকে অজ্ঞাত স্থানে রাখা হয়েছে এবং তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হতে পারে।’ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা সরাসরি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু তিনি বলেন, বর্তমান অস্থিরতার কারণে জনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ বাহিনীর ওপর অসামাঞ্জস্য মাত্রায় চাপ বেড়েছে। পুলিশের ওপর যখন মাত্রাতিরিক্ত চাপ পড়ছে, জনস্বাধীনতা আর যথাযথ প্রক্রিয়া কখনও কখনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিএনপি সদস্য এবং শ্রমিক কর্মী ৩০ বছরের ওয়াদুদ ব্যাপারী ঢাকায় পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারা যান। তার পিতা আবদুল আলি ব্যাপারী (৬০) গভীর রাতে ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পান ফোনে। অজ্ঞাত ব্যক্তি ফোন করে তাকে বলে, ‘মর্গে এসে আপনার ছেলেকে নিয়ে যান’। এরপর ফোন লাইন কেটে দেয়া হয়। পুলিশ বলছে, ওয়াদুদকে গত মাসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়। হেফাজতে থাকাকালীন পুলিশ এবং বিরোধী কর্মীদের মধ্যে গোলাগুলির মধ্যে পড়ে ক্রসফায়ারে মারা যায় সে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, তার বুকে পিঠে কমপক্ষে ৬ বার গুলি করা হয়। সন্তানের মৃত্যুর পুলিশি বর্ণনা বিশ্বাস করতে নারাজ ওয়াদুদের পিতা। তিনি বলেন, সে কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল না। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট অব্যাহত রয়েছে আর ওয়াদুদ ব্যাপারীর মতো তথাকথিত ‘ক্রসফায়ার’ মৃত্যুগুলো ক্রমাগত নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বাংলাদেশী মানবাধিকার এবং আইনি সহায়তাবিষয়ক সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তদন্তবিষয়ক পরিচালক নুর খান বলেন- ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার বা অন্য যে নামেই ডাকা হোক না কেন এগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। সংগঠনটি এমন ৩৭ জনের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে; যেখানে বলা হয়েছে তারা ফেব্রুয়ারিতে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর হাতে নিহত হয়েছে। এগুলোর অনেক ক্ষেত্রেই মৃত্যু ঘটেছে আটক অবস্থায়। এছাড়াও সংগঠনটি জানিয়েছে, জানুয়ারি মাসে এমন ১৫টি এবং ডিসেম্বরে ৭টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। বাংলাদেশের পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর তদারকি করে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। তাদের কাছে মন্তব্যের অনুরোধ জানালে কোন জবাব মেলেনি। গত বছর মার্কিনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একটি প্রতিবেদনে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। এর জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বাংলাদেশে কোন অপহরণ বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয় না। ৩২ বছরের জামায়াতে ইসলামীর কর্মী আবুল বাশার বলেন, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বাড়িতে রাত কাটাতে ভয় পান তিনি। তার আশঙ্কা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করলে মেরে ফেলবে। বাশার জানালেন, পেট্রলবোমা হামলায় অংশগ্রহণের সন্দেহে পুলিশ তাকে খুঁজছে। এমন কোন হামলায় সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, তার জেলায় যখন ঘটনাটি ঘটে সে সময় তিনি ছিলেন ঢাকায়। তিনি আরও বলেন, আমাদের জন্য কোন আইন নেই, নিরাপত্তা নেই। বিরোধীদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করলেও তিনি আশঙ্কা করেন অনেক কর্মী ক্রমেই আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাচ্ছে। আর তারা অপেক্ষাকৃত চরমপন্থি কৌশল অবলম্বন করতে পারে। মানুষ হারাচ্ছে বন্ধু, ভাই। আর বিতাড়িত হচ্ছে ঘর থেকে। তারা মরিয়া হয়ে উঠছে, বললেন বাশার। জেএ
Wednesday, March 25, 2015
'বাংলাদেশে জঙ্গিদের ভিত গড়ার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে':Time News
'বাংলাদেশে জঙ্গিদের ভিত গড়ার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে' টাইম ডেস্ক টাইম নিউজ বিডি, ২৫ মার্চ, ২০১৫ ১০:৩৪:৪৭ বাংলাদেশে ব্যাপক দমন অভিযান দেশটিতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ক্রোধ আর ভীতি সঞ্চার করেছে। এতে চরমপন্থি জঙ্গিদের জন্য ভিত গড়ার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, গত বছর চরম বিতর্কিত নির্বাচন করেন প্রধা
নমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটাই বর্তমানের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার ভিত্তি। একের পর এক হচ্ছে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, পুলিশি হেফাজতে বা নিরাপত্তা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে থাকা ব্যক্তিদের এনকাউন্টারে মৃত্যুর একটি ধারা লক্ষ্য করছে তারা। নিরাপত্তা বাহিনীগুলো এসব ব্যক্তিকে সন্ত্রাসী বা অপরাধী বলে দাবি করছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এসব মৃত্যু এক ধরনের অবৈধ হত্যাকাণ্ডের শামিল। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীর এক সদস্য বলেছেন, ধরপাকড় ও ক্রসফায়ারের ভয়ে তাদের অনেক কর্মীই ক্রমে চলে যাচ্ছে আন্ডারগ্রাউন্ডে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জানুয়ারি মাসে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের জোট শরিক জামায়াতে ইসলামী আগাম নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে নামে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। পুলিশ হাজারো কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে আর বিরোধী দলগুলোকে সভ-সমাবেশ আয়োজনে নিষিদ্ধ করেছে। বিরোধীরা ওই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে। ফলে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ। পুলিশ যেসব কৌশল অবলম্বন করে সহিংস প্রতিবাদের জবাব দিচ্ছে, সমালোচকদের অভিযোগ তার মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক মতপ্রকাশ রুদ্ধ করা এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। মানবাধিকার কর্মীদের আশঙ্কা জঙ্গি দলগুলো এখন বিরোধীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের মধ্য থেকে নতুন সদস্য সংগ্রহ করতে পারে। উদার ইসলামের ভূমি হিসেবে দীর্ঘদিন পরিচিত এ দেশটিতে এখন এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে গেলে, জঙ্গিবাদের উত্থান হতে পারে। ভিন্ন মতপ্রকাশের রাজনৈতিক সুযোগ এখন খুবই সামান্য।’ রাজনৈতিক মতপ্রকাশের সুযোগ সীমিত করা বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ সরকার অস্বীকার করছে। সরকারের সিনিয়র এক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, কর্তৃপক্ষ ‘শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক’ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ দেবে। কিন্তু ‘নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে। এদিকে, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক শহিদুল হক বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীগুলো শুধু আত্মরক্ষার্থে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সরকার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতার জন্য প্রচারণা চালায় এমন একটি সংগঠন হলো সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়ার সকল পথ যদি রূদ্ধ হয়ে যায় তাহলে নির্বাচনী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ইসলামপন্থি দলগুলো রাজনৈতিক প্রক্রিয়া পরিত্যাগ করে তালেবানে পরিণত হতে পারে। বাইরের জঙ্গি দলগুলোও এ ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ের সুযোগ নিতে পারে।’ সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোকে পুলিশ একাধিক অস্ত্রের মজুদ উদ্ধারের ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলছে এগুলো নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদিনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ২০০২ সালে আদালত, প্রেক্ষাগৃহ ও বিপণিবিতানে সিরিজ বোমা হামলার অভিযোগ রয়েছে এ সংগঠনের বিরুদ্ধে। পুলিশের আশঙ্কা এ দলটি নতুন করে ফিরে আসার প্রক্রিয়ায় থাকতে পারে। বিশেষ করে গত বছরের শেষের দিকে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বিস্ফোরণের পর পর এ আশঙ্কা বেড়েছে। ওই ঘটনায় ভারত একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। আর দেশটির পুলিশ বলছে ধৃত ব্যক্তিরা জেএমবির সদস্য। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার আংশিক ভিত্তি গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরম বিতর্কিত নির্বাচন। হাসিনা সংবিধান থেকে নির্বাচন তদারকিতে অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করেন। এরপর বিরোধীরা নির্বাচন বর্জন করে। তারা হাসিনার কর্তৃত্বপরায়ণ প্রবণতার অভিযোগ তোলে। বিরোধী দলগুলো তার পদত্যাগ এবং নতুন নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। এদিকে হাসিনা তার অবস্থান থেকে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যা দিয়েছেন। আর তার দলের কর্মকর্তারা বিএনপিকে জঙ্গি সংগঠন আইএসের সঙ্গে তুলনা করেছে। দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপন্থি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচিত বিএনপি। তাদের দাবি জোরালো করতে দেশব্যাপী সড়ক, রেল এবং নৌপথে অবরোধ পালন করার চেষ্টা করার কারণেই হাসিনার সহযোগীরা এমন মন্তব্য করেছেন। সরকারের অভিযোগ বিএনপি ও তার জোট শরিকরা যানবাহনে সিরিজ বোমা হামলার জন্য দায়ী। এসব হামলায় ৬০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। বিরোধী দলগুলো এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, তারা শুধু শান্তিপূর্ণভাবেই আচরণ করছে। এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে এ মাসে যোগ হয়েছে বিরোধী দল বিএনপির মুখপাত্র এবং যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের গুমের ঘটনা। তাকে সশস্ত্র ব্যক্তিরা বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। তার পরিবার বলছে, তারা ছিল পুলিশের গোয়েন্দা। স্ত্রী হাসিনা আহমেদ তার স্বামীকে হাজির করতে পুলিশের প্রতি দাবি জানিয়ে হাইকোর্টে আবেদন দাখিল করেন। আদালতে দাখিলকৃত লিখিত বিবৃতিতে পুলিশ সালাহউদ্দিনকে আটকের কথা অস্বীকার করেছে। হাসিনা আহমেদ শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা ভীষণ আতঙ্কিত যে, তাকে অজ্ঞাত স্থানে রাখা হয়েছে এবং তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হতে পারে।’ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা সরাসরি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু তিনি বলেন, বর্তমান অস্থিরতার কারণে জনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ বাহিনীর ওপর অসামাঞ্জস্য মাত্রায় চাপ বেড়েছে। পুলিশের ওপর যখন মাত্রাতিরিক্ত চাপ পড়ছে, জনস্বাধীনতা আর যথাযথ প্রক্রিয়া কখনও কখনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিএনপি সদস্য এবং শ্রমিক কর্মী ৩০ বছরের ওয়াদুদ ব্যাপারী ঢাকায় পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারা যান। তার পিতা আবদুল আলি ব্যাপারী (৬০) গভীর রাতে ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পান ফোনে। অজ্ঞাত ব্যক্তি ফোন করে তাকে বলে, ‘মর্গে এসে আপনার ছেলেকে নিয়ে যান’। এরপর ফোন লাইন কেটে দেয়া হয়। পুলিশ বলছে, ওয়াদুদকে গত মাসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়। হেফাজতে থাকাকালীন পুলিশ এবং বিরোধী কর্মীদের মধ্যে গোলাগুলির মধ্যে পড়ে ক্রসফায়ারে মারা যায় সে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, তার বুকে পিঠে কমপক্ষে ৬ বার গুলি করা হয়। সন্তানের মৃত্যুর পুলিশি বর্ণনা বিশ্বাস করতে নারাজ ওয়াদুদের পিতা। তিনি বলেন, সে কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল না। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট অব্যাহত রয়েছে আর ওয়াদুদ ব্যাপারীর মতো তথাকথিত ‘ক্রসফায়ার’ মৃত্যুগুলো ক্রমাগত নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বাংলাদেশী মানবাধিকার এবং আইনি সহায়তাবিষয়ক সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তদন্তবিষয়ক পরিচালক নুর খান বলেন- ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার বা অন্য যে নামেই ডাকা হোক না কেন এগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। সংগঠনটি এমন ৩৭ জনের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে; যেখানে বলা হয়েছে তারা ফেব্রুয়ারিতে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর হাতে নিহত হয়েছে। এগুলোর অনেক ক্ষেত্রেই মৃত্যু ঘটেছে আটক অবস্থায়। এছাড়াও সংগঠনটি জানিয়েছে, জানুয়ারি মাসে এমন ১৫টি এবং ডিসেম্বরে ৭টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। বাংলাদেশের পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর তদারকি করে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। তাদের কাছে মন্তব্যের অনুরোধ জানালে কোন জবাব মেলেনি। গত বছর মার্কিনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একটি প্রতিবেদনে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। এর জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বাংলাদেশে কোন অপহরণ বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয় না। ৩২ বছরের জামায়াতে ইসলামীর কর্মী আবুল বাশার বলেন, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বাড়িতে রাত কাটাতে ভয় পান তিনি। তার আশঙ্কা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করলে মেরে ফেলবে। বাশার জানালেন, পেট্রলবোমা হামলায় অংশগ্রহণের সন্দেহে পুলিশ তাকে খুঁজছে। এমন কোন হামলায় সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, তার জেলায় যখন ঘটনাটি ঘটে সে সময় তিনি ছিলেন ঢাকায়। তিনি আরও বলেন, আমাদের জন্য কোন আইন নেই, নিরাপত্তা নেই। বিরোধীদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করলেও তিনি আশঙ্কা করেন অনেক কর্মী ক্রমেই আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাচ্ছে। আর তারা অপেক্ষাকৃত চরমপন্থি কৌশল অবলম্বন করতে পারে। মানুষ হারাচ্ছে বন্ধু, ভাই। আর বিতাড়িত হচ্ছে ঘর থেকে। তারা মরিয়া হয়ে উঠছে, বললেন বাশার। জেএ
নমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটাই বর্তমানের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার ভিত্তি। একের পর এক হচ্ছে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, পুলিশি হেফাজতে বা নিরাপত্তা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে থাকা ব্যক্তিদের এনকাউন্টারে মৃত্যুর একটি ধারা লক্ষ্য করছে তারা। নিরাপত্তা বাহিনীগুলো এসব ব্যক্তিকে সন্ত্রাসী বা অপরাধী বলে দাবি করছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এসব মৃত্যু এক ধরনের অবৈধ হত্যাকাণ্ডের শামিল। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীর এক সদস্য বলেছেন, ধরপাকড় ও ক্রসফায়ারের ভয়ে তাদের অনেক কর্মীই ক্রমে চলে যাচ্ছে আন্ডারগ্রাউন্ডে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জানুয়ারি মাসে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের জোট শরিক জামায়াতে ইসলামী আগাম নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে নামে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। পুলিশ হাজারো কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে আর বিরোধী দলগুলোকে সভ-সমাবেশ আয়োজনে নিষিদ্ধ করেছে। বিরোধীরা ওই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে। ফলে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ। পুলিশ যেসব কৌশল অবলম্বন করে সহিংস প্রতিবাদের জবাব দিচ্ছে, সমালোচকদের অভিযোগ তার মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক মতপ্রকাশ রুদ্ধ করা এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। মানবাধিকার কর্মীদের আশঙ্কা জঙ্গি দলগুলো এখন বিরোধীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের মধ্য থেকে নতুন সদস্য সংগ্রহ করতে পারে। উদার ইসলামের ভূমি হিসেবে দীর্ঘদিন পরিচিত এ দেশটিতে এখন এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে গেলে, জঙ্গিবাদের উত্থান হতে পারে। ভিন্ন মতপ্রকাশের রাজনৈতিক সুযোগ এখন খুবই সামান্য।’ রাজনৈতিক মতপ্রকাশের সুযোগ সীমিত করা বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ সরকার অস্বীকার করছে। সরকারের সিনিয়র এক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, কর্তৃপক্ষ ‘শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক’ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ দেবে। কিন্তু ‘নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে। এদিকে, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক শহিদুল হক বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীগুলো শুধু আত্মরক্ষার্থে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সরকার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতার জন্য প্রচারণা চালায় এমন একটি সংগঠন হলো সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়ার সকল পথ যদি রূদ্ধ হয়ে যায় তাহলে নির্বাচনী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ইসলামপন্থি দলগুলো রাজনৈতিক প্রক্রিয়া পরিত্যাগ করে তালেবানে পরিণত হতে পারে। বাইরের জঙ্গি দলগুলোও এ ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ের সুযোগ নিতে পারে।’ সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোকে পুলিশ একাধিক অস্ত্রের মজুদ উদ্ধারের ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলছে এগুলো নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদিনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ২০০২ সালে আদালত, প্রেক্ষাগৃহ ও বিপণিবিতানে সিরিজ বোমা হামলার অভিযোগ রয়েছে এ সংগঠনের বিরুদ্ধে। পুলিশের আশঙ্কা এ দলটি নতুন করে ফিরে আসার প্রক্রিয়ায় থাকতে পারে। বিশেষ করে গত বছরের শেষের দিকে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বিস্ফোরণের পর পর এ আশঙ্কা বেড়েছে। ওই ঘটনায় ভারত একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। আর দেশটির পুলিশ বলছে ধৃত ব্যক্তিরা জেএমবির সদস্য। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার আংশিক ভিত্তি গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরম বিতর্কিত নির্বাচন। হাসিনা সংবিধান থেকে নির্বাচন তদারকিতে অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করেন। এরপর বিরোধীরা নির্বাচন বর্জন করে। তারা হাসিনার কর্তৃত্বপরায়ণ প্রবণতার অভিযোগ তোলে। বিরোধী দলগুলো তার পদত্যাগ এবং নতুন নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। এদিকে হাসিনা তার অবস্থান থেকে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যা দিয়েছেন। আর তার দলের কর্মকর্তারা বিএনপিকে জঙ্গি সংগঠন আইএসের সঙ্গে তুলনা করেছে। দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপন্থি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচিত বিএনপি। তাদের দাবি জোরালো করতে দেশব্যাপী সড়ক, রেল এবং নৌপথে অবরোধ পালন করার চেষ্টা করার কারণেই হাসিনার সহযোগীরা এমন মন্তব্য করেছেন। সরকারের অভিযোগ বিএনপি ও তার জোট শরিকরা যানবাহনে সিরিজ বোমা হামলার জন্য দায়ী। এসব হামলায় ৬০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। বিরোধী দলগুলো এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, তারা শুধু শান্তিপূর্ণভাবেই আচরণ করছে। এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে এ মাসে যোগ হয়েছে বিরোধী দল বিএনপির মুখপাত্র এবং যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের গুমের ঘটনা। তাকে সশস্ত্র ব্যক্তিরা বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। তার পরিবার বলছে, তারা ছিল পুলিশের গোয়েন্দা। স্ত্রী হাসিনা আহমেদ তার স্বামীকে হাজির করতে পুলিশের প্রতি দাবি জানিয়ে হাইকোর্টে আবেদন দাখিল করেন। আদালতে দাখিলকৃত লিখিত বিবৃতিতে পুলিশ সালাহউদ্দিনকে আটকের কথা অস্বীকার করেছে। হাসিনা আহমেদ শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা ভীষণ আতঙ্কিত যে, তাকে অজ্ঞাত স্থানে রাখা হয়েছে এবং তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হতে পারে।’ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা সরাসরি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু তিনি বলেন, বর্তমান অস্থিরতার কারণে জনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ বাহিনীর ওপর অসামাঞ্জস্য মাত্রায় চাপ বেড়েছে। পুলিশের ওপর যখন মাত্রাতিরিক্ত চাপ পড়ছে, জনস্বাধীনতা আর যথাযথ প্রক্রিয়া কখনও কখনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিএনপি সদস্য এবং শ্রমিক কর্মী ৩০ বছরের ওয়াদুদ ব্যাপারী ঢাকায় পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মারা যান। তার পিতা আবদুল আলি ব্যাপারী (৬০) গভীর রাতে ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পান ফোনে। অজ্ঞাত ব্যক্তি ফোন করে তাকে বলে, ‘মর্গে এসে আপনার ছেলেকে নিয়ে যান’। এরপর ফোন লাইন কেটে দেয়া হয়। পুলিশ বলছে, ওয়াদুদকে গত মাসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়। হেফাজতে থাকাকালীন পুলিশ এবং বিরোধী কর্মীদের মধ্যে গোলাগুলির মধ্যে পড়ে ক্রসফায়ারে মারা যায় সে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, তার বুকে পিঠে কমপক্ষে ৬ বার গুলি করা হয়। সন্তানের মৃত্যুর পুলিশি বর্ণনা বিশ্বাস করতে নারাজ ওয়াদুদের পিতা। তিনি বলেন, সে কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল না। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট অব্যাহত রয়েছে আর ওয়াদুদ ব্যাপারীর মতো তথাকথিত ‘ক্রসফায়ার’ মৃত্যুগুলো ক্রমাগত নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বাংলাদেশী মানবাধিকার এবং আইনি সহায়তাবিষয়ক সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তদন্তবিষয়ক পরিচালক নুর খান বলেন- ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার বা অন্য যে নামেই ডাকা হোক না কেন এগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। সংগঠনটি এমন ৩৭ জনের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে; যেখানে বলা হয়েছে তারা ফেব্রুয়ারিতে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর হাতে নিহত হয়েছে। এগুলোর অনেক ক্ষেত্রেই মৃত্যু ঘটেছে আটক অবস্থায়। এছাড়াও সংগঠনটি জানিয়েছে, জানুয়ারি মাসে এমন ১৫টি এবং ডিসেম্বরে ৭টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। বাংলাদেশের পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর তদারকি করে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। তাদের কাছে মন্তব্যের অনুরোধ জানালে কোন জবাব মেলেনি। গত বছর মার্কিনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একটি প্রতিবেদনে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। এর জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বাংলাদেশে কোন অপহরণ বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয় না। ৩২ বছরের জামায়াতে ইসলামীর কর্মী আবুল বাশার বলেন, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বাড়িতে রাত কাটাতে ভয় পান তিনি। তার আশঙ্কা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করলে মেরে ফেলবে। বাশার জানালেন, পেট্রলবোমা হামলায় অংশগ্রহণের সন্দেহে পুলিশ তাকে খুঁজছে। এমন কোন হামলায় সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, তার জেলায় যখন ঘটনাটি ঘটে সে সময় তিনি ছিলেন ঢাকায়। তিনি আরও বলেন, আমাদের জন্য কোন আইন নেই, নিরাপত্তা নেই। বিরোধীদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করলেও তিনি আশঙ্কা করেন অনেক কর্মী ক্রমেই আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাচ্ছে। আর তারা অপেক্ষাকৃত চরমপন্থি কৌশল অবলম্বন করতে পারে। মানুষ হারাচ্ছে বন্ধু, ভাই। আর বিতাড়িত হচ্ছে ঘর থেকে। তারা মরিয়া হয়ে উঠছে, বললেন বাশার। জেএ
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment