
ল চমৎকার। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রতিদ্বন্দী মেয়র প্রার্থীদের একসাথে বসা ও পরস্পরের হাত ধরে ছবি তোলার দৃশ্য ছিল চমৎকার। এর পরে দৈনিক প্রথম আলো ও বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ নানা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে আয়োজিত বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানে বিবদমান রাজনৈতিক দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা যেভাবে একযোগে অংশ নিয়েছেন এবং পরস্পরের প্রতি সৌজন্য দেখিয়েছেন তাও ছিল আশা জাগানোর মতো একটি বিষয়। সবশেষ সুন্দর পরিবেশে নির্বাচনও শুরু হলো। খোদ প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রার্থীদের অনেকেই বলেছেন, ফলাফল যাই হোক তাই মেনে নিবেন। বাংলাদেশের গণতন্ত্রে যেন এক অন্য রকম পরিবর্তনের হাওয়া বইতে লাগলো। মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল ২০১৫) সকাল থেকেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ভোটাররা স্বত:স্ফুর্ত ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যেতে শুরু করেন। কিন্তু মুহূর্তেই সব লন্ডপন্ড হয়ে যায়। ভোট কারচুপি, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, প্রতিপক্ষের এজেন্টদের বের করে দেয়া ও জাল ভোটসহ সেই পুরোনো অগণতান্ত্রিক রাস্তায় আবারও স্বরুপে আবির্ভূত হলাম আমরা। এই দৃশ্য যারা প্রত্যক্ষ করেছেন বা দূরে থেকেও প্রতিমুহূর্তে নির্বাচনের খবর রেখেছেন এমনই কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী ও নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারীর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে এবারের নির্বাচন সম্পর্কে তাদের মতামত হুবহু তুলে ধরা হলো: প্রভাষ আমীন, সিনিয়র সাংবাদিক, এটিএননিউজ প্রথম আলো শিরোনাম করেছে 'জিতলো আওয়ামী লীগ, হারলো গণতন্ত্র'। কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচনে নির্বাসনে গণতন্ত্র। নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। আওয়ামী লীগ আর সিইসির আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং ছাড়া আর কেউ বলেনি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগ নেতারাও অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তবুও আনিসুল হক, সাঈদ খোকন ও আ জ ম নাসির এখন ঢাকা ও চট্টগ্রামবাসীর অভিভাবক। তাদেরকে অভিবাদন। আশা করি নির্বাচনের দিনের অস্বস্তির কাটাটুকু পেছনে ফেলে তারা এই ক্যাকটাসটির মতই ফুল হয়ে ফুটবেন। নির্বাচনের আগে যেমন জনগণের সাথে ছিলেন, পরেও থাকবেন; আগে যেমন সাইকেল চালিয়েছেন, রাস্তা ঝাড়ু দিয়েছেন, পরেও দেবেন। আর যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা ভুলে যাবেন না। আমি উত্তরের বাসিন্দা। আমার মেয়র আনিসুল হক বলেছেন, ঢাকাকে সিঙ্গাপুর বানানো অসম্ভব নয়। সিঙ্গাপুর চাই না, আরেকটু সবুজ, আরেকটু পরিচ্ছন্ন হলেই চলবে। মোশতাক আহমেদ, অবজারভার মানবধিকার সংস্থা "ডেমোক্রেসিওয়াচ" এর পক্ষ থেকে ঢাকা উত্তর City নির্বাচনে observer হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলাম। সেই সুবাদে আমার ভোট কেন্দ্র observe করার সৌভাগ্য হয়েছিল। সত্যি এটা আমার জীবনের জন্য হয়তোবা এক নতুন অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেক নির্বাচন হয়েছে একং অনেক নির্বাচনে কারচুপিও হয়েছে এবং সেই সব নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির অভিযোগে অনেক রাজনৈতিক ও সুশীল সমাজের ব্যাক্তিরা কেন্দ্র দখলকে চর দখলের সাথে তুলনা করেছেন, যা আজ আমি স্বচক্ষে দেখলাম। মুশকায়েত মাশরেক, সাংবাদিক, রেডিও টুডে চট্টগ্রাম এসেছি নির্বাচন কাভার করতে, কিন্তু ভোটের চিত্র দেখে মনে হল না আসলেই ভাল ছিলো। অযথা সময় আর অফিসের টাকা নষ্ঠ। এখানকার ভোটাররা চরম হতাশ হয়েছে। সেই সাথে গণমাধ্যম কর্মীরাও। তবে ছাত্রলীগ যে কাজের সংগঠন তা চট্টগ্রামে তারা প্রমাণ করেছে। আগামীতে রাজনীতিবীদদের ভোটাররা আর বিশ্বাস করবেন না। হাজার কান্নাকাটি করলেও ভোটের খেলাই দর্শক হতে চাইবে না ভোটাররা। গণতন্ত্র আর নির্বাচনের উপর বিশ্বাস উঠে গেছে ভোটারদের। বেশিরভাগই বলছেন, ভোটের নামে এমন মশকরা রাজনীতিকরা না করলেও পারতেন। নিয়াজ মাগদুম, সাংবাদিক, নতুন বার্তা সরকার-নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতিকে উপহার দিয়েছেন। তবে বিরোধী পক্ষের কোনো এজেন্টকে কেন্দ্র থাকতে দেয়া হয় নাই এবং সাংবাদিকদেরও প্রবেশে বাধা দেয়া হয়েছে। যা পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচনেও হয় নাই। আমার এক বন্ধু বলেছেন-তিনি একাই ৩৮টি ভোট দিয়েছেন। পোলিং অফিসাররাও ভোট দিয়েছেন। ওভারল নির্বাচনের পরিবেশ ভালো ছিলো। ইমরান হোসাইন আনসারী, প্রবাসী সাংবাদিক: গণতন্ত্রের বেহাল দশায় গণমাধ্যমের তরুন রিপোর্টাররা চেষ্টা করেছেন সত্যকে তুলে ধরতে। তাদের এই সুপ্ত প্রচেষ্টায় হয়তোবা একদিন বাংলাদেশে আবারো গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসবে। তৈরী হবে ভিন্ন মতের পরিবেশ। আই স্যালুট অল অফ দেম। বিশেষ করে যমুনা ও এস এ টিভি এ ইভেন্টে খুব ভাল করেছে। জানিনা যারা সত্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তাদেরকে আবার রাজাকার বাণিয়ে হেনস্তা করা হয় কি না? তবে নির্বাচনটি যে মানে সম্পন্ন হলো আমার ফেইসবুকে দেয়া আগের দু’টি মতামতকে থোরাই কেয়ার করল। তবে আক্ষেপ লাগছে আনিসুল হকের জন্য । বেচারা এমনভাবে নির্বাচিত হলেন যে নিজের ব্যাক্তি জীবন কতটা ঝামেলাপূর্ণ করে তুললেন, তা তিনি নিজেও জানেন না। কারণ মেয়রের এ চেয়ার তাঁকে দল এবং দলের বাইরে ভবিষ্যতে অনেক জবাব দিতে বাধ্য করবে। দিপন দেওয়ান, সাংবাদিক, বাংলাভিশন সাংবাদিকতার ক্ষুদ্র জীবনে বেশ কিছু নির্বাচন কাভার করেছি। এবারই প্রথম জানতে পারলাম-ভোটকেন্দ্রের ৪০০গজের মধ্যে সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষেধ। বিভিন্ন কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা আইন-শৃংখলাবাহিনী বলেছে, ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনা- তাকে নাকি নির্বাচন কমিশন এমনই নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে নির্বাচন কমিশনার মো: শাহনেওয়াজ বললেন, ডিএমপিকে এমন কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি, অন্যান্য নির্বাচনের মতো সংবাদ সংগ্রহ করতে পারবেন। আর ডিএমপি কমিশনার এসব অস্বীকার করে বলেছেন, সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে আইন-শৃংখলাবাহিনীকে এমন কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তাহলে ভোট কেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশে এমন নির্দেশনা কে দিলো? কার নির্দেশে আইন-শৃংখলাবাহিনী ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশে এমন কড়াকড়ি আরোপ করলো? শহীদুল ইসলাম, সাংবাদিক, দৈনিক সংগ্রাম গণতন্ত্র তুমি কার ? যে ক্ষমতায় তার। আরো একটি প্রহসনের নির্বাচনের সাক্ষী হলাম একজন সংবাদ কর্মী হিসেবে। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরেও এরুপ আরো একটি প্রহসনের নির্বাচন দেখতে হলো। জাতি কি এই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না? সিটি নির্বাচন কভার করার জন্য নির্বাচন কমিশন প্রদত্ত পাস গলায় ঝোলানো অবস্থায় গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে ছবিটি তুলেছেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি বন্ধু শাহেদ চৌধুরী। মাসুম মাহবুব, সাবেক যুগ্ম বার্তা সম্পাদক, একুশে টিভি এটা কেমন সাংবাদিকতা ? দীর্ঘ ১৫ বছর পার করলাম সাংবাদিকতায়। খবরের কাগজ ও টেলিভিশনে কাজ করেও একটি বিষয় জানতে পারলাম না। সাংবাদিকরা একটি ঘটনা নিজ চোখে দেখছে কিন্তু বলছে, অমুকের অভিযোগ। যেমন আজ তিন সিটির নির্বাচনে প্রায় সব কটি কেন্দ্রের ২০ দলীয় জোটের পুলিং এজেন্টকে সাংবাদিকরা খুঁজে পায়নি। পুলিংরা ছাত্রলীগের হাতে মার খেয়ে আহত হয়ে সাংবাদিকদের বলছে, তাদেরকে সরকারীদলের ক্যাডার ও পুলিশ মেরে বের করে দিয়েছে। অনেক কেন্দ্রে সাংবাদিকরা তাদের ছবিতে দেখাচ্ছে পুলিশ ও দলীয় ক্যাডাররা প্রকাশ্য মারধর করছে পুলিংদের। অথচ সাংবাদিকরা বলছে মির্জা আব্বাস বা তাবিথ আউয়াল বা মনজুরুজের অভিযোগ। এটা কেমন সাংবাদিকতা ? কেবি
No comments:
Post a Comment