Wednesday, April 29, 2015

দৈনিক সংবাদপত্রে সিটি নির্বাচনের খবর:আরটিএনএন

দৈনিক সংবাদপত্রে সিটি নির্বাচনের খবর নিজস্ব প্রতিবেদক আরটিএনএন ঢাকা: মঙ্গলবারের তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নজিরবিহীন জালিয়াতির খবর বুধবার দেশের বেশিরভাগ সংবাদপত্রেই প্রধান শিরোনাম হয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রায় সবগুলো দৈনিক ভোট জালিয়াতির খবরকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে প্রায় প্রতিটি দৈনিকই বহু খবর প্রকাশ করেছে। অথর্ব নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় সরকারি দলের ভোট জালিয়াতির কারণেই
শেষ পর্যন্ত বিএনপি সমর্থিত মেয়রপ্রার্থীদের পাশাপাশি আদর্শিকভাবে আওয়ামী লীগের কাছের দলগুলোর মেয়র প্রার্থীরাও নির্বাচন বর্জন করেছে।  এরফলে কার্যত ফাঁকা মাঠে বিজয় অর্জণ করেছে সরকারি দলের মেয়র প্রার্থীরা। আসুন দেখা যাক কয়েকটি দৈনিক পত্রের প্রধান শিরোনাম এবং খবরের অংশ বিশেষ- জিতল আ.লীগ, হারল গণতন্ত্র দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী দৈনিক প্রথম আলো ‘জিতল আ.লীগ, হারল গণতন্ত্র’ শিরোনামে প্রধান প্রতিবেদনে বলেছে, ‘তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ঘিরে মানুষের মধ্যে যে শঙ্কা ছিল, শেষ পর্যন্ত তা-ই সত্যি হলো। প্রশ্নবিদ্ধ এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত তিন মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হলেও গণতন্ত্রের পরাজয় হয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।’ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘জাতীয় রাজনীতিতে ঝড় তোলা এই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটের খেলায় গণতন্ত্র হেরেছে। সরকার-সমর্থকেরা বিরোধীদের বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রের কাছেই যেতে দেননি। অনেকটা ফাঁকা মাঠে পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগিতায় উন্মুক্ত কারচুপি করেছেন তারা।’ পত্রিকাটি বলছে, ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর গতকালের এই প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে শঙ্কাই সত্য হয়েছে। অবশ্য আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। পরাজয়ের আশঙ্কায় বিএনপি ভোট বর্জন করেছে। ‘সরেজমিন দেখা গেছে, বিএনপি কিংবা তাদের সমর্থিত প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকেরা গতকালের পরিস্থিতি প্রতিরোধ করা তো দূরের কথা, কোনো প্রতিবাদও করেননি। এর কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারদলীয় কর্মী-সমর্থক ও পুলিশের উদ্দেশ্যমূলক কর্মকাণ্ডে তারা ভীতসন্ত্রস্ত ছিলেন। এ কারণে বেশির ভাগ কেন্দ্রেই বিএনপি-সমর্থক প্রার্থীদের এজেন্ট ছিলেন না। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে দলটির তিন মেয়র প্রার্থী মাঝপথে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন,’ যোগ করা হয় প্রতিবেদনে। ডিজিটাল জমানায় এনালগ কারচুপি ট্যাবলয়েড দৈনিক মানবজমিনে ‘ডিজিটাল জমানায় এনালগ কারচুপি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এ এক নয়া মডেলের নির্বাচন। উৎসব তো বটেই। দখলের উৎসব। একেবারেই খোলামেলা। কোনো রাখডাক নেই। সকাল সকাল প্রায় প্রতিটি কেন্দ্র থেকেই হাওয়া বিএনপি সমর্থক এজেন্টরা। কেউ ঢুকতে পেরেছেন, কেউ পারেননি। তবে থাকতে পারেননি কেউই। হুমকি, মারধর, হামলা আর গ্রেপ্তারের শিকার হয়েছেন তারা। কাউকে কাউকে আটকে রাখা হয় আগেই। রক্তাক্ত এজেন্ট যেন একটি নির্বাচনেরই প্রতিচ্ছবি।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আভাস পাওয়া গিয়েছিল আগের রাতেই। খবর আসছিলো, ব্যালট পেপারে সিল মারার। যদিও তার সংখ্যা ছিল কম। তবে গতকাল দিনের শুরুতেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায়। প্রথম বাধার শিকার গণমাধ্যম। বেশির ভাগ কেন্দ্রেই ক্যামেরা নিতে মানা। দিনভর টার্গেট সাংবাদিকরা। কেন্দ্র বিরোধী এজেন্টমুক্ত করার পর বিরোধী ভোটারমুক্তও করা হয়। প্রতিটি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের কর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিল তাদের শতভাগ সহযোগী। কোথাও কোথাও অগ্রণী ভূমিকায়। কেন্দ্রের সামনে বিরোধীরা যেন আসতে না পারেন তা নিশ্চিত করা হয় শতভাগ। এরইমধ্যে চলে গায়েবি ভোট। প্রকাশ্যে ব্যালটে সিলমারা। ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরাই শুধু নয় এমনকি কোথাও কোথাও নির্বাচনী কর্মকর্তাদেরও দেখা গেছে ব্যালটে সিল মারতে। কোথাও কোথাও ভোটাররা ভোট দিতে গেলে বলা হয়, দেরি করে ফেলেছেন।’ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ে কয়েকটি কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। বলাবাহুল্য, এ সংঘর্ষ হয়েছে সরকারি দলের কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যেই। সার্বিক পরিস্থিতিতে দুপুরেই নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রফেসর নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, একশ’ ভাগ ভোট পড়লেও অবাক হবো না। তবে এতো কিছুর পরও সেনা সদস্যরা অবশ্য মোতায়েন ছিলেন সেনানিবাসেই। কোথাও তাদের ডাকার প্রয়োজন মনে করেনি নির্বাচন কমিশন। সারাদিনের ঘটনাপ্রবাহ দেখে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ যেন জোর যার, ভোট তার। কেউ কেউ বলছেন, ডিজিটাল জমানায় এনালগ কারচুপি।’ ভোট জালিয়াতির মহোৎসব, বিএনপির বর্জন নয়া দিগন্তে ভোট ‘জালিয়াতির মহোৎসব, বিএনপির বর্জন’ শিরোনামে প্রকাশিত মূল প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কেন্দ্র দখল আর নজিরবিহীন কারচুপির মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হলো ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন। নির্বাচনকে প্রহসন এবং তামাশা আখ্যায়িত করে দুপুর গড়ানোর আগেই একে বর্জনের ঘোষণা দেয় বিএনপি।’ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘রাজধানীতে সকাল ৮টা বাজার সাথে সাথেই প্রায় সব ভোটকেন্দ্রের দখল নেয় সরকারদলীয় লোকজন। বেশির ভাগ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি বিএনপি প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের। যেসব কেন্দ্রে তাদের পোলিং এজেন্ট প্রবেশের চেষ্টা করেছে তাদের বের করে দেয়া হয়েছে মারধর করে। কাউকে তুলে দেয়া হয় পুলিশের হাতে।’ নয়া দিগন্ত জানায়, পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়ার পর সাধারণ ভোটাররাও যাতে ভোটকেন্দ্রে আসতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ভোটকেন্দ্রের আশপাশের অলিগলি এবং কেন্দ্রের সামনে অবস্থান নেয় সরকারি দল, তাদের অঙ্গসংগঠনের লোকজন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়েছে সাংবাদিক এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের। রাজধানীর বেশির ভাগ কেন্দ্রে সাংবাদিক বিশেষ করে টেলিভিশন সাংবাদিক প্রবেশ করতে চাইলে তারা পুলিশের বাধার মুখোমুখি হন প্রথমে। তাদের জানানো হয় ভোটকেন্দ্রের ৪০০ গজের মধ্যে প্রবেশ করা যাবে না। রাজধানীর অনেক কেন্দ্রে কোনোভাবেই সাংবাদিক প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। বিভিন্ন কেন্দ্রে সাংবাদিকদের মোবাইল, ক্যামেরা, পরিচয়পত্র কেড়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুর করা হয়েছে টিভি ক্যামেরা। ঘটেছে লাঞ্ছনার ঘটনা।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় এভাবে কেন্দ্র দখলের পর শুরু হয় সরকারদলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ব্যালটে সিল মারার উৎসব। সরেজমিন দেখা গেছে, কোনো কোনো ভোটকেন্দ্রে ভোট শুরুর পর সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে ভরে গেছে ব্যালট বাক্স। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও যারা আগ্রহ নিয়ে সকালে ভোট দিতে এসেছিলেন বেশির ভাগই ভোট না দিয়ে চলে যেতে বাধ্য হন। এমনকি কোনো কোনো কাউন্সিলর প্রার্থীও ভোট দিতে পারেননি।’ ‘কেন্দ্র দখল আর জালিয়াতির নজিরবিহীন এ উৎসবের মধ্যে বিভিন্ন কেন্দে অসহায়ের মতো বসে থাকেন প্রিজাইডিং অফিসাররা। কোনো কোনো প্রিজাইডিং অফিসার আফসোস করে সাংবাদিকদের জানান, নিজের জীবন বাঁচানোই এখন তাদের প্রধান দায়িত্ব। তাই বসে বসে এসব দেখা ছাড়া তাদের করার কিছু নেই। আবার কোথাও কোথাও প্রিজাইডিং অফিসারসহ প্রশাসনের অন্যরাও অংশ নিয়েছেন ভোট জালিয়াতিতে,’ জানায় দৈনিকটি। প্রশ্নবিদ্ধ ভোট, বিএনপির বর্জন আওয়ামী লীগ সমর্থক দৈনিক সমকালে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ভোট, বিএনপির বর্জন’ শিরোনামের খবরে বলা হয়, ‘শেষ পর্যন্ত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেই সম্পন্ন হলো তিন সিটি করপোরেশনের 'প্রশ্নবিদ্ধ' নির্বাচন। ভোটকেন্দ্র দখল, কারচুপি, জাল ভোট, পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া, হামলাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে গতকাল মঙ্গলবার ভোট শুরুর সাড়ে তিন ঘণ্টা পর নির্বাচন প্রত্যাখ্যান ও বর্জনের ঘোষণা দিল বিএনপি। প্রতিবাদে ফের হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দিতে পারে দলটি। বিএনপির পাশাপাশি নির্বাচনকে 'ভোট ডাকাতি' ও 'প্রহসনের নির্বাচন' আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন বিভিন্ন দলসমর্থিত মেয়র প্রার্থীরাও।’ মন্তব্য      

No comments:

Post a Comment