Thursday, February 12, 2015

নোয়াখালীতে বেপরোয়া চাঁদাবাজি, ভুক্তভোগীরা আতংকে:Time News

নোয়াখালীতে বেপরোয়া চাঁদাবাজি, ভুক্তভোগীরা আতংকে নোয়াখালী করেসপন্ডেন্ট টাইম নিউজ বিডি, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ১৮:০৩:৫৪ নোয়াখালীতে বিভিন্ন উপজেলার সর্বত্র ক্ষমতাসীন দলের নামধারী কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে বেপরোয়া চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। গোয়েন্দা সুত্রে জানায়, গত বছর জানুয়ারী থেকে ১ বছরে জেলা শহর, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামে প্রবাসীদের কাছে, পাকা বাসা ও বসত ভবন, দোকান নির্মান, পুকুরে মাটি ভরাট,
জমি বিক্রি, পরিবহন, বিয়ে অনুষ্ঠান ও মেঘনা নদীতে মাছ ধরা ট্রলারে ক্ষমতাসীন দলের নাম পরিচয় ধারী কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে বসত ঘরে হামলা, ভাংচুর, নতুন বসত ভবন, দোকান নির্মান, পুকুরে মাটি ভরাট ও জমি বিক্রিতে বাধা, মাছ ধরা ট্রলার ছিনতাই, জেলে অপহরন ও অগ্নিসংযোগ করে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার সহ প্রায় ১০ কোটি টাকার মালামাল লুট ও ক্ষতি করেছে। আহত করেছে শতাধিক নারী পুরুষকে। ফলে ভুক্তভোগীরা অধিকাংশ ঘটনায় থানায় ও কোর্টে মামলা করলে আসামী ও চাঁদাবাজেরা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেও রহস্যজনক কারণে রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। উল্টো ভুক্তভোগীদের মামলা প্রত্যাহার করতে আসামীরা বিভিন্ন সময় মোবাইলে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। এতে অধিকাংশ বাদীরা এলাকা ছেড়ে প্রানের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। সর্বশেষ বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়নের আলাদী নগর গ্রামের মৃত আবুল মিয়ার স্ত্রী আলেয়া বেগমের রাজগঞ্জ বাজারে দীর্ঘ ২০ বছরের খরিদকৃত দোকান ভাড়াটিয়া রাফি গার্মেন্টস। রাজগঞ্জ ইউনিয়নের যুবলীগের ক্যাডার ও আহ্বায়ক পুলক ও তার ভাই অলক সহ তাদের সমর্থকরা আলেয়া বেগমের ভাড়াটিয়া দোকানের মালিকের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না পেয়ে চলতি বছর ২৬ জানুয়ারী রাতে পুলক ও অলকের নেতৃত্বে ১০-১২ জন লাঠিসোটা নিয়ে রাফি গার্মেন্টসে হামলা ও ভাংচুর করে নগদ ২০ হাজার টাকা ও মালামাল সহ ১৫ লাখ টাকা লুট ও ক্ষতি করেছে। এ ব্যাপারে আলেয়া বেগম বাদী হয়ে অলক ও পুলক সহ ৮ জনকে আসামী করে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করা হয়েছে। একই উপজেলার ছয়ানী ইউনিয়নের তৈয়বপুর গ্রামের নুরুল হুদার ছেলে কেজি স্কুলের সহকারী শিক্ষক নাছির উদ্দিন ফারভেজ । একই ইউনয়নের আওয়ামীলিগের সাধারন সম্পাদক মফিজ উল্লার ছেলে চাঁদাবাজ ফিরোজ আলম শিক্ষক নাছির উদ্দিন ফারভেজের  কাছে গত ২৫ নভেম্বর ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে শিক্ষক নাছির উদ্দিন রাজি না হওয়ায় রাতে তাদের বাড়িতে ফিরোজ আলমের নেতৃত্বে ১০-১২ জন হামলা চালিয়ে দেড় লাখ টাকার মোটর সাইকেল, নগদ ২০ হাজার টাকা, ৫ ভরি স্বর্ণ ও মালামাল সহ লুট করেছে। নাসির উদ্দিন ফারভেজ বাদী হয়ে ফিরোজ আলম, ও তার ক্যাডার জাফর, মাহবুবুর রহমান সহ ১১ জনকে আসামী করে বেগমগঞ্জ থানায় মামলা করেছে। ফিরোজ আলম ও তার বাহিনীরা একই ইউনিয়নে চাঁদা না পেয়ে লক্ষনপুর গ্রামের পন্ডিত বাড়ি, হাফিজ ব্যাপারি বাড়ি, গজারি বাড়ি, সাইফ উদ্দিন মেম্বারের বাড়ি ও খুরশীদ আলম মঞ্জিল সহ ২০-২৫ বাড়িতে হামলা ভাংচুর করে প্রায় ৫০ লাখ টাকা লুট ও ক্ষতি করছে। নোয়াখালী পৌরসভার উত্তর সোনাপুর আহাম্মদিয়া হাইস্কুল সংলগ্ন সংখ্যালঘু নিখিল চন্দ্র কর্মকার ও সুনীল চন্দ্র কর্মকারের কাছে পাশের মধ্যম করিমপুর গ্রামের আমীর হোসেনের ছেলে যুবলীগ ক্যাডার শাওন, আবুল হোসেনের ছেলে কাউসার ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না পেয়ে শাওন ও কাউসারের নেতৃত্বে ১০-১৫ জন সন্ত্রাসী গত ২৮ অক্টোবর সকাল ৮ টায় নিখিল চন্দ্র কর্মকার ও সুনীল চন্দ্র কর্মকারের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর করে নগদ ১০ হাজার টাকা, ৫ ভরি স্বর্ণ ও মালামাল সহ ২ লাখ টাকা লুট ও ক্ষতি করে। একই পৌরসভার মাইজদী গ্রামের রহমত উল্লার ছেলে চাঁদাবাজ রাইসুল হায়দার প্রকাশ বাবু, জাফর আহমেদ ভুঁইয়া, মৃত হাসমত উল্লার ছেলে হেলাল উদ্দিন, আব্দুল গফুরের ছেলে হেলাল, সেকান্দরের ছেলে হুমায়ুন, তাজুল ইসলাম ও অপর কাশেমের ছেলে রুবেল এলাকায় প্রবাসী ও স্থানীয়রা নতুন বাসা ভবন, পুকুরে মাটি ভরাট, জমি বিক্রি করতে গেলে তাদেরকে দিতে হয় মোটা অংকের চাঁদা। চাঁদা না পেয়ে ওই সব নতুন ভবন নির্মান, পুকুরে মাটি ভরাট ও জমি বিক্রি করতে বাধা দেয়। এ নিয়ে ওই চাঁদাবাজদের কাছে গত ১ বছর আতংকে রয়েছে ভুক্তভোগীরা। সদর উপজেলা কালাদরাপ ইউনিয়নের পশ্চিম দেবীপুর গ্রামের নুর মোহাম্মদ ও সুমনের কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে একই গ্রামের সফিউল্লার ছেলে যুবলীগ ক্যাডার জাবেদ, আলী আজমের ছেলে কামাল, পাশের বারাইপুর গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে আবু তাহের ও মনির আহমেদের ছেলে বাবর। চাঁদাবাজেরা চাঁদা না পেয়ে গত ১০ আগষ্ট রাতে নুর মোহাম্মদ ও সুমনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে ১৫ জনকে গুরুতর আহত করে নগদ ৫০ হাজার টাকা, ৫ ভরি স্বর্ণ ও মালামাল সহ ১২ লাখ টাকা লুট ও ক্ষতি করেছে। আহতদের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাতিয়া উপজেলার ওঁচখালী ছেরাজুল হক সুপার মার্কেটে নেকা রেজিষ্ট্রার কাজী আব্দুর রহীমের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে একই এলাকার লুতফর রহমানের ছেলে যুবলীগ ক্যাডার এনায়েত রাব্বী। চাঁদা না পেয়ে ওই সন্ত্রাসীরা কাজী কাজী আব্দুর রহীমের অফিসে হামলা, ভাংচুর করে গত ১০ জুলাই তালা ঝুলায়। নোয়াখালী জেলা আওয়ামীলিগের সাধারন সম্পাদক ও এমপি একরামুল করিম চৌধুরী জানান, আমি কখনও চাঁদাবাজ প্রশ্রয় দিই না। পছন্দও করি না। আওয়ামীলিগে চাঁদাবাজের স্থান নেই। যারা চাঁদাবাজি করছে তারা আওয়ামীলিগের কর্মী সমর্থক নয়। পুলিশকে চাঁদাবাজদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, চাঁদাবাজীর সহ অপর মামলার আসামীদের গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে। তবে জেলায় পুলিশের সংকটও রয়েছে। এসএইচ


No comments:

Post a Comment