Sunday, January 18, 2015

শ্রীলঙ্কায় ক্ষমতার পালাবদলে ভারতের হস্তক্ষেপ:RTNN

রয়টার্সের অনুসন্ধান শ্রীলঙ্কায় ক্ষমতার পালাবদলে ভারতের হস্তক্ষেপ আন্তর্জাতিক ডেস্ক আরটিএনএন কলম্বো: শ্রীলঙ্কার সদ্য সমাপ্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসের বিরুদ্ধে কাজ করায় ভারতীয় বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর  কলম্বোর স্টেশন চীফকে বহিষ্কার করা  হয়েছিল বলে রাজনৈতিক ও গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে। র-এর কলম্বো স্টেশন চীফ তখন কূটনীতিকের মর্যাদায় কর্মরত ছিলেন। ৮ জানুয়ারির
ওই নির্বাচনে সামান্য ব্যবধানে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই হেরে যান রাজাপাকসে। তবে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বহিষ্কারের কথা নাকচ করে দিয়ে দাবি করেছেন সেটা ছিল নিয়মিত সিদ্ধান্তের অংশ। রাজাপাকসে বলেছেন, তিনি এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য অবগত নন। নতুন সরকার বলছে, তারা এ ধরনের খবর সম্পর্কে অবগত আছে তবে তা নিশ্চিত করতে পারছে না। নয়া দিল্লি ও কলম্বোর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত ডিসেম্বরে ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য ভারতকে অনুরোধ করে শ্রীলঙ্কা সরকার। তিনি রাজাপাকসের প্রতিপক্ষ মাইথ্রিপালা সিরিসেনার দলে যোগদান করার জন্য এমপি ও মন্ত্রীদের প্ররোচিত করেছিলেন। ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় এক দশক ক্ষমতায় থাকার সময় রাজাপাকসে চীনঘেঁষা নীতি অনুসরণ করে আসছিলেন। অন্যদিকে সিরিসেনা ভারতঘেঁষা নীতি অনসুরণ করবেন বলে বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন। ভারত তার দক্ষিণ উপকূলের দেশ শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রায়ই হস্তক্ষেপ করে থাকে। ১৯৮৭ সালে ‘শান্তি রক্ষার’ জন্য শ্রীলঙ্কায় সৈন্য পাঠিয়েছিল ভারত। গত ২৮ ডিসেম্বর শ্রীলঙ্কার সানডে টাইমস পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল বিরোধী দলের সাথে যোগসাজশের কারণে কলম্বোতে র-এর স্টেশন চীফ চাকুরি খোয়ালেন। নয়া দিল্লিকে অবহিত করা ছাড়াই রাজপাকসে গত বছর শ্রীলঙ্কায় দুটি চীনা সাবমেরিনকে মোতায়েন করার অনুমতি দিলে ভারত ক্ষুব্ধ হয়। এতে ভারতের সাথে শ্রীলঙ্কার চুক্তির লংঘন হয় বলে নয়া দিল্লির দাবি। নতুন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা বলছেন, প্রথম বিদেশ সফরে তিনি ভারত যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার বিদেশনীতির এটাই ‘প্রধান ইস্যু’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। ভারতের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, র-এর ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে সিরিসেনাকে যেন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মেনে নেয়া হয় তার জন্য তিনি সিরিসেনার জোটকে রাজি করিয়েছেন এবং  রাজাপাকসের দলে ভাঙন ধরানোর জন্য বহু বৈঠক করেছেন। ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা রাজপাকসের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহকে রাজি করান, যাতে যিনি রাজপাকসের বিরুদ্ধে লড়বেন তিনি জয়ী হতে পারেন। এক্ষেত্রে ভারতপন্থী কর্মকর্তাদের সহায়তা নেন ওই র-কর্মকর্তা। ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাবেক প্রেসিডেন্ট চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার সাথেও যোগাযোগ রক্ষা করেন, যিনি সিরিসেনাকে নির্বাচনে লড়াই করতে রাজি করান। একজন আইনপ্রণেতা জানান, তারা সক্রিয়ভাবে এবং সম্মিলিতভাবে পুরো বিষয়টার আয়োজন করেছেন। রনিল বিক্রমসিংহে আবার নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন। নির্বাচনের আগে তিনি দুই-তিনবার ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং ভারতীয় হাইকমিশনারের সাথে দেখা করেন। বিক্রমসিংহের মুখপাত্র দাবি করেন, এ সময় তারা ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন’। ভারত বিক্রমসিংহকে কোনো পরামর্শ দিয়েছে কিনা তা জানতে চাইলে ওই মুখপাত্র তা অস্বীকার করেন। তবে এটা স্পষ্ট নয় যে বিক্রমসিংহে ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তার পরিচয় সম্পর্কে অবগত ছিলেন কিনা। কারণ র-এর কর্মকর্তাদের যখন বিদেশে পদায়ন করা হয় তখন তাদের কূটনীতিকের বেশে পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে কুমারাতুঙ্গা কথা বলতে রাজী হননি। রাজাপাকসে তার দলের প্রধান কার্যালয়ে বসে বলেছেন, ‘আমি জানি না। আমি আমার প্রকৃত তথ্য না পাওয়া অবধি কোনো সন্দেহ পোষণ করব না।’ ‘এমন অনেক বিষয় আছে যা নিয়ে কথা বলা যায় না।তবে বিদেশি উপাদানের গভীরভাবে প্রচারণার অনেক সুষ্পষ্ট লক্ষণ ধরা পড়েছে,’ বলেন রাজপাকসের একজন ঘনিষ্ঠজন। শ্রীলঙ্কার সেই সময়কার প্রতিরক্ষা সচিব এবং রাজপাকসের ভাই গোতাবায়া রাজপাকসে বলেছেন, গত নভেম্বরে ভারতের জাতীয় প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা অজিত ডোবাল শ্রীলঙ্কা সফরে গেলে কাছে ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তার তৎপরতা সম্পর্কে অভিযোগ করা হয়েছিল। আঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকি নিয়ে কর্মকর্ত একজন ভারতীয় কর্মকর্তা বলেছেন, শ্রীলঙ্কায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং ব্যাপক বিনিয়োগ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল ভারত। ২০০৫ সাল থেকে রাজাপাকসে সাতবার বেইজিং সফরে যান। তবে চীনের দুটি সাবমেরিন শ্রীলঙ্কায় মোতায়েন করা হলে ভারত বেশি চিন্তিত হয়ে পড়ে। নয়া দিল্লি একে ভারত মহাসাগরে চীনের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হিসেবে বিবেচনা করতে থাকে। শ্রীলঙ্কার বিদেশ নীতি যে বদলে যাচ্ছে তার আলামতও ইতোমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গেছে।  ৯ জানুয়ারি ফল ঘোষণার পরপরই কলম্বোতে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার ওয়াই কে সিনহা  সিরিসেনাকে বিশাল ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দন জানান। অন্যদিকে চীনের রাষ্ট্রদূতকে নতুন প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাতের জন্য ৬ দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস/রয়টার্স অনুবাদ: ফাতিমা ফেরদৌসী আশা মন্তব্য      


No comments:

Post a Comment